Saturday , 20 April 2024
শিরোনাম

হুন্ডি নয়, বৈধ চ্যানেলে ডলার আসলে সংকট ভালোভাবেই সামলানো যেত

হুন্ডি নেটওয়ার্ক বন্ধ করা ডলার সংকটের সবচেয়ে কার্যকরী সমাধান বলে জানিয়েছেন বিডিজবসের সিইও এ কে এম ফাহিম মাশরুর।

তিনি বলেন, প্রতি মাসে দেশে ১ বিলিয়ন ডলার হুন্ডির মাধ্যমে আসে। এই ডলার ব্যাংকিং চ্যানেলে আসলে আমরা বর্তমান ডলার আর তেলের সংকট ভালোভাবেই সামলাতে পারতাম।

শুক্রবার সামাজিক মাধ্যম লিংকডইন-এ এক পোস্টে এসব কথা লিখেন এ কে এম ফাহিম মাশরুর। দ্য বিজনেস পোস্ট পাঠকদের জন্য ফাহিম মাশরুরের পোস্টটি তুলে ধরা হল

গত দুই সপ্তাহজুড়ে ব্যবসায়ী মহলে যে ব্যাপারটা সবচেয়ে বেশি আলোচিত সেটা হচ্ছে ডলারের দামের ঊর্ধ্বগতি। মাত্র দুই মাসে ডলারের দাম বেড়েছে ২০% এর বেশি। ব্যাংকে ডলারের দাম ৯৫ টাকার কাছাকাছি, আর বাহিরের কার্ব মার্কেটে ১১০ টাকার বেশি!

ডলারের দাম এভাবে বাড়তে থাকলে পুরো অর্থনৈতিক স্টাবিলিটি সংকটের মুখে পড়বে কেননা আমদানি মূল্য বেড়ে গিয়ে মুদ্রাস্ফীতি তৈরি হবে (ইতিমধ্যেই তা দেখা যাচ্ছে)। ডলারের সংকটের জন্য জ্বালানি তেলের সংকট শুরু হয়েছে। সরকার ইতিমধ্যেই ডলারের চাহিদা কমানোর (যেমন বিলাসী পণ্যের আমদানি কমানো) ব্যবস্থা নিয়েছে যার প্রয়োজন ছিল।

এখন দেখা যাক কেন ডলারের সংকট তৈরি হলো। দেশের রপ্তানি গত অর্থ বছরে সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে (৫০ বিলিয়ন ডলারের বেশি)। তাহলে হঠাৎ করে কেন রিজার্ভের উপর চাপ তৈরি হলো?

খুব সোজা উত্তর। গত ১২ মাসে দেশের প্রবাসী আয় ১৫% কমেছে আগের বছর থেকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব শুধু ফরমাল ব্যাংকিং চ্যানেলে যেই রেমিটেন্স আসে তার উপর তৈরি হয়।

কিন্তু এখানেই সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং বিষয়। প্রবাসী মন্ত্রণালয়ের হিসাবে দেখা যাচ্ছে যে- ২০২১ সনে রেকর্ড পরিমাণ লোক বিদেশে গেছে নতুন কর্মসংস্থান নিয়ে। এর বেশির ভাগ গেছে মধ্যপ্রাচ্যে (সৌদি, আমিরাত, ওমান, কাতার)। রাশিয়া যুদ্ধ শুরু হওয়ায় সবচেয়ে বেশি লাভ হয়েছে এই দেশগুলোতে কেননা তেলের দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। তেলের দাম বেড়ে গেলে এই সকল দেশে যেমন বিদেশ থেকে আসা লোকের চাহিদা বেড়ে যায়, তেমন তাদের বেতনও বেড়ে যায়। বাংলাদেশের রেমিটেন্সের শতকরা ৭০ ভাগের বেশি আসে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে যেসব দেশে হতো ১৮ মাসে লোক যাওয়া ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে (আগে যারা ছিল, তারাও এখন বেশি আয় করছে)।

তাহলে প্রশ্ন হলো- কেন রেমিটেন্স ইনকাম কমে গেলো হঠাৎ করে।

এর সোজা উত্তর – আসলে রেমিটেন্স ইনকাম কমে নাই। এখন প্রবাসী কর্মীরা ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা না পাঠিয়ে ‘হুন্ডি’র মাধ্যমে পাঠাচ্ছে। লক্ষণীয় যে করোনা শুরুর পরে যেখানে আশঙ্কা ছিল ২০২০ রেমিটেন্স কমে যাবে, সেই বছর রেমিটেন্স হঠাৎ করে বেড়ে গেলো! আসলে সেই সময়ে টাকা পাঠানো সেভাবে বাড়ে নাই। শুধু ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা পাঠানো বেড়ে গেছিলো কেননা তখন করোনার জন্য ‘হুন্ডি’ নেটওয়ার্ক কিছু মাসের জন্য বন্ধ হয়ে গেছিলো। করোনা কমে গেলে, ট্রাভেল শুরু হলে হুন্ডি আবার শুরু হওয়ার পরে ফরমাল ব্যাংকিং রেমিটেন্স কমে গেল।

বর্তমান সময়ে আমার দৃষ্টিতে ডলারের সংকটের সবচেয়ে কার্যকরী (সহজ নয় যদিও) সমাধান হুন্ডি নেটওয়ার্ক বন্ধ করা। দেশে এখন প্রতি মাসে ১ বিলিয়ন ডলার হুন্ডির মাধ্যমে আসে (আবার সেটি চলেও যায় হুন্ডির মাধ্যমে! আমাদের রিজার্ভ-এ সেটা যোগ হয় না)। এই ডলার ব্যাংকিং চ্যানেলে আসলে আমরা বর্তমান ডলার আর তেলের সংকট ভালোভাবেই সামলাতে পারতাম।

অনেকেই বলবেন – হুন্ডি বন্ধ করা সম্ভব না। এর অর্থনৈতিক চাহিদা অনেক বেশি। আমিও জানি দীর্ঘমেয়াদীভাবে হুন্ডি কমাতে হলে বেশ কিছু ব্যবস্থা নিতে হবে – যেমন ফর্মাল – ডলারের মার্কেট ওপেন করতে হবে, সহজে ব্যাংক থেকে ডলার ক্রয়ের ব্যবস্থা করতে হবে এবং দুর্নীতির টাকা পাচার বন্ধ করতে হবে। আমিও একমত। কিন্তু আর্জেন্ট ভিত্তিতে সরকার এই ব্যাপারে কি করতে পারে?

আমি মনে করি আইন শৃঙ্খলা বাহিনী (RAB ও গোয়েন্দা সংস্থা) ব্যবহার করে হুন্ডি নেটওয়ার্ক আক্রমণ করার সঠিক সময় এখন। এটি করে লং টার্ম হুন্ডির সমাধান হবে না হয়তো, কিন্ত স্বল্পমেয়াদে হুন্ডি কমে ব্যাংকে ডলারের সাপ্লাই বাড়বে, রিসার্ভ বাড়বে।

Check Also

অনিবন্ধিত অনলাইন পোর্টাল বন্ধ করে দেয়া হবে: তথ্য প্রতিমন্ত্রী

তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত জানিয়েছেন, দেশে প্রতিষ্ঠিত গণমাধ্যমের অনলাইন, অনলাইনের জন্য নিবন্ধিত …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

x