মোঃ কবির হোসেন, কুমিল্লা(দেবিদ্বার) প্রতিনিধিঃ
কোনোটির ওজন এক কেজি আবার কোনোটির ওজন দেড় কেজি! ২৫ শতাংশ ভূমির পুরো জায়গা জুড়েই এমন দৃশ্য চোখে পড়ে। এরকম অসাধারণ দৃশ্য দেখতে ভীড় করছে স্থানীয় বাসিন্দা সহ আশপাশের এলাকার উৎসুক জনতা। বলছিলাম, বারি বেগুন-১২ এর কথা যা লাউ বেগুন নামে অধিক পরিচিতি পেয়েছে।
কুমিল্লার দেবিদ্বার পৌর এলাকার ভোষণা গ্রামের আব্দুল করিমের প্রবাস ফেরত ছেলে উসমান সরকার এই সফল বেগুন চাষী। যা ইতিমধ্যে এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। উসমান সরকারের উৎপাদিত এই লাউ বেগুন নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে স্থানীয় কৃষি অফিস সহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মাঝেও।
৭ ফেব্রুয়ারী (বুধবার) দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কৃষক উসমান সরকার তার কৃষি খামারে ৩০দিনে উৎপাদন যোগ্য উন্নত জাতের শশা গাছের পরিচর্যা করছেন। পাশেই তার আলোচিত বারি বেগুন-১২ (লাউ বেগুন) এর ক্ষেত। লাউ বেগুনের খামার পরিদর্শন করতে গিয়ে দেখা হলো স্থানীয় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা এটিএম রাশেদুজ্জামান সরকারের সাথে।
নব উদ্ভাবিত লাউ বেগুন সম্পর্কে জানতে চাইলে কৃষক উসমান সরকার বলেন, ২০১৯ সালে করোনার সময় আমি মধ্য প্রাচ্যের দেশ ওমান থেকে দেশে ফিরে নানান জাতের সবজি চাষ শুরু করি। চিচিঙ্গা,ধুন্দল,বরবটি, করোল্লা,লাউ,ঝিঙা,শশা সহ বারোমাস ব্যাপী নানান জাতের উন্নত ও উচ্চ ফলনশীল সবজি চাষ করতে থাকি যা এখনো চলমান।
লাউ বেগুনের বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলে তিনি বলেন, পৌরসভার দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা এটিএম রাশেদুজ্জামান সরকারের পরামর্শ ও দিকনির্দেশনায় এবং দেবিদ্বার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জনাব বানিন রায় স্যারের সার্বিক সহযোগিতায় বারি বেগুন-১২ জাতের উন্নত মানের এই বেগুন চাষে উদ্বুদ্ধ হই। গতো বছরের নভেম্বরে ২৫ শতাংশ জমিতে আমি ১৫০০ চারা রোপন করি। প্রাকৃতিক দূর্যোগের(ভারী বৃষ্টিপাত) কারনে শুরুতে বড় ধরনের হোঁচট খাই। বৃষ্টিতে অনেক চারা নষ্ট হয়ে যায়। বর্তমানে আমার জমিতে ১ হাজারের মতো বেগুন গাছ আছে। উৎপাদন ও শুরু হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় ১০ হাজার টাকার মতো বিক্রি হয়েছে। ব্যাপক চাহিদা থাকায় প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ ক্ষেত থেকে তাজা বেগুন কিনতে ভীড় করছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আমার এই জমি থেকে প্রায় দেড় লক্ষ টাকার বেগুন উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।
এ বিষয়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জনাব এটিএম রাশেদুজ্জামান বলেন, উসমান সরকার একজন সফল কৃষক। আমাদের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উসমান সরকারের পাশে থেকে তাঁকে সার্বিক দিকনির্দেশনা মূলক পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। আমাদের উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জনাব বানিন রায় স্যার সার্বক্ষণিক কৃষক উসমান সরকারের খোঁজ খবর রাখছেন।
দেবিদ্বার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ জনাব বানিন রায় বলেন, বারি বেগুন-১২ একটি উন্নত জাতের উচ্চ ফলনশীল সুস্বাদু বেগুন। ২০১৬ সালে উদ্ভাবিত এই জাতটি পরীক্ষামূলক ভাবে চাষাবাদ শুরু হয় ২০২০ সালে। ২০২৩ সাল থেকে বানিজ্যিক ভাবে এর চাষাবাদ শুরু হলেও দেবিদ্বারে এই প্রথম কৃষক উসমান সরকার কে দিয়ে আমরা এর চাষ শুরু করি এবং এতে আমরা সফলও হই।
ইতোমধ্যে কুমিল্লাতে অনুষ্ঠিত জেলা ভিত্তিক উৎপাদিত সবজি মেলায় দেবিদ্বারের কৃষক উসমান সরকারের উৎপাদিত লাউ বেগুন প্রথম স্থান অর্জন করেছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব স্যার, অতিরিক্ত পরিচালক ও উপ-পরিচালক মহোদয় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। কৃষকদের উৎসাহিত করতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সফল কৃষকদের পুরষ্কৃত করে থাকে। এ বছর উসমান সরকার পছন্দের তালিকায় শীর্ষে রয়েছেন বলেও জানান তিনি। উন্নত জাতের এই বারি বেগুন-১২ দেবিদ্বারের অন্যান্য এলাকায় চাষাবাদের পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে জানান দেবিদ্বার উপজেলার এই কৃষি কর্মকর্তা।