প্রিয়ন্ত মজুমদার, কুমিল্লা উত্তর প্রতিনিধিঃ
কুমিল্লার মুরাদনগরে গ্রাম ছাড়া হওয়ার ভয়ে সেলাই মেশিন ও গাভী না নিয়ে গ্রাম ছাড়া হওয়ার ভয়ে উল্টো স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে এক গৃহবধু। উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানার ৫ নং পূর্ব-ধইর পশ্চিম ইউপির চেয়ারম্যান রহিম পারভেজসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করা হয়।
একই ইউনিয়নের হাটাশ গ্রামের গৃহবধূ বাদী হয়ে গত রোববার বিকেলে কুমিল্লার নারী নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল ৩ এর আদালতে এ মামলা দায়ের করেন। আদালতের বিচারক মোয়াজ্জেম হোসেন মামলাটি গ্রহন করে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) আগামী ধার্য্য তারিখের মধ্যে প্রতিবেদন দেয়ার নিদেশ দিয়েছেন।
এ মামলার অন্যান্য আসামীরা হলেন, হাটাশ গ্রামের আবদুস সাত্তারের ভাগিনা জসীম, সুবল হাজীর ছেলে কাউছর, হিড়াপুর গ্রামের তবদল হোসেনের ছেলে হাবিব ও একই গ্রামের হানিফ মিয়ার ছেলে জলিল।
বাদী পক্ষের আইনজীবি কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক আইন বিষয়ক সম্পাদক এড. সৈয়দ তানভীর আহমেদ ফয়সাল মামলার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ২৯ আগস্ট সোমবার মধ্যরাতে ৫ নং পূর্ব ধইর ইউপির চেয়ারম্যান রহিম পারভেজসহ আরো চারজন হাটাশ গ্রামের ভূক্তভোগী ওই নারীর ঘরে ঢুকে পরিধেয় সমস্ত জামাকাপড় টেনে হিচড়ে ছিড়ে অর্ধ উলঙ্গ করে ধর্ষণের চেষ্টা করেন এবং মোবাইল ফোনে ছবি তুলেন।
সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয়দের কাছে এই বিষয়ে জানতে চাইলে তারা বলেন, ওই নারী স্বামীর সংসার ছেড়ে এসে অনৈতিক কাজ করছেন গত আট বছর যাবৎ। যার ফলে এই গ্রামসহ আশপাশের কয়েক গ্রামের যুবসমাজ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এই কাজ থেকে ফিরে আসতে সামাজিক ভাবে তাকে একাধিকবার অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু সে তার কাজ চালিয়ে উল্টো বলতো তোদের কাছে কী কোন প্রমান আছে যে, আমি খারাপ কাজ করি? এমন কথা বলতো। প্রমানের অভাবে তার বিরোদ্ধে কোন সালিশ করা যাচ্ছিলো না। পরে গ্রামের একদল সচেতন যুবক কৌশল খাঁটিয়ে দুইজন খদ্দরসহ ওই নারীকে হাতে নাতে ধরে ফেলে গত ২৯ আগস্ট সোমবার রাতে। পরে গ্রাম্য সালিশে বিচার হবে এবং এই বিচারে সে গ্রাম ছাড়াও হতে পারে এমন আশঙ্কা টের পেয়ে আদালতে গিয়ে পাঁজনের বিরুদ্ধে মামলা দেয় ওই নারী। যাদেরকে মামলার আসামী করা হয়েছে তারা গ্রামের মাতব্বর শ্রেণীর লোক।
হাটাশ গ্রামের আবদুস সাত্তারের ভাগিনা জসীম, সুবল হাজীর ছেলে কাউছর, হিড়াপুর গ্রামের তবদল হোসেনের ছেলে হাবিব বলেন, ওই নারীকে আমরা বলেছিলাম দেহ ব্যবসা ছেড়ে দিতে। বিনিময়ে তাকে একটি সোলাই মেশিন ও একটি গাভী কিনে দিবো। সে বলে পাঁচ লক্ষ টাকা দিয়ে একটি দোকান ঘর করে দিলে এই পথ থেকে ফিরে আসবে। আমরা তাকে জানিয়ে দেই,এতো টাকা দেবার সামর্থ্য নেই আমাদের। এখন যারা তার অপকর্ম হাতে নাতে ধরলো তাদেরকে মামলা না দিয়ে উল্টো আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে এখন বলছে, টাকা দিলে আর গ্রামে থাকতে দিলে মামলা তুলে নিবে সে।
মামলার বাদী ওই নারীর বাড়িতে গিয়ে তার সাথে এই বিষয়ে কথা হয়। কথার একপর্যায়ে তিনি বলেন, তাদেরকে একাদিকবার বলেছি আমার স্বামী নেই আমাকে চলার ব্যবস্থা করে দিন। তা না করে তারা উল্টো আমাকে গ্রাম ছাড়া করার পায়তারা করছে। আমাকে গ্রাম ছাড়া করলে, আমার যাওয়ার জায়গা নেই। তখন আত্মহত্যা করা ছাড়া উপায় আর থাকবে না। যাদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দিলেন তারা কি ঘটনার ভিডিও বা ছবি তোলেছেন? এমন প্রশ্নে সে বলেন, তারা কাজটি ওদেরকে দিয়ে করিয়েছেন।
৫ নং পূর্ব ধইর পশ্চিম ইউপির চেয়ারম্যান রহিম পারভেজের কাছে এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যে তারিখ উল্লেখ করে ওই নারী মামলা দিয়েছেন, আমি সেই তারিখের দুইদিন আগ থেকে পারিবারিক কাজে ঢাকায় ছিলাম। বিশেষ করে আমি এই ইউনিয়নের নতুন চেয়ারম্যান হয়েছি এই বিষয়ে আমি কিছুই জানতাম না। মামলা হওয়ার পরে বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ খবর নিয়েছি। এখন আর এই বিষয়ে কিছু বলতে চাই না।
বাঙ্গরা বাজার থানার ওসি মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন বলেন, বিষয়টি যেহেতু আদালতে গড়িয়েছে, সেহেতু বেশি কিছু বলার নাই। তবে ওই নারীর সাথে বিভিন্ন জনের কথোপকথনের রেকর্ড আমার হোয়াটসঅ্যাপে আসছে।