ইউক্রেনের দনবাস অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার ঘোষণার পর রুশ সৈন্যরা পূব ইউক্রেনের স্লোভিয়ানস্ক শহরে হামলা জোরদার করায় বুধবার জরুরীভাবে বেসামরিক লোকদের সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে।
ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার ১৩৩ তম দিনে মস্কো বাহিনী পশ্চিম দিকে অগ্রসর হওয়ার পাশাপাশি স্লোভিয়ানস্ক শহরে ভারী বোমা হামলা চালানো হচ্ছে।
মঙ্গলবার রাশিয়ান হামলায় ধ্বংস হওয়া নিজের প্রতিষ্ঠান গাড়ির যন্ত্রাংশ বিক্রির দোকানের পাশে দাঁড়িয়ে ৬৬ বছরের ইয়েভগেন ওলেক্সান্দ্রোভিচ মঙ্গলবার এএফপিকে বলেছেন, ‘বিশ বছরে গড়ে ওঠা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সবকিছু হারিয়ে গেছে। আর কোন সম্পদ নেই।’
এএফপি‘র সাংবাদিকরা স্লোভিয়ানস্কের মার্কেটপ্লেস এবং আশেপাশের রাস্তায় রকেট হামলার চিত্র এবং আগুন নেভানোর জন্য অগ্নিনির্বাপক কর্মীদের ছুটাছুটি দেখেছেন ।
মার্কেটের প্রায় এক তৃতীয়াংশ ধ্বংস হয়ে গেছে, স্থানীয়রা পুড়ে যাওয়া ধ্বংসাবশেষের মধ্যে কী অবশিষ্ট আছে তা খুঁজছেন। বাজারের অবশিষ্ট অংশ সচল ছিল, ক্রেতারা ফল ও সবজি কিনছেন।
সবজি ও ফলমুল বিক্রেতা ৭২ বছরের গ্যালিনা ভ্যাসিলিভনা বলেন, ‘আমি এখানে যা আছে সব বিক্রি করে দেব এবং আমরা বাড়িতে থাকবো। আমাদের বেসমেন্ট আছে, আমরা সেখানে লুকিয়ে থাকবো।’
তিনি বলেন, ‘আমরা কী করতে পারি, আমাদের কোথাও যাওয়ার নেই, আমাদের কারো দরকার নেই।’
শহরের মেয়র ভাদিম লিয়াথ বলেছেন, শহরের ১ লাখ ১০ হাজার লোকের মধ্যে ২৩ হাজার লোক এখনো শহরটিতে রয়েছেন । তবে দাবি করা হচ্ছে রাশিয়া এখনো শহরটি ঘিরে ফেলতে পারেনি।
তিনি বলেন, রাশিয়ার হামলার পর থেকে শহরটির ১৭ জন মারা গেছে, ৬৭ জন আহত হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘লোকদের সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। প্রতিদিন আমরা লোকদের সরিয়ে নিচ্ছি। তাদের বাসে করে আরো পশ্চিমের শহর ডিনিপ্রোতে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে।’
মেয়র বলেন, ‘শহরটি ভালোভাবে সুরক্ষিত। রাশিয়া শহরের দিকে অগ্রসর হতে পারবে না।’
ভিটালি নামে একজন মেরামত কর্মী বলেছেন, তার স্ত্রী এবং মেয়েকে বুধবার স্লোভিয়ানস্ক থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে, তার স্ত্রী ছয়মাসের গর্ভবতী।
তিনি এএফপিকে বলেন,এখানে গতকাল যা ঘটেছিল, তারা শহরের কেন্দ্রে হামলা করেছে। ‘আমি আমার স্ত্রীকে নিয়ে ভীত।’
তিনি বলেন, ‘আমি আমার স্ত্রীকে দূরে পাঠিয়েছি এবং আমার আর কোন বিকল্প নেই, আগামীকাল আমি সেনাবাহিনীতে যোগ দেব।’
পূর্ব দনবাস মূলত লুগানস্ক অঞ্চল নিয়ে গঠিত, যেটি রাশিয়ান বাহিনী প্রায় সম্পূর্ণভাবে দখল করেছে এবং এখন মস্কোর লক্ষ্য দক্ষিণ-পশ্চিমের দোনেৎস্ক অঞ্চল এবং হামলার কেন্দ্রে রয়েছে এখানকার স্লোভিয়ানস্ক শহর।
সেভারদোনেটস্ক শহরের আশপাশ থেকে ইউক্রেনীয় সৈন্যদের সরিয়ে নেয়ার এক সপ্তাহ পরে রবিবার রাশিয়া লিসিচানস্ক এবং লুগানস্ক শহর দখল করে নেয়।
দোনেৎস্ক গভর্নর পাভলো কিরিলেঙ্কো বলেছেন, রাশিয়ান বাহিনী মঙ্গলবার এই অঞ্চলে ৫ জন বেসামরিক লোককে হত্যা এবং ২১ জনকে আহত করেছে।
লুগানস্কের গভর্নর সের্গি গেইডে জোর দিয়ে বলেছেন, রাশিয়া পুরো লুগানস্ক অঞ্চল দখল করেনি, ‘দুটি গ্রামে এখনো লড়াই চলছে।’