আব্দুর রহিম, সাতক্ষীরা জেলা প্রতিনিধি :
কৃষি ক্ষেতের কুল বাগানে সেঁচের ড্রেন থেকে উপুড় করা অবস্থায় কলারোয়া গার্লস পাইলট হাইস্কুলের অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া সনচিতা হোসেন সেজ্যোতি (১৩) নামের ছাত্রীর মৃতদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।সোমবার (২৮ মার্চ) সকাল সাড়ে ৭টার দিকে সাতক্ষীরা কলারোয়ার জালালাবাদ ইউনিয়নের মাষ্টার পাড়ার মাঠে আলাউদ্দিন সরদারের কুল বাগানের ড্রেনে মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন কলারোয়া থানা অফিসার ইনচার্জ ওসি নাসির উদ্দীন মৃধা।
নিহত স্কুল ছাত্রী সানচিতা হোসেন সেজ্যোতি জালালাবাদের মাষ্টার পাড়ার কৃষক সোহরাব হোসেন পলাশের দ্বিতীয় স্ত্রী লায়লা পারভীনের মেয়ে ও কলারোয়া গার্লস হাইস্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী।মেয়ের বাবা সোহরাব হোসেন পলাশ বলেন, আফিল কোম্পানিতে চাকুরির সুবাদে যশোর বারান্দী পাড়ায় ১৩ বছর আগে জন্মগ্রহণ করে সানচিতা হোসেন সেজ্যোতি (১৩)। সে দ্বিতীয় স্ত্রীর মেয়ে । গত ১ বছর আগে প্রতিবেশী আলতাফ হোসেনের ছেলে আব্দুর রহমানের সাথে সক্ষতা গড়ে ওঠে।
আব্দুর রহমান কলারোয়া সরকারি কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। তার সাথে ধীরে ধীরে গভীর সম্পর্কে রূপ নেয়। এমনকি গত ছয় মাস আগে মেয়েকে ফুসলিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায় আব্দুর রহমান নামের ওই যুবক। স্থানীয় ইউপি সদস্য ও থানা পুলিশের সহযোগিতায় মীমাংসা করা হলেও তার রেশ কাটেনি এর জের ধরেই পরিকল্পিত ভাবে এই হত্যা হতে পারে বলে তিনি ধারণা করছেন।
তিনি আরও বলেন, গতকাল এশার নামাজের পর থেকে যখন মেয়েকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলো না। এক পর্যায়ে রাত দেড়টার দিকে থানার শরণাপন্ন হয়ে মেয়ে নিখোঁজের ঘটনায় একটি ডায়েরি করে বাড়ি ফেরেন৷ ভোরে খবর পান মেয়ের মৃতদেহ পার্শ্ববর্তী খেতের ড্রেনে পড়ে আছেন। তবে এ হত্যার সাথে যেই জড়িত থাকুক তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন তিনি।স্থানীয় ইউপি সদস্য মশিয়ার রহমান বলেন, গত ছয় মাস আগে আব্দুর রহমান নামের এক যুবকের সাথে এই মেয়ের ভালোবাসা সম্পর্কের জেরে পরিবারের থানা পুলিশের মাধ্যমে এটি মীমাংসা হয়। আজ ড্রেনে উপুড় করা অবস্থায় মেয়ের মৃতদেহ পাওয়া গেছে এমন সংবাদ পেয়ে গ্রাম পুলিশের মাধ্যমে থানা পুলিশকে জানালে ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে তদন্ত করছে।
মেয়ের দাদা আবুল হোসেন বলেন, নাতনি সবথেকে সুন্দরী মেয়ে ছিল। তাকে অনেক ছেলে যেমন পছন্দ করতো তেমনি বিরক্তও করতো। তবে সেজ্যোতিকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করা হয়েছে। এই হত্যার বিষয়টি যাতে দিনে দিনে চোখের আড়াল হয়ে না যায় প্রকৃত হত্যাকারীরা সকলের সামনে আসে এবং হত্যাকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত হয় এজন্য তিনি থানায় মামলা করবেন বলে জানান ও উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা চেয়েছেন।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়রা বলেন, একাধিক বিবাহ করেছেন মেয়ের বাবা পলাশ। নতুন করে তার আরও একটি বিয়ের গুঞ্জন উঠেছে । দ্বিতীয় স্ত্রী লায়লা পারভীনের মেয়ে আজ পরিকল্পিত ভাবে হত্যার শিকার হয়েছে। মেয়ের সাথে প্রতিবেশী এক ছেলের যে সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল তা এলাকাবাসী সবাই জানে। তারা একে অপরকে ভালোবাসতো তার বিবাহ করতে চেয়েছিল। একবার পালিয়েও গিয়েছিল। কিন্তু পরিবার তাদের সম্পর্ক মেনে নেইনি। তাই বলে কেন সেই ছেলে এই মেয়েকে হত্যা করবে? এই হত্যা যেই করুক অনেক বড় রহস্য রয়েছে এই হত্যার পিছনে। পারিবারিক কলহ নাকি সম্পর্কের টানাপোড়নে হত্যার শিকার অল্প বয়সী স্কুল পড়ুয়া মেয়ে সেজ্যোতি। যেই হত্যা করুক তাকে আইনের আওতায় এনে ফাঁসির দাবি করেছেন এলাকাবাসীরা।
সেই আব্দুর রহমানের বাবা আলতাফ হোসেন বলেন, আমার ছেলে কখনোই হত্যা করতে পারে না। অন্য কেহ হত্যা করে দোষ আমার ছেলের ঘাড়ে চাপাচ্ছে। পুলিশ তদন্ত করে প্রকৃত রহস্য উদঘাটন করবে এবং যেই জড়িত এ হত্যার পেছনে সে অবশ্যই শাস্তি পাবে।কলারোয়া থানা অফিসার ইনচার্জ ওসি নাসির উদ্দীন মৃধা বলেন, গতকাল রাত দেড়টার দিকে মেয়ের বাবা থানায় রাত্র দেড়টার দিকে একটি নিখোঁজ ডায়েরি করেন। ভোর বেলায় জালালাবাদ এলাকার স্থানীয় গ্রাম পুলিশ জানায় মাঠের কৃষি খেতের ড্রেনে একটি মৃতদেহ পাওয়া গেছে। তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে পুলিশের টিম গিয়ে তদন্তে কাজ করছে । প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে অন্য কোথাও শ্বাসরোধ করে মেয়েকে হত্যা করা হয় পরে ফুল বাগানের সেঁচের পানি যাতায়াতের ড্রেনের মধ্যে উপুর করে ফেলে রাখা হয়। ঘটনাস্থল থেকে সাদা ও নেবিব্লু রং এর দুটি ওড়না এবং নতুন লাল ধরনের জুতা উদ্ধার করা হয়েছে। শ্বাসরোধ করে হত্যার গলায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।প্রাথমিক তদন্ত সূত্রে তিনি আরও বলেন, প্রতিবেশী কলেজ পড়ুয়া যুবক আব্দুর রহমানের নামের এক যুবকের সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। চারটা থেকে পাঁচটা বিশেষ ক্লু নিয়ে তদন্তে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে এই হত্যার পেছনে যে বা যারা জড়িত রয়েছে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে।