ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দরনগরী পুরোপুরি দখলের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে রাশিয়া। দেশটি বলছে, রুশ সেনারা ইউক্রেনের অন্যতম প্রধান এই বন্দরনগরীর শহুরে এলাকা দখলে নিয়েছে। তবে শহরের একটি ইস্পাত কারখানার ভেতরে ইউক্রেনের যোদ্ধাদের একটি ছোট দল এখনও রয়ে গেছে।
ইউক্রেনীয় যোদ্ধাদের এই দলটিকে আত্মসমর্পণের আল্টিমেটাম দিয়েছে মস্কো। এমনকি আত্মসমর্পণ করা যোদ্ধাদের জীবন রক্ষার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে দেশটি।
রোববার (১৭ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স ও সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।
কাতারভিত্তিক এই সংবাদমাধ্যমটি বলছে, মারিউপোল শহর ‘পুরোপুরি’ দখলে নেওয়ার বিষয়ে রাশিয়ার করা দাবি স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি। তবে আসলেই শহরটি মস্কোর দখলে চলে গেলে তা হবে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি আক্রমণ শুরুর পর রুশ সামরিক বাহিনীর হাতে পতন হওয়া ইউক্রেনের প্রথম বড় কোনো শহর।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মেজর জেনারেল ইগোর কোনাশেঙ্কোভ বলেছেন, ‘মারিউপোলের পুরো শহুরে এলাকাটি সম্পূর্ণরূপে দখলে নেওয়া হয়েছে … ইউক্রেনীয় যোদ্ধাদের অবশিষ্ট একটি অংশ বর্তমানে আজভস্টাল ইস্পাত কারখানায় সম্পূর্ণরূপে অবরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছে।’
ইউক্রেনীয় এই যোদ্ধাদের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে ইগোর কোনাশেঙ্কোভ বলেন, ‘তাদের (আটকে পড়া ইউক্রেনীয় যোদ্ধাদের) জীবন বাঁচানোর একমাত্র সুযোগ হলো স্বেচ্ছায় অস্ত্র ফেলে দেওয়া এবং আত্মসমর্পণ করা।’
রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই মুখপাত্র আরও বলেছেন, ‘মারিউপোলকে স্বাধীন করার অভিযানে’ ইতোমধ্যেই এক হাজার ৪৬৪ জন ইউক্রেনীয় সেনা আত্মসমর্পণ করেছে।
এদিকে রুশ বার্তাসংস্থা তাস জানিয়েছে, মারিউপোলে রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়া ইউক্রেনীয় যোদ্ধাদের আত্মসমর্পণের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে রাশিয়া। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মস্কোর স্থানীয় সময় রোববার সকাল ৬টা থেকে (বাংলাদেশ সময় সকাল ৯টা) যেসব ইউক্রেনীয় যোদ্ধা তাদের অস্ত্র সমর্পণ করবে তাদের জীবন রক্ষা করা হবে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ভোরে ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রাশিয়ান সৈন্যরা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনী স্থল, আকাশ ও সমুদ্রপথে ইউক্রেনে এই হামলা শুরু করে। একসঙ্গে তিন দিক দিয়ে হওয়া এই হামলায় ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পড়েছে বৃষ্টির মতো।
উল্লেখ্য, প্রায় পাঁচ লাখ বাসিন্দার মারিউপোল শহরটি দখল করা রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ এই শহরটি আজভ সাগরে ইউক্রেনের কৌশলগত বন্দর এবং ডনবাস অঞ্চলে রুশ-সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলগুলোর কাছেই অবস্থিত।