শারীরিক প্রতিবন্ধকতা ও হাসি-ঠাট্টাকে পেছনে ফেলে বিয়ে করলেন বাগেরহাটের ৩৮ ইঞ্চি উচ্চতার খর্বাকৃত যুবক আব্বাস শেখ (২৫)।
শুক্রবার বিকালে খুলনার ডাকবাংলা এলাকার সেলিম গাজীর মেয়ে (খর্বাকৃত) সোনিয়া খাতুনের (২০) সঙ্গে তিনি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। দুই পরিবারের সম্মতিতে ধর্মীয় নিয়ম-কানুন মেনে এক লাখ টাকা কাবিনে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এ বিয়ে সম্পন্ন হয়।
আব্বাস শেখ রামপাল উপজেলার শ্রিফলতলা গ্রামের আজমল শেখের ছেলে। তিনি রামপাল সরকারি কলেজের স্নাতক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। তার নববিবাহিত স্ত্রী সোনিয়া খাতুন খুলনার একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১০ শ্রেণির শিক্ষার্থী। তার উচ্চতা ৩৭ ইঞ্চি।
ছোটবেলা থেকেই খর্বাকৃত আব্বাসের উচ্চতা অনেক কম। যার কারণে প্রতিনিয়ত বন্ধু-বান্ধব, প্রতিবেশী, সহপাঠী এমনকি আত্মীয়স্বজনদের কাছে হাসি-ঠাট্টার পাত্র ছিলেন। মানুষের হাসি-ঠাট্টা ও প্রতিবন্ধকতাকে পেছনে ফেলে পড়াশুনা চালিয়ে গেছেন। স্নাতক পাশ করে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করার ইচ্ছা রয়েছে তার। স্ত্রীকেও উচ্চশিক্ষিত করার চেষ্টা করবেন বলে জানিয়েছেন আব্বাস শেখ।
আব্বাস শেখ বলেন, শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় অনেকেই আমাকে নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করত। কারো কথা নিয়ে মাথা ঘামাই না। বন্ধুরা বলত আমি কখনো বিয়ে করতে পারব না। আমাকে দিয়ে কিছুই হবে না। আল্লাহর রহমতে বিয়ে করেছি। শান্তিতে সংসারও করব।
সোনিয়াকে কিভাবে পেলেন- এমন প্রশ্নে আব্বাস বলেন, বছর দেড়েক আগে পরিবার পছন্দ করে রাখছিল। গত ২০ অক্টোবর আমার দুই বোন জামাইসহ আমি সোনিয়াকে দেখতে যাই এবং তাকে আমার পছন্দ হয়। আজ শুক্রবার আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে আমি আমার স্ত্রীকে বাড়িতে নিয়ে আসছি। পরিবারের পছন্দতে বিয়ে করেছি, আপনারা আমাদের জন্য দোয়া করবেন। আমরা যেন সুন্দরভাবে জীবনযাপন করতে পারি।
আব্বাসের মা নাজমা বেগম বলেন, ‘ছোটবেলায় এক হাতে বই আর এক হাতে ছেলেকে নিয়ে স্কুলে গিয়েছি। অনেক কষ্টে মানুষের কথা শুনে ছেলেকে লেখাপড়া শিখিয়েছি। আমার দুই মেয়ে এবং একমাত্র ছেলে আব্বাস। অনেক কষ্টের ধন আমার, ওর জন্য আপনারা সবাই দোয়া করবেন।’
রামপাল থানার ওসি এসএম আশরাফুল আলম বলেন, শারীরিকভাবে কিছুটা খাটো হলেও আব্বাস একজন সামাজিক ছেলে। বিভিন্ন সামাজিক আচার-আচারণে তাকে অংশগ্রহণ করতে দেখেছি। বিয়েতে আমাকে দাওয়াত করেছিল। তার গায়েহলুদে উপস্থিত ছিলাম। নবদম্পতিকে আমি শুভেচ্ছা জানাই। প্রতিবন্ধীদের নিয়ে হাসি-ঠাট্টা না করে, তাদের প্রতিটি কাজে উৎসাহ দেওয়া প্রয়োজন। প্রতিবন্ধীরা এখন আর সমাজের বোঝা নয়, সঠিকভাবে লালন-পালন করতে পারলে তারাও সম্পদ হতে পারে।
সবাইকে প্রতিবন্ধী ও শারীরিকভাবে পিছিয়ে থাকা মানুষদের পাশে থাকার অনুরোধ জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।