Tuesday , 23 April 2024
শিরোনাম

মুন্সিগঞ্জ সদর জেনারেল হাসপাতালে গড়ে উঠেনি হৃরোগের উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা। 

মো .আহসানুল ইসলাম আমিন,স্টাফ রিপোর্টার :

মুন্সিগঞ্জ জেলা সদরে একমাত্র সরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল। হাসপাতালটিতে দীর্ঘ বছরেও হৃরোগের উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। এতে কার্ডিওলোজির চিকিৎসক ও প্রয়োজনীয় ওষুধ সংকটে মৃত্যু ঝুঁকি বাড়ছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী রোগীর স্বজন ও সচেতন মহল।

তারা জানান, জেলা পর্যায়ে হার্ট এ্যাটাক (হৃদরোগ) কিংবা ব্রেইন স্ট্রোক জনিত রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেয়ারমতো প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা ও ঔষধসহ লজিস্টিক সাপোর্ট নেই। জেলা উপজেলা পর্যায়ের লোকজন এ ধরনের রোগে আক্রান্তদের উন্নত চিকিৎসা হচ্ছে না। প্রান্তিক পর্যায়ের রোগীরা প্রয়োজনীয় সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। রোগটি সম্পর্কে তাদের ধারণা কম, তেমন সচেতনও নন। তবে এই রোগের চিকিৎসা বড় বড় শহরের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ছে। আধুনিক সেবার প্রয়োজনীয়তা সত্ত্বেও প্রান্তিক পর্যায়ের রোগীরা বঞ্চিত হচ্ছেন। তাছাড়া হৃদরোগ সম্পর্কে সাধারণ মানুষের অসচেতনতা ও চিকিৎসা কেন্দ্র ভেদে রোগটির সেবার মূল্য কম-বেশি হওয়ায় চিকিৎসা আওতার বাইরে থাকছেন অসংখ্য রোগী।

বিশ্ব স্বাস্থ্যা সংস্থার তথ্য মতে, বিভিন্ন রোগে মৃত্যুর মধ্যে প্রথম স্থানে স্ট্রোক এবং দ্বিতীয় হার্ট অ্যাটাক। এ ক্ষেত্রে প্রিম্যাচিউরড হার্ট ডিজিজ বা ৫০ বছরের পরপরই অকাল মৃত্যু বেশি হচ্ছে। এমনকি ৩০ থেকে ৪০ বছর বয়সিরাও হৃদরোগে মারা যাচ্ছেন। এর কারণ বেশির মানুষের অস্বাস্থ্যাকর খাদ্যাভ্যাস। এদের বড় একটি অংশ নানাভাবে তামাক ব্যবহার করেন। একটি অংশ অতিরিক্ত তেল-চর্বি জাতীয় এবং কার্বোহাইড্রেড সমৃদ্ধ খাদ্য বেশি গ্রহণ করছেন। মানুষের জীবনধারায়ও পরিবর্তন এসেছে। এত উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিসের মতো রিস্ক ফ্যাক্টর হচ্ছে। ফলে হৃদরোগ বাড়ছে।

জানাগেছে, মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ব্রেইন স্ট্রোক কিংবা হৃদরোগে আক্রান্ত রোগী যাওয়ার পর সেখানে একজন মেডিকেল অফিসার রোগীকে ঢাকা রেফার্ড করে দেন। কারণ হাসপালটিতে প্রয়োজনীয় কার্ডিওলজি চিকিৎসক ও রোগীকে দেয়ার মতো কোন সাপোর্ট নেই। এতে করে সকল রোগীদেরকে ঢাকায় পাঠিয়ে দেন কর্তব্যরত চিকিৎসকরা। চিকিৎসকরা রোগীদেরকে ঢাকা রেফার করার পর রোগীর স্বজনরা পড়েন যোগাযোগ ব্যবস্থার বিড়ম্বনায়। রাস্তায় যানজটের কারণে রোগীকে ঢাকায় নিয়ে যেতে পড়েন নানা ভোগান্তিতে। এ কারণে হৃদরোগে আক্রান্ত এক শতাংশ রোগীরাও সময়মতো ঢাকায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে পৌঁছাতে পারে না। প্রত্যান্ত অঞ্চলের গ্রাম থেকে আসা রোগীরা জেনারেল হাসপাতালে এসে তাৎক্ষণিক প্রিভেন্টিভ ট্রিটমেন্ট বা জীবন রক্ষাকারী চিকিৎসা পাচ্ছেনা। এর প্রধান কারণ হলো জেলায় সরকারি হাসপাতালে কার্ডিওলজি কনসালন্টে ও বিভাগ নেই।

