Saturday , 20 April 2024
শিরোনাম

সব ব্যাংকে ডলার মিলবে এক দরে

মুদ্রাবাজারে অস্থিরতা কমাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্ত মেনে বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউস থেকে ডলার কেনাবেচার অভিন্ন দর ঘোষণা করেছে বিদেশি মুদ্রা লেনদেনকারী ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) এবং ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি)।

সোমবার থেকে দেশে আসা রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে ডলারের বিনিময় হার হবে সর্বোচ্চ ১০৮ টাকা। অর্থাৎ কোনো প্রবাসী ১ ডলার দেশে পাঠালে যার নামে পাঠাবেন তিনি ১০৮ টাকা পাবেন। এর সঙ্গে সরকারের প্রণোদনার আরও ২ দশমিক ৫০ শতাংশ যোগ হবে।

রপ্তানি আয়ের ক্ষেত্রে প্রতি ডলারে সর্বোচ্চ ৯৯ টাকা পাবেন রপ্তানিকারকরা। আর আমদানির ঋণপত্র বা এলসি খোলার ক্ষেত্রে বিনিময় হার নির্ধারণ করা হবে রেমিট্যান্স ও রপ্তানির বিনিময় হারের গড় করে।

গতকাল রোববার এবিবি নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর বাফেদার চেয়ারম্যান ও সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফজাল করিম ডলারের এই বিনিময় হার ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, এই বিনিময় হার সোমবার থেকে কার্যকর হবে এবং আন্তর্জাতিক বাজারের পরিস্থিতি অনুযায়ী সময়ে সময়ে পরিবর্তন আনা হতে পারে।

এবিবির চেয়ারম্যান সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে জানানো হয়েছে যে, আগামী দিন থেকে দেশের ব্যাংকিং খাতে এক্সচেঞ্জ রেট নির্ধারণ করবে বাফেদা। তবে মার্কেটে ডলারের দর ধরে রাখার জন্য অবশ্যই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি মনিটরিং দল ও হস্তক্ষেপও থাকবে। তিনি আরও বলেন, আগামী পাঁচ কর্মদিবসের পরে ডলারের দর পুনর্নির্ধারণ করা হবে।

তিনি আরও বলেন, গত কয়েক মাস ধরে ব্যাংকগুলো প্রবাসী আয় সংগ্রহ করছে ১১২-১১৪ টাকা পর্যন্ত। ফলে এই সুযোগে গত কয়েক মাসে অতি মুনাফার দিকে ঝোঁকে ব্যাংকগুলো। ফলে ডলার বাজার অস্থির হয়ে ওঠে। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংক নানা ধরনের পদক্ষেপ নিলেও কার্যকর কোনো ভূমিকা আসেনি। গত সপ্তাতেও বাংলাদেশ ব্যাংকে এবিবি ও বাফেদার মধ্যে বৈঠক হলেও সেদিন কোনো রকমের সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি।

সরবরাহে টান পড়ে চাহিদা বাড়লে। গত বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে ডলারের দর বাড়তে থাকে। আর চলতি বছরের মার্চের পর থেকে সংকট তীব্র হলে ক্রমে আকাশচুম্বী হতে থাকে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর এই মুদ্রার দর। এরপর অস্থিরতা কমাতে নীতি সিদ্ধান্তসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

ধারাবাহিক এসব উদ্যোগের অংশ হিসেবে গত ২৬ মে বাংলাদেশ ব্যাংক বৈঠক করে বাফেদা ও ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এবিবির সঙ্গে। ওই বৈঠকে নির্দিষ্ট একটি ‘সিলিংয়ের’ মধ্যে আন্তব্যাংকে লেনদেনে ডলারের একক দর নির্ধারণের সিদ্ধান্তে সম্মতি দিয়েছিল বাফেদা।

বাংলাদেশ ব্যাংক এর আগে আন্তব্যাংক লেনদেনে ডলারের দর নির্ধারণের বিষয়টি বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল। নিয়মিত টাকার মান কমানোর পাশাপাশি চাহিদা মেটাতে বড় অঙ্কের ডলারও বিক্রি করে আসছিল।

তখনই আলোচনা শুরু হয়েছিল একক দর নির্ধারণ করবে বাফেদা। ব্যাংকগুলো নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে ডলারের বিনিময় হার কেমন হবে সেটির প্রস্তাব দেবে। আর বাংলাদেশ ব্যাংক সেই দর বাস্তবায়নে তদারকি করবে।

ওই বৈঠকের পর মে মাসের শেষ সপ্তাহে বাফেদা একটি প্রস্তাবও জমা দেয়। সে অনুযায়ী কিছু সিদ্ধান্ত এলেও পরের কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়ে।

এর মধ্যে ডলারের সংকট আরও বাড়লে এবং আন্তব্যাংকে কোনো নির্দিষ্ট দর না থাকায় বাড়তি মুনাফা করতে কিছু ব্যাংক ডলার লেনদেন একেবারে কমিয়ে দেয়। এতে আন্তব্যাংক লেনদেন অনেকটাই স্থবির হয়ে পড়ে।

সংকটে থাকা ব্যাংকগুলো দেশের অন্য ব্যাংকে ডলার না পেয়ে আমদানি দায় মেটাতে বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউস থেকে বা অন্য ব্যাংকের কাছ থেকে উচ্চ দরে ডলার কিনতে বাধ্য হয়। কখনো কখনো গ্রাহককেও ডলার সংগ্রহ করতে হয়।

এ সময়ে ব্যাংকে নগদ ডলারের দর ওঠে ১০৯ টাকা, আর খোলা বাজারে এক পর্যায়ে তা রেকর্ড ১২০ টাকায় ওঠে।

