অর্থনীতিবিদ ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেছেন, পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষার ওপর বাংলাদেশ দাঁড়িয়ে আছে। এত বছর জনগণের কোনো অধিকার ছিল না। আমাদের লক্ষ্য ছিল গণতান্ত্রিক দেশ হওয়ার। কিন্তু আমরা তা করতে পারিনি।
তিনি বলেন, দেশ এখনো অস্থিরতার মধ্যে আছে। কিন্তু সম্ভাবনাও আছে। এছাড়া ২৪-এর অভ্যুত্থানের পর নতুন যাত্রার শুরু থেকে জনগণ হতাশা ও আশঙ্কায় ভুগছে। সংস্কার আগে নাকি নির্বাচন, তা নিয়ে জনগণ শঙ্কায় আছে। যদিও আমরা এখন স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারি।
মঙ্গলবার সিরডাপ মিলনায়তনে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজের (সিজিএস) আয়োজনে অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কারের অগ্রাধিকার ক্ষেত্রগুলো নিয়ে ধারাবাহিক সংলাপের ‘জনপ্রশাসন’বিষয়ক সংলাপে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান এসব কথা বলেন।
সভায় সুজনের সম্পাদক এবং নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার, সিজিএস-এর চেয়ার মুনিরা খান, সাবেক সচিব ইব্রাহিম খান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ, সাবেক সচিব একেএম আব্দুল আওয়াল মজুমদার, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র এবং সাবেক সংসদ-সদস্য মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী, এফবিসিসিআই-এর সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ড. জামাল উদ্দিন আহমেদ, এবি পার্টির সদস্যসচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, সাবেক সচিব সুলতানা আফরোজ, বাংলাদেশ রাইফেলসের সাবেক মহাপরিদর্শক মেজর জেনারেল আ ল ম ফজলুর রহমান, নৈতিক সমাজ বাংলাদেশের সংগঠক মেজর জেনারেল (অব.) আমসা আমিন, বিজিএমইএ-এর সাবেক সহসভাপতি আব্দুল্লাহ হিল রাকিব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, যুগান্তরের সিনিয়র সহকারী সম্পাদক মাহবুব কামাল, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক তাহমিদ আল মুদাসসির ও লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী ইফফাহ আসসারিরাহ উপস্থিত ছিলেন।
সংলাপটি সঞ্চালনা করেন সিজিএস-এর নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান।
ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এ দেশে ব্রিটিশরা জনপ্রশাসন তৈরি করেছে। সেখানে দক্ষ লোক নিয়োগ দেওয়া হতো। তাদের কাজ ছিল ব্রিটিশদের রাজত্ব স্থায়ী করা। তাদের উত্তরাধিকার এখনো আমরা দেখতে পাই। আমাদের দেশে যে উদ্দেশ্য নিয়ে জনপ্রশাসন তৈরি করা হয়েছে, তা এখনো পূরণ করতে পারেনি।
মুনিরা খান বলেন, দুর্নীতি কমাতে হবে। আগে এনআইডি পেতে যে টাকা দিতে হতো, এখন এর চেয়ে বেশি টাকা দিতে হয়। দুর্নীতিকে চ্যালেঞ্জ ধরে নিয়ে এগোনো উচিত। সমাজ, সরকার ও জীবনের সব স্তর থেকে দুর্নীতি বাদ দিতে হবে। এখানে নজর দিতে হবে।
ড. মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ বলেন, আমাদের প্রশাসনে এখনো দালালি স্বভাব আছে। আমাদের মধ্যে ইতিবাচক মানসিকতা থাকতে হবে। এটি কেবল প্রশাসনের মধ্যে থাকবে না। কেন্দ্রীভূতকরণ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে দলীয়করণ করা যাবে না।
একেএম আব্দুল আওয়াল মজুমদার বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রশাসনে মেধাভিত্তিক নিয়োগ বন্ধ হয়ে গেছে। আমাদের পচন সেখান থেকেই শুরু। জিয়াউর রহমানের সময়ে এটি একটু ঠিক করা হলেও এরশাদের সময় তা আবার নষ্ট করে দেয়।
ইব্রাহিম খান বলেন, জনপ্রশাসনের ইতিহাসে অনেক উত্থান-পতন হয়েছে। সময়ের সঙ্গে জনগণের সব জায়গায় প্রশাসন যুক্ত। সরকারি প্রশাসনের কাজগুলো ঠিক করে দিতে হবে। প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। এই দেশে প্রতিটি সরকার প্রশাসনের পরিবর্তনের জন্য কমিশন করেছে; কিন্তু এর প্রয়োগ কখনো হয়নি।
মেজর জেনারেল (অব.) আমসা আমিন বলেন, জনপ্রশাসনের পুনর্গঠন দরকার। কারণ, আমদের ঔপনিবেশিকব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এর বিরুদ্ধে গণ-ঐকমত্য তৈরি করতে হবে। সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত হলো জনপ্রশাসন, এরপর রাজনীতিকরা।
মাহবুব কামাল বলেন, একজন আমলা একটি সই দিয়ে যেই পরিমাণ সম্পদের মালিক হতে পারেন, একজন কৃষকের চৌদ্দ পূর্বপুরুষ একটি টিপসই দিলেও এত সম্পদের মালিক হতে পারবে না। আমলার সীমাবদ্ধতা আছে, কারণ সে মানুষ। কিন্তু আমলাতন্ত্রের সীমাবদ্ধতা নেই।
তাহমিদ আল মুদাসসির বলেন, যেই স্পিরিট নিয়ে জুলাই অভ্যুত্থান হয়েছে, তা আমরা ধরে রাখতে পারিনি। এখানে সুযোগ ছিল অভ্যুত্থানকে বিপ্লবে পরিণত করার। সচিব ও জনপ্রশাসনদের জিজ্ঞাসা করা দরকার স্বৈরাচারকে এত বছর ক্ষমতায় কেন রেখেছেন তারা। জনপ্রশাসনে যারা ফ্যাসিবাদীকে ক্ষমতায় রাখার জন্য সাহায্য করেছেন, তাদের জবাবদিহির আওতায় আনা, যেন ভবিষ্যতে ফ্যাসিবাদ আর তৈরি না হয়।