দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে কভিডজনিত অনিশ্চয়তা অব্যাহত। সরবরাহ ব্যবস্থায় প্রতিবন্ধকতা প্রতিটি পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী করেছে। এর মধ্যে দেড় মাস ধরে ইউক্রেন সংকট বিশ্ববাজারে নতুন করে ধাক্কা দিয়েছে। নানা অনিশ্চয়তায় ত্বরান্বিত হয়েছে খাদ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। পাশাপাশি ক্রমবর্ধমান রয়েছে সম্পদের বৈষম্যও। এ অবস্থায় চলতি বছর বিশ্বজুড়ে ২৬ কোটিরও বেশি মানুষ চরম দারিদ্র্যের মধ্যে পড়তে পারে বলে সতর্ক করেছে অক্সফাম। খবর দ্য গার্ডিয়ান।
বিশ্বজুড়ে দরিদ্র মানুষের ওপর চলমান ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার প্রভাব তুলে ধরেছে দাতব্য সংস্থাটি। ব্রিটিশ সংস্থাটি জানিয়েছে, এ পরিস্থিতিতে দুই দশকের অগ্রগতি বিফলে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। কারণ ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন পাইকারি বাজারে দাম বাড়িয়েছে, ফসল কাটা ব্যাহত করছে এবং গুরুত্বপূর্ণ পণ্য রফতানিতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে। দাতব্য সংস্থাটির মতে, সব মিলিয়ে চলতি বছর ২৬ কোটি ৩০ লাখ মানুষ চরম দারিদ্র্যে পড়তে পারে। এ সংখ্যা যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি ও স্পেনের সম্মিলিত জনসংখ্যার সমান।
আগামী সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক বৈঠকের আগে অক্সফাম এ তথ্য তুলে ধরেছে। সংস্থাটি বলেছে, চলতি বছরের শেষ নাগাদ প্রায় ৮৬ কোটি মানুষ চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করতে পারে। প্রতিদিন ১ ডলার ৯০ সেন্টের কম আয়ে জীবনযাপন করাকে চরম দারিদ্র্য হিসেবে অভিহিত করেছে সংস্থাটি।
গত সপ্তাহে জাতিসংঘ বলেছিল, ইউরোপ যুদ্ধের প্রতিক্রিয়ার বিশ্বজুড়ে খাদ্যপণ্যের মূল্য সর্বকালের সর্বোচ্চ উচ্চতায় পৌঁছেছে। পাশাপাশি সংস্থাটি সতর্ক করেছে, জীবনযাপনের ক্রমবর্ধমান এ ব্যয় দরিদ্রদের ওপর সবচেয়ে বেশি আঘাত করবে। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে গম, ভুট্টা ও ভোজ্যতেলের দাম ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। রাশিয়া বিশ্বের বৃহত্তম গম রফতানিকারক এবং ইউরোপের রুটির ঝুড়ি হিসেবে পরিচিত ইউক্রেন গম রফতানিতে পঞ্চম স্থানে রয়েছে। এ দুই দেশ বিশ্বব্যাপী খাদ্যপণ্যটি রফতানির এক-চতুর্থাংশেরও বেশি সরবরাহ করে। আর দেশগুলোর প্রধান ক্রেতা মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার দরিদ্র দেশগুলো।
অক্সফাম বলেছে, ক্রমবর্ধমান খাদ্যপণ্যের দাম ধনী দেশগুলোয় ভোক্তা ব্যয় ১৭ শতাংশ বাড়িয়ে দিয়েছে। যদিও সাব-সাহারান আফ্রিকায় এ ব্যয় বেড়েছে ৪০ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত অর্থনীতিতেও এ প্রভাব অনুভূত হবে। যেখানে দরিদ্র পরিবারগুলো আয়ের ২৭ শতাংশ খাদ্যের পেছনে ব্যয় করে। অন্যদিকে ধনীদের ক্ষেত্রে এ ব্যয় মাত্র ৭ শতাংশ।
‘ফার্স্ট ক্রাইসিস, দেন ক্যাটাসট্রাফি’ শীর্ষক প্রতিবেদনে দাতব্য সংস্থাটি জানিয়েছে, চলমান বিভিন্ন সংকটের কারণে নিম্ন আয়ের দেশের সরকারগুলো তাদের ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে খেলাপি হওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে। দেশগুলো ঋণ পরিশোধ করতে খাদ্য ও জ্বালানি আমদানি কমিয়ে দিতে বাধ্য হতে পারে। বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র দেশগুলোকে চলতি বছর ৪ হাজার ৩০০ কোটি ডলারের ঋণ পরিশোধ করতে হবে।
অক্সফাম জানিয়েছে, দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সহায়তার জন্য উন্নয়নশীল দেশগুলোর ঋণ পরিশোধের বাধ্যবাধকতা স্থগিত করা যেতে পারে। পাশাপাশি ধনকুবেরদের ওপর বার্ষিক সম্পদ কর বাবদ ২ লাখ ৫০ হাজার কোটি ডলারেরও বেশি রাজস্ব আয় হতে পারে। প্রাপ্ত এ অর্থ ১২০ কোটি মানুষকে দারিদ্র্য থেকে বের করে আনতে, পর্যাপ্ত টিকার ব্যবস্থা এবং নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশে বসবাসকারী প্রত্যেকের জন্য সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা ও সামাজিক সুরক্ষা প্রদানে ব্যবহার করা যেতে পারে।