প্রথম ওয়ারলেস ফোন আবিষ্কার করে বিশ্বে তোলপাড় ফেলে দিয়েছিলেন মার্কিন প্রকৌশলী মার্টিন কুপার। যে যাত্রা তিনি শুরু করেছিলেন সেই যাত্রা এখন গোটা বিশ্বকে বদলে দিয়েছে। মোবাইল, ফোন ছাড়া মানুষ যেন এক মুহূর্তও চলতে পারে না। এই যন্ত্র মানুষকে অনেকটা রোবটে পরিণত করেছে। এমন অবস্থায় মোবাইলের ব্যবহার কমিয়ে জীবন ফিরে পাওয়ার জন্য সবাইকে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
মার্টিন কুপার বলেছেন, জীবন লাভ করতে হলে এসব ডিভাইসের অতিরিক্ত ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। সম্প্রতি বিবিসির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে এমন কথা বলেন তিনি।
১৯৭৩ সালে প্রথম ওয়্যারলেস সেলুলার ডিভাইস Motorola DynaTAC 8000X তৈরি করেছিলেন তিনি। তার প্রায় ৫০ বছর পর এসে ৯৩ বছর বয়সী এই প্রকৌশলী মনে করেন যে, লোকেদের তাদের ফোনে কম সময় ব্যয় করতে হবে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোর এই বাসিন্দা স্বীকার করেছেন যে তিনি তার সময়ের পাঁচ শতাংশেরও কম সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন। তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে, যারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা মোবাইল ব্যবহার করেন তাদেরকে তিনি কী বলতে চান? জবাবে তিনি বলেন যে, এসব লোকদের ফোন রেখে একটু বাঁচতে হবে।
সাক্ষাৎকার নেয়া বিবিসির সাংবাদিক জেইন ম্যাককাবিন বলেন যে, ‘আপনি কি আমার মতো লোকদের কিছু বলবেন যারা দিনে পাঁচ ঘণ্টার বেশি মোবাইল ব্যবহার করেন’। এর উত্তরে হেসে দিয়ে মার্টিন কুপার বলেন, ‘আপনি কি সত্যিই পাঁচ ঘণ্টার বেশি মোবাইল ব্যবহার করেন? জীবন ফিরে পান।’
প্রথম তৈরি সেলফোনের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, এটি ছিল আড়াই পাউন্ড ওজনের ১০ ইঞ্চি লম্বা একটি ফোন। একবার চার্জ দিয়ে ২৫ মিনিট কথা বলা যেত। আর চার্জ হতে সময় লাগতো ১০ ঘণ্টা।
মার্টিন কুপার ২৬ ডিসেম্বর, ১৯২৮ সালে ইলিনয় রাজ্যের শিকাগোতে জন্মগ্রহণ করেন। তারবিহীন টেলিফোন শিল্প হিসেবে মোবাইল ফোনের পথিকৃৎ হিসেবে বৈশ্বিকভাবে পরিচিত হয়ে আছেন তিনি। এ শিল্পে তার সর্বমোট এগারোটি মেধাস্বত্ব রয়েছে। বর্তমান সময়ের বেতার তরঙ্গ ব্যবস্থাপনায় অন্যতম শীর্ষস্থানীয় আবিষ্কারক তিনি।
১৯৫০ সালে ইলিনয়িস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (আইআইটি) থেকে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন কুপার। স্নাতক ডিগ্রী শেষে কোরিয়ার যুদ্ধের সময় মার্কিন নৌবাহিনীর সংরক্ষিত বাহিনীতে সাবমেরিন অফিসারের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেন নিজেকে। ১৯৫৭ সালে আইআইটি থেকেই ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন। ২০০৪ সালে এখান থেকেই সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রী লাভ করেন তিনি। বর্তমানে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য হিসেবে রয়েছেন।
বিশিষ্ট উদ্যোক্তা, আবিষ্কারক, বিনিয়োগকারী এবং নীতি পরামর্শক ও তারবিহীন মোবাইলের ফার্স্ট লেডি হিসেবে পরিচিত আর্লিন হ্যারিসকে বিয়ে করেন মার্টিন কুপার।
১৯৭০-এর দশকে মোটোরোলা কোম্পানীতে কর্মরত অবস্থায় প্রথমবারের মতো হাতের মুঠোয় মোবাইল ফোন থেকে কথা বলেন এবং এর উন্নয়নে কাজ করে যান। এরপর এটিকে বাজারজাতকরণে নিয়ে আসেন। এরফলে তিনি বৈশ্বিকভাবে সেল ফোনের জনকের মর্যাদা পান। এছাড়াও তিনি আধুনিক বিশ্বের প্রথম ব্যক্তি হিসেবে জনসমক্ষে মোবাইল ফোনধারী হয়ে আছেন।
তার স্ত্রী ও বিশিষ্ট ব্যবসায়িক অংশীদার আর্লিন হ্যারিসের সাথে অনেকগুলো যোগাযোগ বিষয়ক কোম্পানী গঠন করেন। বর্তমানে তিনি ক্যালিফোর্নিয়ার দেল মার এলাকায় অবস্থিত ডায়না এলএলসি কোম্পানীর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও, ফেডারেল কমিউনিকেশন্স কমিশন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সাথে জড়িত রয়েছেন কুপার।