মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি: ৫/৬ মাস আগে ৫০ হাজার টাকা কিস্তি তুলে একটি ভ্যান কিনেছিলেন ফিরোজ বেপারী। সে কিস্তির টাকা এখনো সম্পূর্ণ পরিশোধ করতে পারেননি। ওই কিস্তি ছাড়াও অভাবের তাড়নায় আরো ২টি কিস্তি তুলেছেন তিনি। ফিরোজ বেপারীর মাত্র ২ কড়া (সাড়ে ৩ শতক) বাড়ি ছাড়া নেই কোন ভিটেমাটি। তাও আবার নদীর পারি বিলের মধ্যে টিনের ঘর তুলে কোনরকম ৬ সদস্যের পরিবার নিয়ে বসবাস করেন তিনি। একদিকে যেমন রয়েছে চুরি-ডাকাতির ঝুঁকি অন্যদিকে কাল বৈশাখী ঝড়ের এই মৌসুমে উৎকণ্ঠায় আর শঙ্কায় থাকে পরিবারটি।
ফিরোজ বেপারী বাবা মৃত রমজান বেপারী একজন কৃষক ও শ্রমিক ছিলেন। দুই বছর আগে বাবা মারা গেছেন। বাবার রেখে যাওয়া সাড়ে ৩ শতাংশ জমি তার মধ্যেই পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করেন ফিরোজ বেপারী। ভ্যান চালিয়ে যা আয় হয় তাই দিয়ে চলে ফিরোজ বেপারী সংসার। সাথে গুনতে হয় তিনটি কিস্তির টাকা। ফিরোজ বেপারী মুন্সিগঞ্জ পৌরসভার মোল্লারচর এলাকার মৃত রমজান বেপারীর ছেলে।তার সংসারে দুই ছেলে, এক মেয়ে, মা এবং স্ত্রী রয়েছে। ৬ জনের সংসার ভ্যান গাড়ির আয়ের উপর নির্ভরশীল।
আজ বৃহস্পতিবার (১২ মে) রাত সাড়ে ৯ টার দিকে ফিরোজ বেপারীর কথা হয় আমাদের সাথে । ফিরোজ বেপারী বলেন, গত মঙ্গলবার সকাল ১০ টার দিকে বাড়ি থেকে ভ্যান গাড়ি নিয়া বেড় হই। মুন্সিগঞ্জ সুপার মার্কেট এলাকায় আসলে ট্রাফিক পুলিশ বজলুর রহমান স্যারসহ কয়েকজন আমার গাড়িটা আটক করে। পরে তারা ট্রাফিক অফিস ভ্যান নিয়ে যায়। এ সময় আমার গাড়ির সাথে আরও দুইটি গাড়ি নিয়া যায়। অন্য দুই গাড়ির মালিক ৫০০ টাকা করে দিয়া ভ্যান গাড়ি ছাড়াইয়া নেয়। আমার পকেটে টাকা ছিল না। আমি আমার ভ্যান গাড়ি ছাড়াইতে পারিনাই। আমি কাইন্দা কাইন্দা পুলিশের হাতে পায়ে ধরছি। বলছি আমার কাছে টাকা নেই। এই ভ্যান গাড়ি চালাইয়া আমার ছয় জনের সংসার চলাই। তারা আমার কোন কথা শোনে নাই।আমার গাড়ি আটকাইয়া রাখছে। পরে আজ দুপুরে আমার মামা আনোয়ার এর মাধ্যমে আমার ভ্যানটি পাঠাইয়া দিছে পুলিশ।
তিনি আরো বলেন, ১ মাস হইলো একটা মাইয়া হইছে। মেয়েকে বুকের দুধের পাশাপাশি বাইরের দুধও কিনে খাওয়াতে হয়। মা,বৌ ২ পোলা ১মেয়ে নিয়ে ৬ জনের সংসার আমার। প্রত্যেক সাপ্তায় ৩ হাজার টাকা কিস্তিও দেই। এইসব খরচ আমি এক লাই ভ্যান গাড়ি চালাইয়া মিটাই। গত তিন দিন দইরা ওই ভ্যান গাড়িডা আটকায় রাখছে পুলিশ। ঘরে খাওন নাই। কত কাইন্দা কাইট্টা কইলাম আমার গাড়িডা দিতে, পুলিশ দিল না। এই ৩দিন ধারদেনা করে চলছি। আজ বিকেলে ভ্যান বুইঝা পাইলেও বৃষ্টির কারণে আর বের হতে পারি নাই। কাল সকালে আবহাওয়া ভালো থাকলে ভ্যান নিয়ে বেরোবো। ভ্যান চালাইয়া যা আয় করি তা দিয়ে কোন রকম আমার সংসার আর কিস্তি চলে । কোন টাকা আয় থাকেনা।
ফিরোজ ব্যাপারী আরো জানান, আমার ৮০,৪০ ও ৩০ হাজার টাকার তিনটি কিস্তি আছে।কিস্তি বাবাদ প্রতি সপ্তাহে ৩ হাজার টাকা দিতে হয় । প্রতিদিন ৫০০ টাকার কম হলে সংসার চলেনা।এর মধ্যে ১ মাস বয়সি মেয়ের দুধ,ওষুদ খরচ, বৃদ্ধ মায়ের ওষুধ খরচ সব কিছুই এই ভ্যান গাড়ির আয়ের টাকায় চলে। ভ্যান আটকে রাখায় বৌ-পোলাপাইন লইয়া খুব কষ্ট করছি। ধার দেনা করে চলছি। শনিবার ২ হাজার টাকার কিস্তি আছে। আজ ভ্যানগাড়ি বুঝে পাওয়ার পর হতে বৃষ্টি হইতেছিল কাল সকালে গাড়ি নিয়ে বেরোমু।
ভ্যান গাড়ি আটকে রাখার বিষয়ে মুন্সিগঞ্জ ট্রাফিক পুলিশ পরিদর্শক (টি আই) বজলুর রহমান আমাদেরকে রাত ১০টার দিকে বলেন, কিছু ভ্যান অবৈধভাবে ভ্যানেল মধ্যে মটোর লাগিয়ে রাস্তা দিয়ে ইটের সুড়কি ও বালু পরিবহন করে। যার কারণে ইটের সুড়কি ও বালু পরে রাস্তা নষ্ট হয় এবং মাঝেমধ্যে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটে। এ কারণে ২ ভ্যান চালকের ভ্যান আটক করা হয়েছিল। দুইদিন আগে আটক করা হয় এবং চালকদের মুচলেকা দিয়ে ভ্যান নিয়ে যেতে বলা হলেও তারা সঠিক সময় এসে ভ্যান নেয়নি। পরে আজ ফিরোজ ব্যাপারীর ভ্যানটি তার এক আত্মীয়ের নিকট বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। অপর ভ্যানটি মুচলেকা দিয়ে নিয়ে গেছে ভ্যানচালক।