নিজস্ব প্রতিবেদক: মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী মো. আব্দুর রহমান সরকারি কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেছেন, সরকার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতায় বিশ্বাসী। সুতরাং সাংবাদিকদের তথ্য দিতে সমস্যা থাকার কথা না। তবে সাংবাদিক ভাইদের মনে রাখতে হবে কাউকে অসম্মান করা, খাটো করা কিংবা তুচ্ছজ্ঞান করার মধ্যে কোনো গৌরব নেই। আমরা সবাই দেশ এবং মানুষের কল্যাণে কাজ করছি। সুতরাং কেউ কারো প্রতিপক্ষ নই। বরং পরস্পর সহযোগী।
রোববার সিরডাপ মিলানায়তনে বাংলাদেশের প্রাণিসম্পদ খাতের সমস্যা ও সম্ভাবনা বিষয়ক প্রশিক্ষক কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
পরিপ্রেক্ষিত সম্পাদক সৈয়দ বোরহান কবিরের সঞ্চলনায় এবং প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) মো. এমদাদুল হক তালুকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে সাংবাদিক নেতা মনজুরুল আহসান বুলবুল, প্রণব সাহা, সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, সন্তোস শর্মা ও ড. গোলাম রব্বানীসহ প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তারা বক্তব্য দেন।
বক্তারা বলেন, দেশের প্রাণিসম্পদ খাতের উন্নয়নে বিশ্বব্যাংক ও সরকার যৌথ উদ্যোগে ২০১৯ সালে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের ৪৭ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় দেশের গরু, ছাগল, মহিষ, হাঁস মুরগিসহ প্রাণিসম্পদ খাতের যাবতীয় সমস্যা সমাধানের বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দেশের প্রান্তিক খামারি থেকে বড় বড় খামারি পর্যন্ত সব খামারির ডেটাবেজ তৈরি, তাদের প্রশিক্ষণ প্রদান, উৎপাদিত পণ্যের বাজাজাতকরণ, সমবায়ভিত্তিক সঞ্চয়ের মাধ্যমে মূলধন সৃষ্টিতে উৎসাহ প্রদান, পশু চিকিৎসা, পশুখাদ্য, পশুশালার মডেল, খড়-কুটার জোগান, পশু না বাড়িয়ে উৎপাদন বাড়ানো ও আধুনিক জবাইখানার মডেল তৈরি করে বাস্তবভিত্তিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
তারা আরও বলেন, হাঁস ও মুরগি লালন পালনের প্রশিক্ষণ, রোগবালাইয়ের চিকিৎসা, হাঁস ও মুরগির খাবার, লালন পালন পদ্ধতি, ডিমের গুণগতমান বিষয়ে ধারণা দেওয়া হয়। ডিম, দুধ ও মুরগির মাংস দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের পুষ্টির জোগান দিচ্ছে। দেশে যে পরিমাণ দুধ উৎপাদন হয় ঠিক তার সমপরিমাণ দুধ বিদেশ থেকে ডলার খরচ করে আমদানি করতে হয়। আবার বিদেশ থেকে আনা দুধের মান ঠিক আছে কিনা তা অজানা থেকে যাচ্ছে। ফলে দেশের প্রাণিসম্পদ খাতকে সমৃদ্ধ করা গেলে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে।
দেশ এখন পশু সম্পদে স্বয়ংসম্পূর্ণ। কুরবানির পশু এখন আর আমদানি করার দরকার হয় না। চোরাই পথে পশু আনতে গিয়ে সীমান্তে অনেককে প্রাণ দিতে হয়েছে। পশু সম্পদে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ায় সীমান্ত হত্যা আগের চেয়ে কমেছে বলে জানান বক্তারা।
সমাপনী অনুষ্ঠানে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী আব্দুর রহমান বলেন, প্রাণিসম্পদের অবদান জাতিকে জানাতে গণমাধ্যমের বিরাট ভূমিকা রয়েছে। গণমাধ্যম সঠিক তথ্য তুলে ধরলে দেশবাসীর মধ্যে সচেতনতা গড়ে উঠবে। সেক্ষেত্রে সাংবাদিকদের তথ্য দিয়ে সহায়তা করা উচিত। আবার ভুলভাল প্রতিবেদন ছাপা হলে জনমনে বিরূপ ধারণা তৈরি হয়। সেক্ষেত্রে গণমাধ্যম দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবে বলে আমি বিশ্বাস করি। মনে রাখতে হবে কাউকে খাটো করার মধ্যে কোনো আনন্দ নেই। প্রাণিসম্পদ খাত নিয়ে কাজ করার জন্য ২৫ জন গণমাধ্যমকর্মীকে ফেলোশিপ দেওয়া হয়। ফেলোরা আগামী তিন মাসে তিনটি প্রতিবেদন তৈরি করবেন। এজন্য তাদের সম্মানী ও পুরস্কার দেওয়া হবে।