বৃহস্পতিবার রাতে জাতির উদ্দেশে বক্তব্যে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ভাব ছিল ‘হুমকির চিঠি’ প্রসঙ্গে মুখ ফসকে যুক্তরাষ্ট্রের নাম বলে ফেলেছেন। পরে নিজেকে শুধরেও নেন।
শুক্রবার জিও নিউজ জানায়, চিঠি দিয়ে হুমকি দেওয়ার ঘটনায় ইসলামাবাদে মার্কিন মিশনের ভারপ্রাপ্ত উপপ্রধানকে তলব করেছে পাকিস্তান।
প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের ওই চিঠির বিষয়ে বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের ন্যাশনাল সিকিউরিটি কমিটির (এনএসসি) বৈঠক হয়। এ বৈঠকে ‘হুমকির চিঠির’ নিয়ে কূটনৈতিকভাবে কড়া প্রতিবাদ জানানোর সিদ্ধান্ত হয়। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পদক্ষেপ নিল ইসলামাবাদ।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র বলছে, হুমকির চিঠিতে কূটনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত ভাষা ব্যবহার করায় কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে ইসলামাবাদ। মার্কিন দূতকে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বাইরের কারো হস্তক্ষেপ অগ্রহণযোগ্য।
এ দিকে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর দাবি করেছে, ইমরানের সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা পদক্ষেপে তাদের জড়িত থাকার দাবিগুলো সত্য নয়, কেবলই অভিযোগ।
বৃহস্পতিবার ইমরান খান দাবি করেন, তাকে ক্ষমতা থেকে সরাতে বৈদেশিক চক্রান্ত হচ্ছে এবং ‘হুমকি দিয়ে চিঠি’ পাঠানো হয়েছে। ওই চিঠিকে তিনি নিজের দাবির পক্ষে ‘প্রমাণ’ বলেছেন।
‘হুমকির চিঠি’ নিয়ে কথা বলার সময় ইমরান মুখ ফসকে এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের নাম বলে ফেলেছিলেন। পরে তাড়াতাড়ি ভুল শুধরে নেন তিনি।
ইমরান বলেন, আমি আজ এখানে, তার কারণ ৮ মার্চ বা তার আগে ৭ মার্চে যুক্তরাষ্ট্র থেকে…. না, যুক্তরাষ্ট্র নয়, আমি বলতে চেয়েছি অন্য কোনো একটি ভিনদেশ থেকে আমরা একটি বার্তা পেয়েছি, একটি স্বাধীন দেশের জন্য এই ধরনের বার্তা শুধু প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে নয় বরং এটা একইসঙ্গে দেশের বিরুদ্ধেও। ‘তারা আগেই জানত একটি অনাস্থা প্রস্তাব আসছে। অথচ ওই সময়ে এমনকি অনাস্থা প্রস্তাব তোলা পর্যন্ত হয়নি। এর অর্থ তারা (বিরোধী দল) বিদেশি ওই সব মানুষদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিল। আর মজার বিষয়টি হচ্ছে, নথিতে যে বিস্তারিত ষড়যন্ত্র আছে সেটি পাকিস্তানের নেতৃত্ব কিংবা সরকারের বিরুদ্ধে নয়, তা কেবল ইমরান খানের বিরুদ্ধে।
সাবেক এ ক্রিকেটার বলেন, চিঠির নেপথ্যে থাকা দেশের অবস্থানটা এমন ছিল যে, তারা পাকিস্তানের ওপর ক্ষুব্ধ…এবং তারা পাকিস্তানকে ক্ষমা করে দেবে, যদি ইমরান খান অনাস্থা ভোটে হেরে যান। কিন্তু যদি সেটা ব্যর্থ হয়, তবে পাকিস্তানকে কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। একটি অফিশিয়াল কাগজে এটা বলা হয়েছে যে, যদি ইমরান খান প্রধানমন্ত্রী থাকেন তবে আমাদের সম্পর্ককে ভুগতে হবে এবং আমাদের নানা জটিলতায় পড়তে হবে।
জিও নিউজ জানায়, ইসলামাবাদের মার্কিন কূটনীতিককে তলব করে কড়া প্রতিবাদ জানানোর আগে ‘হুমকির চিঠির’ বিষয়টি পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ও কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রিপরিষদকে অবহিত করেন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান।
এরপর গভীর রাতে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি বিবৃতি দিয়েছে। এতে বলা হয়, দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, হুমকির চিঠির বিষয়ে কূটনৈতিক চ্যানেলে উপযুক্ত প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।