প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের ম্যানুফ্যাক্চারিং ও সেবা শিল্পখাতে প্রবৃদ্ধির ইতিবাচক ধারা তৈরি হয়েছে। এ ধারা এগিয়ে নিতে সরকার সম্ভব সব ধরনের নীতি সহায়তা ও প্রণোদনা দিয়ে যাচ্ছে। এতে দেশের শিল্পখাত উজ্জীবিত হচ্ছে এবং জ্ঞানভিত্তিক শিল্পায়নের ধারা বেগবান হচ্ছে। ৫ জানুয়ারি ‘রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কার-২০২০’ উপলক্ষ্যে দেয়া বাণীতে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘শিল্প মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ‘রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কার-২০২০’ প্রদান করা হচ্ছে জেনে আমি আনন্দিত। আমি এই পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত শিল্প উদ্যোক্তাদের আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। সারাবিশ্বে চলমান শিল্প বিপ্লবের ধারা শিল্প উৎপাদনে ব্যাপক প্রযুক্তিগত পরিবর্তন এনেছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও রোবটিক টেকনোলজির ব্যবহার শিল্প উৎপাদনের ধারা পাল্টে দিয়েছে এবং পূর্বের তুলনায় উৎপাদনশীলতা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। সারাবিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশেও বেসরকারি উদ্যোক্তাদের শিল্প-কারখানায় অত্যাধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে ম্যানুফ্যাক্চারিং ও সেবা শিল্পখাতে প্রবৃদ্ধির ইতিবাচক ধারা তৈরি হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫৬ সালে তৎকালীন সরকারের শিল্প, বাণিজ্য, শ্রম, দুর্নীতি দমন ও গ্রাম সহায়তা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী থাকাকালীন সর্বপ্রথম এ অঞ্চলে শিল্প প্রসারের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেন। জনগণের ভাগ্য উন্নয়নে শিল্পায়নের গুরুত্ব অনুধাবন করে তিনি ১৯৫৭ সালে ইস্ট পাকিস্তান স্মল এন্ড কটেজ ইন্ডাস্ট্রিজ (ইপসিক) প্রতিষ্ঠা করেন। স্বাধীনতার পরে তিনি তৃণমূল পর্যায়ে শ্রমঘন শিল্পায়নের ধারা বেগবান করে টেকসই ও সুষম অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে দেশকে এগিয়ে নিতে নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে দেশব্যাপী শিল্পখাতের কার্যকর বিকাশে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। পরিবেশবান্ধব ও পরিকল্পিত শিল্পায়নের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে জাতীয় শিল্পনীতি-২০২২ প্রণয়ন করেছি। পাশাপাশি খাতভিত্তিক পৃথক নীতিমালাও তৈরি করা হয়েছে। সরকারের গৃহীত শিল্পনীতি ও কর্মসূচির ফলে দেশে টেকসই ক্ষদ্র্র ও মাঝারি শিল্পসহ বিভিন্ন শিল্পখাত দ্রুত বিকশিত হচ্ছে এবং জাতীয় অর্থনীতিতে শিল্পখাতের অবদান ক্রমেই জোরদার হচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, শিল্প প্রতিষ্ঠানের বিকাশের জন্য সারাদেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছি। ফলে দারিদ্র্যমোচন, কর্মসংস্থান, নারীর ক্ষমতায়নসহ আর্থসামাজিক অগ্রগতির বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশ বিশ্বের অনেক দেশ থেকে এগিয়ে আছে। বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। দেশের মোট জিডিপিতে শিল্পখাতের অবদান ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং ৪০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, ‘শিল্প মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ‘রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কার’ প্রদানও আমাদের সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা ও নীতি সহায়তার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এর মাধ্যমে আমি মনে করি, বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা শিল্পখাতে তাদের সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনী ক্ষমতাকে কাজে লাগাতে অনুপ্রাণিত হবেন। তারা নিজ নিজ শিল্প-কারখানায় নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার ও উৎপাদনশীলতা বাড়াতে মনোযোগী হবেন এবং উৎপাদিত পণ্যের গুনগতমান আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উন্নীত করে রপ্তানি বৃদ্ধিতেও অবদান রাখবেন। ফলে একদিকে যেমন উদ্যোক্তারা ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হবেন, অন্যদিকে জাতীয় অর্থনীতিও সমৃদ্ধ হবে। এর মধ্য দিয়ে দেশে নতুন শিল্প স্থাপন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রয়াস জোরদার হবে বলে আমার বিশ্বাস।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিল্পায়নের চলমান ধারা অব্যাহত রেখে আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে সক্ষম হবো, ইনশাল্লাহ।
তিনি ‘রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কার-২০২০’ প্রদান অনুষ্ঠানের সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।