ঢাকাঃ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আগামীকাল বুধবার (২১ জুন) শেষ পরীক্ষার মুখোমুখি হতে যাচ্ছে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন। গাজীপুর, বরিশাল ও খুলনা সিটি করপোরেশনের পর এই দুই সিটির ভোটে উত্তীর্ণ হলেই সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয়ে নিশ্চিত হবে আউয়াল কমিশন।
সিলেট ও রাজশাহী দুই সিটিতেই ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোট নেওয়া হবে। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলবে। ভোটারদের সুবিধার জন্য এই দুই সিটিতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
ইসি জানায়, নির্বাচনী এলাকায় সীমিত আকারে যান চলাচল করবে। আর সিসিটিভির মাধ্যমে ঢাকার আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবন থেকে দুই সিটির ভোট সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করবে ইসি। ভোটের সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ হয়েছে বলে ইতোমধ্যে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার (অব.) জেনারেল মো. আহসান হাবিব খান।
ইসি জানায়, সিলেট সিটিতে ৩ হাজার ২০৪টি এবং রাজশাহীতে ২ হাজার ৫০০টি কেন্দ্রে ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করা হবে। ১ হাজার ৭৪৭টি সিসি ক্যামেরা দিয়ে সিলেট সিটি এবং ১ হাজার ৪৬৩টি সিসি ক্যামেরা দিয়ে রাজশাহী সিটির ভোট নির্বাচন ভবন থেকে পর্যবেক্ষণ করবে কমিশন।
ভোটের সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ হয়েছে উল্লেখ করে ইসি আহসান হাবিব খান জানান, প্রতিটি নির্বাচনই আমাদের কাছে সমান গুরুত্বপূর্ণ ও চ্যালেঞ্জের। সকল নির্বাচন থেকে অভিজ্ঞতা নিচ্ছি, ভোটারদের প্রত্যাশা পূরণের চেষ্টা করে যাচ্ছি। তফসিল ঘোষণার পর থেকেই নির্বাচনী বিধি-বিধান প্রতিপালন নিশ্চিতকল্পে আমাদের অবস্থান কঠোর ছিল। পূর্বের ন্যায় রাজশাহী ও সিলেট সিটি নির্বাচনের প্রতিটি পদক্ষেপেই আমরা সুতীক্ষ্ণ নজর রেখে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে সব ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছি।
এছাড়া আমরা সরাসরি সিসি ক্যামেরায় এ নির্বাচন ঢাকা থেকে পর্যবেক্ষণ করবো। নির্বাচন পূর্ব, ভোটের দিন ও নির্বাচনোত্তর অনিয়ম, গোলযোগ ও সহিংসতা যেন না ঘটে সে বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আচরণবিধি প্রতিপালনে স্থানীয়ভাবে বেশ কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে অভিযোগ খতিয়ে দেখে সিলেটে একজন কাউন্সিলর প্রার্থীর প্রার্থিতাও বাতিল করা হয়েছে।
তিনি বলেন, নির্বিঘ্নে ভোটাধিকার প্রয়োগের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার ব্যাপারে প্রশাসন, পুলিশ, আইন শৃঙ্খলাবাহিনী ও ভোটগ্রহণ কর্মকর্তারা শতভাগ নিশ্চয়তা প্রদান করেছেন। আমরা সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি করেছি এবং নির্বাচনী প্রচারণায় অনিয়ম বা বিশৃঙ্খলা করলে কোনো ধরনের ছাড় দিইনি।
তিনি আরও বলেন, পাঁচ সিটির মধ্যে গাজীপুরের পর খুলনা ও বরিশালে ইভিএমে ভোট দিতে তেমন বিড়ম্বনায় পড়তে হয়নি। আশা করি, রাজশাহী ও সিলেটেও কোনো অসুবিধা হবে না। বর্ষা মৌসুমের কথা মাথায় রেখে ব্যাটারি, চার্জার ও আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতিতেও যেন ত্রুটি না থাকে সে বিষয়ে কারিগরি দল সক্রিয় থাকবে। আমাদের কাছে সব প্রার্থী সমান, সব দলও সমান। ভোটারদের নির্বিঘ্ন পরিবেশ তৈরিতে আমরা বদ্ধপরিকর। সকল অংশীজনের সক্রিয় এবং আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করছি।
একনজরে সিলেট সিটি ভোট
সিলেট সিটিতে ১৯০টি ভোটকেন্দ্রের ১ হাজার ৩৬৭টি ভোটকক্ষে ৪ লাখ ৪৭ হাজার ৭৫৩ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করার সুযোগ পাবেন। এদের মধ্যে পুরুষ ভোটার রয়েছেন ২ লাখ ৫৪ হাজার ২৩৬ জন, মহিলা ভোটার ২ লাখ ৩৩ হাজার ৩৮৭ জন এবং ছয়জন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন।
