সাকিব আল হাসানের দুর্দান্ত ফিফটি আর তানজিদ তামিমের ভালো ব্যাটে ভর করে ১৫৯ রানের চ্যালেঞ্জিং পুঁজি ছুড়ে দিয়েছিল নেদারল্যান্ডের সামনে। এই লড়াকু পুঁজিতে জয় আগেই অনেকটা সহজ করে ফেলেছিল টাইগাররা। তারপর বোলারদের নৈপুণ্যে ডাচদের হারিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার এইটে এক পা দিয়ে রাখলো বাংলাদেশ। ২৫ রানের জয়ে সুপার এইটের পথে এক ধাপ এগিয়ে গেল বাংলাদেশ।
বিশ্বকাপ শুরুর আগে থেকেই দুই ম্যাচের দিকে আলাদা করে নজর ছিল বাংলাদেশ দলের। সেটির প্রথমটি এই নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে। গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ব্যাটিং ফর্মটা খুঁজে পেলেন সাকিব। রান তাড়ায় মাঝে বেশ ভালো অবস্থানে ছিল নেদারল্যান্ডস। ফেবারিটই ছিল তারা। প্রথম ২ ওভারে ১৯ রান দেওয়া রিশাদকে এরপর তৃতীয় ওভারে আনেন নাজমুল। তাতে জোড়া আঘাতে কার্যত ম্যাচ ঘুরিয়ে দেন রিশাদ। এরপর বাংলাদেশ পেসারদের সামলাতে পারেননি ডাচ ব্যাটিংয়ের টেল-এন্ডাররা।
৩ ম্যাচে ২ জয় বাংলাদেশের। আগামী ১৭ জুন সকালে নেপালকে হারালে নিশ্চিত হবে সুপার এইট। সে ম্যাচে হারলেও থাকবে সম্ভাবনা।
বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) সেন্ট ভিনসেন্টের আর্নস ভ্যালে ক্রিকেট স্টেডিয়ামে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ১৫৯ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। জবাবে নির্ধারিত ২০ ওভারে ১৩৪ রানের বেশি নিতে পারেনি ডাচরা। এতে ২৫ রানের পরাজয়ে অলিখিতভাবে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় ঘণ্টা বাজলো তাদের।
লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দেখেশুনে খেলতে থাকে ডাচরা। তবে টাইগার দলপতি শান্তর কৌশলে ইনিংসের পঞ্চম ওভারেই উইকেট হারায় তারা। নিজের দ্বিতীয় ওভারে এসেই ব্রেকথ্রু এনে দেন তাসকিন। তার বলে জায়গা বানিয়ে খেলতে গিয়ে কাভারে হৃদয়ের হাতে ক্যাচ তুলে দেন লেভিট।
তাসকিনের পর বল হাতে সাফল্য এনে দেন তানজিম। তার বলে টেনে খেলতে চেয়েছিলেন ম্যাক্স ও’ডাউড। তবে দারুণ রিফ্লেক্সে ফিরতি ক্যাচ নেন তানজিম। এতে পাওয়ারপ্লের মধ্যেই ২ উইকেট হারায় ডাচরা।
ইনিংসের সপ্তম ওভারেই দলীয় ৫০ পূর্ণ করে ডাচরা। দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন বিক্রমজিৎ সিং ও সিব্র্যান্ড এঙ্গেলব্রেখট। এরপর তাদের ৩৭ রানের জুটি ভাঙেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তার বলে ১৬ বলে ২৬ রান করে প্যাভিলিয়নে ফেরেন বিক্রম।
এরপর নিয়মিত বাইন্ডারি আর দুর্দান্ত জুটিতে টাইগারদের হতাশা বাড়াতে থাকেন এডওয়ার্ডস ও এঙ্গেলব্রেখট। তবে এবার হুমকি হয়ে দাঁড়ান রিশাদ আহমেদ। তার অফ স্টাম্পের বাইরে টার্ন করা বলে লাইন মিস করেন এঙ্গেলব্রেখট। লেগ খেলতে গিয়ে আউটসাইড-এজড ক্যাচ তুলে দেন। কাভারে সহজ ক্যাচ নেন তানজিম। এতে এডওয়ার্ডসের সঙ্গে ভাঙে তার ৩১ বলে ৪২ রানের জুটি। ২২ বলে ৩৩ রানে ফেরেন এঙ্গেলব্রেখট।
এক বল ব্যবধানেই বাস ডি লিডিকে ফেরান এই স্পিনার। রিশাদের টার্নে পরাস্ত হন ডি লিডি। লিটনের দুর্দান্ত স্টাম্পিংয়ে রানের খাতা খোলার আগেই ফেরেন এই ব্যাটার।
রিশাদের জোড়া আঘাতের পর সাকিবের ওভারে মাত্র ৫ রান নিয়েছিল ডাচরা। এরপর ডেথ ওভারে এসে ডাচদের ভোগান মোস্তাফিজ। তার বলে আড়াআড়ি খেলতে গিয়ে থার্ডম্যানে ধরা পড়েন স্কট এডওয়ার্ডস। এই ওভার থেকে আসে মাত্র ১ রান।
শেষ ১২ বলে ৩৬ রান দরকার ছিল ডাচদের। তবে ৯ রানের বেশি নিতে পারেননি তারা। এতে ২৫ রানের জয়ে সুপার এইটে এক পা দিয়ে রাখলো বাংলাদেশ।
এর আগে, টস হেরে তামিমের সঙ্গে ইনিংসের গোড়াপত্তনে নামেন নাজমুল হোসেন শান্ত। ওপেনিংয়ে নেমে ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই সাজঘরে ফেরেন টাইগার দলপতি।
এরপর শান্তর পথেই হাঁটেন লিটন। তিনে নেমে ২ বলে ১ রানে সাজঘরে ফেরেন উইকেটকিপার এই ব্যাটার। ইনিংসের চতুর্থ ওভারের প্রথম বলে আরিয়ানকে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে ফাঁদে পড়েন। মিডউইকেটে ছুটে গিয়ে ড্রাইভে দুর্দান্ত এক ক্যাচে তাকে প্যাভিলিয়নের পথ দেখান এঙ্গেলব্রেখট।
জোড়া উইকেট হারিয়ে বেশ চাপে পড়েছিল বাংলাদেশ। সেখান থেকে দলকে পথ দেখান অভিজ্ঞ সাকিব আল হাসান এবং তরুণ ওপেনার তানজিদ। এই দুই ব্যাটারের দাপুটে ব্যাটিংয়ে পাওয়ার প্লেতে ৫৪ রান তুলে লাল-সবুজেরা।
তবে ভালো শুরুর পরই প্যাভিলিয়নে ফেরেন তানজিদ। ফন মিকেরেনের শর্ট বলে পুল করতে গিয়ে আশাহত হন তানজিদ। বেশি দূর এগোয়নি তার পুল। মিডউইকেট সীমানার বেশ আগেই ডি লিডির মুঠোবন্দি হন এই ওপেনার। ২৬ বলে ৩৫ রানে থামলে ভাঙে সাকিবের সঙ্গে তার ৩২ বলে ৪৮ রানের জুটি।
এরপর ২৭ বল পর বাউন্ডারি হাঁকিয়ে চাপ কমানোর চেষ্টা করেন সাকিব। তবে অন্যপ্রান্তে রানের গতি বাড়াতে গিয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন হৃদয়। টিম প্রিঙ্গলের আন্ডার-কাটে জায়গা বানিয়ে খেলতে চেয়েছিলেন। তবে ব্যাট লেগে স্টাম্পে আঘাত হানে বল। এতে ১৫ বলে ৯ রান করে প্যাভিলিয়নে ফেরেন হৃদয়।
এরপর সাকিবকে সঙ্গে নিয়ে ইনিংস মেরামতের দায়িত্ব নেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। দায়িত্বশীল এক ইনিংসে দীর্ঘদিনের রানখরা কাটান সাকিবও। তবে সাকিবের ফিফটির পরই প্যাভিলিয়নে ফেরেন রিয়াদ। ফেরার আগে খেলেন ২১ বলে ২৫ রানের ইনিংস।
শেষ পর্যন্ত সাকিবের ৪৬ বলে অপরাজিত ৬৪ এবং জাকের আলির ৭ বলে ১৪ রানের ক্যামিওতে ১৫৯ রানের পুঁজি পায় বাংলাদেশ।