মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি: মুন্সীগঞ্জে যৌতুকের বলি সহিফা (১৭) জোরপূর্বক ছলনার মাধ্যমে বিবাহ করে যৌতুকের দাবী করে নির্মমভাবে নির্যাতন করে হত্যা করে সহিফাকে। হত্যার পরেও তারা বিভিন্নভাবে নিহত সহিফার পরিবারকে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। যৌতুকের বলি সহিফার পরিবাকে মামলা তুলে নিতে হুমকিতে নির্ঘূম রাত কাটাচ্ছে এখন। এমন অভিযোগ করেছে নিহতের মা অপি বেগম। মৃত্যুর পরে দাখিল পাস করার ফলাফল পায় মেয়ে সহিফা হারা মা বাবা। কিল্লাপাড়া, নগর কসবার সহিফার স্বামী অপূর্ব রহমান অপু (২১), ভাসুর তপু (২৩) সর্ব পিতা আনিসুর রহামন, শ্বশুড় আনিসুর রহমান (৬০), শ্বাশুড়ি ফিরোজা বেগম (৫২) স্বামী আনিসুর রহমান মিলে যৌতুকের দাবীতে নির্যাতন করে মেরে ফেলার অভিযোগে থানায় মামলা হয় ১৩ ফেব্রুয়ারি।
মুন্সিগঞ্জ থানার মামলা নং ৩৫, ধারা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (স:/০৩) এর ১১ (ক)। মামলার পরে পুলিশ আসামীদের গ্রেফতার করতে না পারলেও আসামীরা আদালতে আত্মসমর্পণ করে। আদালত (১১ এপ্রিল) সোমবার তাদেরকে জামিন মঞ্জুর না করে জেল হাজতে প্রেরণ করে। আদালত চত্বরেও পুলিশ উপস্থিতিতে বাদীর পরিবারকে দেখে নেয়ার হুমকি দেয় এবং বলে জেল থেকে বের হয়ে নেই কাউকে বাঁচতে দেব না এমন অভিযোগ করেছে নিহত সহিফার মা। সহিবার বাবা রহমত উল্লাহ স্বপন ও মামা মাসুম পারভেজ এই মর্মে সদর থানায় ৮মার্চ ও ৬ এপ্রিল পৃথক সাধারণ ডায়েরি করেছেন। সাধারণ ডায়েরী থেকে জানা যায়, আসামীদ্বয়কে জেল হাজতে প্রেরণের পূর্বে অপূর্ব রহমান অপু হুমকি দিয়েছে। মামলা তুলে না নিলে নিহতের মা, ভাই ও স্ত্রীর বড় বোন মাহমুদা ও তার ছেলে মেহেদীকে মেরে ফেলবে। জামিনে বের হলে পুন:হত্যার ঘটনা ঘটতে পারে বলে শঙ্কা করছে নিহতের মা অপি বেগম। ইবতেদায়ী পঞ্চম শ্রেণি থেকে পড়াশুনা করে জেলা সার্টিক হাউজের সামনের মুন্সিগঞ্জ আদর্শ আলিম মাদ্রাসা থেকে সদ্য দাখিল পরীক্ষা দেওয়ার পূর্বেই ২০২১ সালের জুলাই মাসে কন্যা নিহত সহিফা (১৭) কে জোর পূর্বক ভয়ভীতি দেখিয়ে বিবাহ করে। বিবাহের পরে নভেম্বরে দাখিল পরীক্ষা দেয়। মেয়েটি দাখিল পরীক্ষায় ভালো ফলাফল অর্জন করে তবে সে তার পরীক্ষার ফলাফল দেখে যেতে পারেনি।
মেয়ের মা ও দাদীর অভিযোগ মেয়েটিকে ফুসলিয়ে অপূর্ব ছেলের দাদী তার নাতির সাথে বিবাহ দিতে বাধ্য করে। বিয়ের পর থেকেই যৌতুকের জন্য শারিরীক ও মানুষিক নির্যাতন করতেই থাকে। বিভিন্ন সময়ে মোবাইলে নির্যাতনের কথা জানাতো। অবশেষে যৌতুকের বলিতে শিকার হয় সহিফা। সহিফাকে নির্মমভাবে নির্যাতন করে মেরেই ফেলে পাষন্ড স্বামী ও অন্যান্য অভিযুক্তরা। নিহত সহিফার মামা মাসুম পারভেজ জানান, তাকেসহ তার পরিবারের ও নিহত সহিফার বাবা, মা সন্তানদের খুন করে ফেলার ভয়ভীতি ও হুমকী ধামকি দিয়ে আসছে আসামীর আত্মীয় স্বজন। বর্তমানে আসামীরা জেল হাজতে থাকলে তারা জেল থেকে বের হয়ে এসে দেখে নেয়ারও হুমকি দেন আদালতে প্রকাশ্যে। আইনজীবী সমিতির সামনে হুমকি দেয় তোদের একটারে শেষ করেছি প্রয়োজনে আরো ২/৪টা খুন কইরা ফালামু। মামলা না উঠালে টুকরা টুকরা করে ফেলারও হুমকি দেয় এই সকল আসামীরা।
এ বিষয়ে নারী শিশু নির্যাতন কোর্টের পিপি এডভোকেট লাবলু মোল্লা জানান, এটা একটা জঘন্য হত্যাকান্ড। নিহত সহিফার মা গোসলে সময় শরীরের অধিকাংশ জায়গায় আঘাতের চিহ পেয়েছে যা ছবি আকারে প্রিন্ট করে রেখেছে। প্রাথমিকভাবে প্রমান করা যায় পরিকল্পল্পিতভাবে এই হত্যাকান্ড ঘটনো হয়েছে। বাদী পক্ষের এডভোকেট আসামীদের জামিন চাইলে আদালতের অতিরিক্ত জেলা জজ নারী নির্যতন কোর্টের ভারপাপ্ত বিচারক মোনতাহারা আখতার জামিন না মঞ্জুর করে তাদের জেল হাজতে প্রেরন করেন।