‘গত ১৮ জুলাই দিবাগত রাত সাড়ে তিনটায় ডাকাতদের গুলিতে আমার ছোট ভাই ইয়াজউদ্দিন রমিম মৃত্যুবরণ করে। এরপর পুলিশ ঘটনার সঙ্গে জড়িত একজনকে গ্রেফতার করে। সে হ্যান্ডকাপ অবস্থায় পুলিশ কাস্টডি থেকে পালিয়ে যায়। এ অবস্থায় আমরা সুষ্ঠু বিচার নিয়ে সন্দিহান। আমরা বাইডেন প্রশাসন, যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস, বাংলাদেশ সরকারের কাছে এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের জন্য অনুরোধ করছি। আপনারা আমাদের পরিবারকে সহযোগিতা করবেন।’
শুক্রবার (২১ জুলাই) বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধনে বাকরুদ্ধ কণ্ঠে তিনি এভাবে ভাই হত্যার বিচার দাবি করেন রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ। ‘আমরা চট্টগ্রামবাসী’ নামের একটি সংগঠন এ মানববন্ধনের আয়োজন করে। এতে বিপুলসংখ্যক সাংবাদিক, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান, ছাত্র ও যুব সংগঠনের সদস্য, সংস্কৃতিকর্মী ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ লেখা ফেস্টুনসহ অংশ নেন।
সংগঠক ইয়াসির আরাফাতের সঞ্চালনায় ইয়াজউদ্দিন রমিম হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করে মানববন্ধনে বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি কবি অনিন্দ্য টিটো, যুব নেতা মো. সালাউদ্দিন, শুভ দাশ, ইমদাদুর রহমান রিয়াদ, রাশেদুল আলম প্রমুখ।
একজন বাংলাদেশি ছাত্র কীভাবে যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে ডাকাদের গুলিতে নিহত হয় এমন প্রশ্ন রাখেন রিয়াজ।
মানববন্ধনে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি চৌধুরী ফরিদ। তিনি বলেন, গত মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত অবস্থায় চট্টগ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ডাকাদের গুলিতে নিহত হয়েছে। সেখানে মানুষের জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই। নেই মানবাধিকার। অথচ তারা বাংলাদেশে এসে মানবাধিকারের কথা বলে। যুক্তরাষ্ট্রে গত ছয় মাসে ২১ হাজারের বেশি মানুষ পুলিশ ও সন্ত্রাসীর গুলিতে নিহত হয়েছে। এর মধ্যে পুলিশের গুলিতে মারা গেছে ছয় শতাধিক। পুলিশের গুলিতে প্রতিদিন গড়ে ৩ জন মারা যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে। প্রকাশ্যে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। সেই যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে প্রশ্ন তোলে। আগে তারা নিজেদের দেশে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করা জরুরি।
তিনি বলেন, কথায় কথায় যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন দেশকে নিষেধাজ্ঞার ভয় দেখায়। বিশ্বমানবতার উচিত যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের গুলিতে বিচারবহিরভূত হত্যাকাণ্ডের জন্য তাদের নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা।
অনিন্দ্য টিটো বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে প্রকাশ্য দিবালোকে পাখির মতো গুলি করে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। বিচার নেই। একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১৩ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি মাসে গড়ে ১০০ জন খুন হচ্ছে। বর্ণবাদ, ট্রাফিক আইন লংঘনের মতো তুচ্ছ কারণে গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে। এখন জানলাম পুলিশ কাস্টডি থেকে হত্যাকাণ্ডে জড়িত আসামি পালিয়ে গেছে। অথচ অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে তারা প্রশ্ন তোলে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশের যে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রয়েছে তা ভূলুণ্ঠিত করতে স্বাধীনতাবিরোধীদের প্ররোচনায় তারা মানবাধিকারের প্রশ্ন তোলার অপচেষ্টা চালায়। আমি বলবো, আগে নিজেদের দেশে খুনের বিচার করুন, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করুন।
ইয়াসির আরাফাত বলেন, আমরা ইয়াজউদ্দিন রমিম হত্যার বিচার চাই। ন্যক্কারজনক এ হত্যাকাণ্ডে প্রমাণিত হয় যুক্তরাষ্ট্রে মানবাধিকার নেই। সেখানে জীবনের নিরাপত্তা নেই। আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই এবং বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই।