হুমকি-ক্রোধ ভুলে সৌদি আরব সফর করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ক্ষমতা নেওয়ার ১৮ মাসের মাথায় প্রেসিডেন্ট বাইডেন তার প্রথম মধ্যপ্রাচ্য সফরে ইসরায়েল হয়ে শুক্রবার সৌদি আরব গেছেন। জেদ্দায় গিয়ে আরব সম্মেলনে যোগ দেন। পারস্য উপসাগরীয় ছয় দেশ এবং মিশর, জর্ডান ও ইরাকের প্রতিনিধিরা অংশ নেন এই সম্মেলনে।
আরব সম্মেলনে যোগ দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের মিত্রদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছিলেন বাইডেন। তবে ইসরায়েলকে নিয়ে পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলের একটি নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা কিংবা দ্রুত তেল উৎপাদন বাড়ানোর বিষয়ে সৌদি আরবের প্রতিশ্রুতি আদায়ে ব্যর্থ হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাইডেন।
শনিবার আরব নেতাদের উদ্দেশে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ‘আপনাদের সকলকে সঙ্গে নিয়ে এ অঞ্চলের জন্য একটি ইতিবাচক ভবিষ্যত বিনির্মাণে যুক্তরাষ্ট্র বিনিয়োগ করে করেছে… যুক্তরাষ্ট্র অন্য কোথাও যাচ্ছে না।”
আরব সম্মেলনে বাইডেন তার বক্তৃতায় মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততার দর্শন ও কৌশলগুলো তুলে ধরেন। তবে সম্মেলনের ঘোষণাপত্রে অনেক বিষয় স্পষ্ট করা হয়নি।
রয়টার্স লিখেছে, ইরানের ‘হুমকি’ মোকাবেলায় ইসরায়েলকে সঙ্গে নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে একটি আঞ্চলিক নিরাপত্তা জোট গড়তে এবারের আরব সম্মেলনে একটি রূপরেখা তৈরি করা সম্ভব হবে বলে আশা করছিল যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু তাদের সেই উদ্যোগে পানি ঢেলে দিয়েছে আরবে ওয়াশিংটনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মিত্র সৌদি আরব।
এর আগে সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে সাক্ষাতে বাইডেন ওয়াশিংটন পোস্টের সাংবাদিক খাশুগজি হত্যাকাণ্ডের মত অত্যন্ত স্পর্শকাতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয় তুলে ধরেন। বৈঠকে ক্রাউন প্রিন্সের কাছ থেকেও পাল্টা সমালোচনা পেয়েছেন তিনি।
মার্কিন প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছেন, “আমরা বিশ্বাস করি, এ অঞ্চলে যতটা সম্ভব সক্ষমতা বাড়ানোর অনেক গুরুত্ব রয়েছে। ইসরায়েলের উল্লেখযোগ্য বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা সক্ষমতা রয়েছে, যেমনটি তাদের প্রয়োজন। আমরা আরব দেশগুলোর সঙ্গেও দ্বিপক্ষীয়ভাবে বিষয়গুলো আলোচনা করছি।
রয়টার্স লিখেছে, একটি সংযুক্ত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার পরিকল্পনা আরব দেশগুলোকে গেলানো কঠিন, যাদের সঙ্গে ইসরায়েলের কোনো সম্পর্ক নেই। ইরানবিরোধী হিসেবে চিহ্নিত হয়, এমন কোনো জোটেরও অংশ হতে চাইবে না তারা।
সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান আল সৌদ বলেছেন, তিনি উপসাগরীয়-ইসরায়েল প্রতিরক্ষা জোট নিয়ে কোনো আলোচনার বিষয়ে অবগত নন এবং এ ধরনের আলোচনার সঙ্গে সৌদি আরব ছিল না।
এছাড়া সকল দেশের বিমানের জন্য রিয়াদের আকাশ উন্মুক্ত রাখার সিদ্ধান্তের সঙ্গে ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের কোনো সম্পর্ক নেই এবং এটি ভবিষ্যতে ইসরায়েলের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোর কোনো ইঙ্গিতও ছিল না।
সৌদি আরব আগাগোড়া মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার প্রধান একটি মিত্র দেশ। অনেক দিন ধরেই আমেরিকার নতুন যে কোন প্রেসিডেন্ট ক্ষমতা নিয়ে প্রথম যেসব দেশে যান তার একটি সৌদি আরব।
ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধে সৌদি আরবের ভূমিকা নিয়ে আমেরিকার বহু মানুষের মত জো বাইডেনও ক্ষুব্ধ। এরপর সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগজির হত্যাকাণ্ডে তিনি যুবরাজ সালমান এবং সৌদি রাজপরিবারের ওপর এতটাই নাখোশ হয়েছিলেন যে নির্বাচনী প্রচারণায় ঘোষণা দেন ক্ষমতায় গেলে তিনি এই সৌদি শাসকদের ‘একঘরে’ করে ছাড়বেন।
আমেরিকা দশকের পর দশক ধরে প্রধানত জ্বালানি তেলের স্বার্থে মূল্যবোধ বিসর্জন দিয়ে সৌদি রাজপরিবারের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখেছে। কিন্তু মি. বাইডেন ক্ষমতায় এসে বলতে শুরু করেন বাইরের যে কোনো দেশের সাথে তার সরকারের সম্পর্কের ভিত্তি হবে মানবাধিকার।
এরপর নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় গিয়েও তিনি সৌদি যুবরাজ সালমানের সাথে দেখা করতে বা কথা বলতে অস্বীকার করেন। সৌদি যুবরাজ তার সাথে কথা বলতে কয়েকবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। সৌদি আরবের কাছে নূতন অস্ত্র বিক্রি স্থগিত করেন মি. বাইডেন।
২০১৮ সালে সৌদি এজেন্টেদের হাতে সাংবাদিক খাশুগজি নিহত হওয়ার ঘটনায় বিশ্বমঞ্চে সৌদি আরবকে একঘরে করবেন তিনি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিশ্বের শীর্ষ তেল রপ্তানিকারক দেশ সৌদির সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি না ঘটিয়ে বরং উন্নয়নের চেষ্টায় আছেন তিনি।
সৌদি প্রিন্স বাইডেনকে বলেছেন, তার দেশ খাশুগজি হত্যার মতো ‘ভুলের পুনরাবৃত্তি রোধে’ কাজ করেছে এবং যুক্তরাষ্ট্রও ইরাকে এমন ভুল করেছে।