অনুসন্ধানে জানাগেছে,মুন্সিগঞ্জবাসী ২৪ ঘন্টার মধ্যে ১৫ ঘন্টাই সরকারি চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত থাকেন। এর কারন হলো ২৪ ঘন্টা সকল চিকিৎসা পাওয়ার মতো প্রতিষ্টান গড়ে ওঠেনি। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে রোগীরা সরকারি চিকিৎসাসেবা ও প্রয়োজনীয় ঔষধ পাচ্ছেন। দুপুর ২ টার পর থেকে শুধুমাত্র একজন মেডিকেল অফিসারের উপর নির্ভর করে পরদিন সকাল ৯টা পর্যন্ত চলে চলে হাসপাতালে আগত রোগীদের চিকিৎসাসেবা। এই সময়টাতে রোগীরা বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনোষ্টিক সেন্টারে গিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করে পাচ্ছেনা সঠিক চিকিৎসা। বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনোষ্টিক সেন্টারগুলোতেও সন্ধ্যার পর আর কোন চিকিৎসক থাকে না। মানুষ ব্রেইন স্ট্রোক কিংবা হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হন তখনই ছুটে যান মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে । সেখানে থাকা কর্তব্যরত চিকিৎসকরা রোগীকে প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা দিয়ে ঢাকায় পাঠিয়ে দেন।

ভুক্তভোগী রোগীর স্বজন হোসেন আলী জানান, আমার মেয়েকে মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল থেকে নিয়ে যাওয়ার পর ঢাকায় বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়েছি। এরপর মিরপুর হার্ট ফাউন্ডেশন ঘুরে অবশেষে জানতে পারি আমার মেয়ের হার্টে ছিদ্র আছে। জাতীয় হৃদরোগে হাসপাতালে ও বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে এক লাখের বেশি টাকা খরচ হয়ে গেছে। তিনি বলেন, এই সেবাটা যদি জেলায় পাওয়া যেতো তাহলে এতো সময় আর অর্থ ব্যয় হতো না।

ভুক্তভোগী রোগীর স্বজন হাসান জামিল জানান, মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল থেকে আমার বাবাকে ঢাকায় রেফার করে চিকিৎসকরা। পথিমধ্যে যানজটের কবলে পড়ে ঢাকায় পৌছাতে অনেক সময় চলে যায়। ঢাকায় পৌছানোর কিছুক্ষন পর আমার বাবা মারা যায়। চিকিৎসকরা তখন বলেছেন রোগীকে অনেক দেরি করে নিয়ে আসছেন। এসব রোগীকে দ্রুত চিকিৎসা ও সাপোর্ট দেয়া প্রয়োজন। তিনি আরো জানান, মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে কার্ডিওলজির কোন চিকিৎসক নেই। নতুন ভবনটি চালু করে সেখানে চিকিৎসক নিয়োগ ও চিকিৎসাব্যবস্থা গড়ে তোললে মানুষ দ্রুত সঠিক চিকিৎসাটা করাতে পারবে।

বাংলাদেশ মেডিকেল এ্যাসোসিয়েশন বিএমএ মুন্সিগঞ্জ জেলা সভাপতি ডা: মো. আক্তার হোসেন বাপ্পি বলেন, মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে কার্ডিয়াক সাপোর্ট দেয়ার তেমন কোন সাপোর্ট নেই। যার কারণে রোগীদেরকে ঢাকা পাঠানো হয়। রাস্তায় যানজটের কারণে রোগীদের ঢাকায় পৌছাতে দেরি হয়। হার্ট অ্যাটাকের পর সময়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যতো দ্রুত সম্ভব রোগীকে কার্ডিয়াক সাপোর্ট বা ব্রেন স্ট্রোক রোগীদের সাপোর্ট দেয়া যায় তাহলে মৃত্যুর ঝুঁকিটা কমে যায়। যতো দেরি হবে ততোই মৃত্যু ঝুঁকি বাড়বে। সঙ্গে সঙ্গে রোগীদেরকে যদি সঠিক সাপোর্ট দেয়া যেতো তাহলে মৃত্যু ঝুঁকি এবং মৃত্যু হার কমে যেতো।

সিভিল সার্জন ডা: মঞ্জুরুল আলম বলেন, ২৫০ শয্যা হাসপাতালের ভবন হয়েছি কিন্তু এখানে চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং জনবল নিয়োগ নেয়া হয়নি। যখন হাসপাতালের নতুন ভবনটিতে শতভাগ চিকিৎসা কার্যক্রম চালু হবে তখন আর কোন সংকট থাকবে না। বর্তমানে হাসপাতালে কার্ডিওলজির চিকিৎসক নেই, তবে মেডিসিনের চিকিৎসক আছে। তারা রোগীদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন। তিনি আরো বলেন, কার্ডিওলজি কনসালটেন্ট একজন চিকিৎস আসছে আগামী সাপ্তাহে তিনি জয়েন করবে। কার্ডিলজি এবং হার্ড দুটো বিভাগেই চিকিৎসক আছে। প্রয়োজনীয় ঔষধ আছে। ২৫০ শয্যার নতুন ভবনটি চালু হলে সেখানে কার্ডিওলজির একটি আলাদা ইউনিট তৈরি হবে। তখন রোগীদেরকে আর ঢাকা মুখী হতে হবে না।

Check Also

ময়মনসিংহে জেলার শ্রেষ্ঠ পুলিশ পরিদর্শক নির্বাচিত হয়েছেন মোঃ আনোয়ার হোসেন

দিলীপ কুমার দাস, নিজস্ব প্রতিবেদক ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) মোঃ আনোয়ার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

x