এমন প্রেক্ষাপটে বাফেদার কার্যক্রমে গতি না আসায় আবারও সংগঠনটির সঙ্গে বৈঠকে বসেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা। গত ১৪ আগস্টের বৈঠকে ব্যাংকের নগদ ডলার কেনা ও বেচার ব্যবধান সর্বোচ্চ এক টাকা করার সিদ্ধান্ত হয়।

বৈঠকে আন্তব্যাংক লেনদেন বাজার সক্রিয় করতে আবারও সংগঠনটি প্রস্তাব দেবে বলে জানায়। এরপর ৮ সেপ্টেম্বর এবিবি ও বাফেদার প্রতিনিধিরা বাংলাদেশ ব্যাংকে গিয়ে আবারও বৈঠক করেন।

আফজাল করিম সেদিন বলেছিলেন, ডলারের দাম নির্ধারণ করতে রোববার পর্যন্ত সময় নিয়েছেন তারা। এর ধারাবাহিকতায় গতকাল সেই দর বেঁধে দেওয়ার ঘোষণা এল।

চাহিদা মেটাতে এক মাসের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ ব্যাংক ৯৫ টাকা দরে ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করছে। এটাকে আন্তব্যাংক রেট বা ব্যাংক রেট বলা হয়ে থাকে। তবে বেশ কিছু দিন ধরে এই রেট কার্যত অচল। কেননা, ব্যাংকগুলো এই দরের চেয়ে ৯ থেকে ১১ টাকা বেশি দামে ডলার বিক্রি করছে। আমদানি ঋণপত্র খুলতে নিচ্ছে আরও বেশি। রেমিট্যান্সও সংগ্রহ করছে বেশি দামে।

বাংলাদেশ ব্যাংক এর আগে আন্তব্যাংক লেনদেনে ডলারের দর নির্ধারণের বিষয়টি বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল। নিয়মিত টাকার মান কমানোর পাশাপাশি চাহিদা মেটাতে বড় অঙ্কের ডলারও বিক্রি করে আসছিল।

এরপর আলোচনা শুরু হয় একক দর নির্ধারণ আর তা করবে বাফেদা। ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে একক ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণ করবে বাফেদা আর সেটা মনিটরিং করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ওই বৈঠকের পর মে মাসের শেষ সপ্তাহে বাফেদা একটি প্রস্তাবও জমা দেয়। সে অনুযায়ী কিছু সিদ্ধান্ত এলেও পরে বাস্তবায়ন কর্যক্রম থমকে যায়।

এদিকে চলতি বছরের মার্চ থেকে ডলারের সংকট বাড়তে থাকায় এর সুযোগে অধিকাংশ ব্যাংক অতিরিক্ত প্রফিট করা শুরু করে। তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ডলার কিনে অতিরিক্ত দামে ব্যবসায়ীর আমদানির জন্য ডলার বিক্রি করে। তবে ব্যাংকগুলো তাদের ডলার বিক্রির স্প্রেড রেট তথ্য গোপন করে। এ ছাড়া ব্যাংকের নেট ওপেন পজিশন (এনওপি) তথ্য গোপন করে।

এরপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শন বিভাগ ১৬টি ব্যাংকের ফরেক্স মার্কেটের চিত্র পর্যালোচনা করে। এর মধ্যে ডলার বিক্রিতে অতিরিক্ত মুনাফা করায় ১৩টি ব্যাংককে শোকজ করা হয়েছে। এ ছাড়া ছয়টি ব্যাংকের ট্রেজারিকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে ছয়টি ব্যাংকের এমডিকে ব্যাখ্যা দিতে তলব করা হয়েছে।

তবে সংকটে থাকা ব্যাংকগুলো দেশের অন্য ব্যাংকে ডলার না পেয়ে আমদানি দায় মেটাতে বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউসের মাধ্যমে উচ্চ দরে ডলার কিনতে হচ্ছে। এই সময়ে রেমিট্যান্স দাম বেড়ে ১১৪ টাকায় দাঁড়ায়। ব্যবসায়ীদের এলসি ওপেন করে ১১২ টাকায়। এ ছাড়া জুনে খোলাবাজারে ডলারে দাম বেড়ে দাঁড়ায় ১২১ টাকায়।

এমন প্রেক্ষাপটে বাফেদার সঙ্গে ফের বৈঠকে বসে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত ১৪ আগস্টের বৈঠকে ব্যাংকের নগদ ডলার কেনা ও বেচার ব্যবধান সর্বোচ্চ এক টাকা করার সিদ্ধান্ত হয়।

বৈঠকে আন্তব্যাংক লেনদেন বাজার সক্রিয় করতে আবারও সংগঠনটি প্রস্তাব দেবে বলে জানায়। এরপর ৮ সেপ্টেম্বর এবিবি ও বাফেদার প্রতিনিধিরা বাংলাদেশ ব্যাংকে গিয়ে আবারও বৈঠক করেন। তারপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর মার্কেট পর্যালোচনা করে ডলারের একক রেট নির্ধারণের জন্য এবিবি ও বাফেদাকে ক্ষমতা দেয়। তার পরবর্তীতে আজকের বাফেদা আজকে ডলারের একক রেট নির্ধারণ করে।

Check Also

অনিবন্ধিত অনলাইন পোর্টাল বন্ধ করে দেয়া হবে: তথ্য প্রতিমন্ত্রী

তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত জানিয়েছেন, দেশে প্রতিষ্ঠিত গণমাধ্যমের অনলাইন, অনলাইনের জন্য নিবন্ধিত …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

x