প্রার্থী : মেয়র পদে আটজন, ৪২টি সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ২৯৪ জন এবং ১২টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ৮৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
মেয়র প্রার্থীরা হলেন- জাতীয় পার্টির মো. নজরুল ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাহমুদুল হাসান, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, জাকের পার্টির মো. জরিহুল আলম, স্বতন্ত্র মো. আব্দুল হানিফ, মো. ছালাহ উদ্দিন রিমন, মো. শাহ জাহান মিয়া এবং মোশতাক আহমেদ রউফ মোস্তফা।
ভোটের পরিবেশ শান্ত রাখতে সাধারণ কেন্দ্রে ১৬ জন এবং গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ১৭ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন রয়েছেন। এছাড়া পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসারের সমন্বয়ে প্রতিটি সাধারণ ওয়ার্ডে একটি করে মোট ৪২টি মোবাইল ফোর্স, প্রতি তিনটি সাধারণ ওয়ার্ডের একটি করে মোট ১৪টি স্ট্রাইকিং ফোর্স, প্রতি থানায় একটি করে মোট ছয়টি রিজার্ভ স্ট্রাইকিং ফোর্স, প্রতি দুইটি সাধারণ ওয়ার্ডের জন্য একটি করে মোট ২২টি র্যাবের টিম ও পাঁচটি সাধারণ ওয়ার্ডের জন্য এক প্লাটুন করে মোট ১০ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া বুধবার পর্যন্ত ৪২জন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট এবং বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ১৪জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ভোটের মাঠে থাকবেন।
একনজরে রাজশাহী সিটি ভোট
রাজশাহী সিটিতে ১৫৫টি ভোটকেন্দ্রের ১ হাজার ১৫৩টি ভোটকক্ষে ৩ লাখ ৫১ হাজার ৯৮২ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাবেন। এর মধ্যে ১ লাখ ৭১ হাজার ১৬৭ জন পুরুষ, ১ লাখ ৮০ হাজার ৮০৯জন মহিলা এবং ছয়জন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন।
প্রার্থী : একটি মেয়র পদে চারজন, ৩০টি সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ১১১ জন এবং ১০টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ৪৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
মেয়র প্রার্থীরা হলেন- জাতীয় পার্টির মো. সাইফুল ইসলাম স্বপন, আওয়ামী লীগের এএইচএম খায়রুজ্জামান (লিটন), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. মুরশিদ আলম এবং জাকের পার্টির মো. লতিফ আনোয়ার।
ভোটের পরিবেশ শান্ত রাখতে সাধারণ কেন্দ্রে ১৬ জন এবং গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ১৭ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন রয়েছেন। এছাড়া পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসারের সমন্বয়ে প্রতিটি সাধারণ ওয়ার্ডে একটি করে মোট ৩০টি মোবাইল ফোর্স, প্রতি তিনটি সাধারণ ওয়ার্ডের একটি করে মোট ১০টি স্ট্রাইকিং ফোর্স প্রতি থানায় একটি করে মোট ছয়টি রিজার্ভ স্ট্রাইকিং ফোর্স, প্রতি দুইটি সাধারণ ওয়ার্ডের জন্য একটি করে মোট ১৬টি র্যাবের টিম ও পাঁচটি সাধারণ ওয়ার্ডের জন্য এক প্লাটুন করে মোট সাত প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া বুধবার পর্যন্ত ৩০জন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট এবং বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ১০জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ভোটের মাঠে থাকবেন।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, এই দুই সিটি নির্বাচন উপলক্ষ্যে ৭২ ঘণ্টার জন্য মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়া ভোটের দিন সীমিত থাকবে যন্ত্রচালিত যান চলাচল। নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে সকল ধরনের মিছিলের ওপরও। সকলের ভোট দেওয়ার সুবিধার্থে ভোটের এলাকায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।