স্টাফ রিপোর্টার: কুড়িগ্রাম জেলা যুবলীগ’র আহ্বায়ক এডভোকেট মো: রুহুল আমিন দুলাল (হাজী দুলাল) মহান স্বাধীনতা দিবস সম্পর্কে বলেনঃ
“২৬ শে মার্চ বাংলাদেশের মানুষের মুক্তির সংকল্পে উদ্ভাসিত হওয়ার ইতিহাস।”
তিনি আরও বলেন, আমাদের স্বাধীনতা একদিনে অর্জন হয়নি। আমাদের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ শুরু হয় ১৯৪৭ সালের ১৬ই আগস্ট থেকেই। ১৯৪৭ সালের ১৫ই আগস্ট যখন পাকিস্তান এবং ভারত আলাদা হয়ে যায় তখন তৎকালীন পাকিস্তানে দু’টি ভাগে ভাগ করা হয়। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানই আজকের বাংলাদেশ। দেশ স্বাধীনের শুরু ১৯৪৭ সালের ১৬ই আগস্টের পর থেকেই আবার পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের প্রত্যেকটা কাজের মধ্যেই তৈরি হয় বৈষম্য। এর পরি-পেক্ষিতেই পূর্ব পাকিস্তান বৈষম্য দূর করে নিজেদের অধিকার রক্ষার জন্য বিভিন্ন আন্দোলন করে। প্রথম আন্দোলন নিজ সংস্কৃতি ভাষা রক্ষার জন্য সংগঠিত হয় ১৯৫২ সালে। এরপর ৬৬ এ ৬ দফা আন্দোলন হয়। ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান এবং ৭০ এর সাধারণ নির্বাচন। এর প্রত্যেকটি আন্দোলন ছিল দেশ স্বাধীনের একেকটি স্বার্থক পদক্ষেপ।
১৯৭০ এর নির্বাচনে আওয়ামী মুসলিম লীগ বিজয় অর্জন করলেও পশ্চিম পাকিস্তান সরকার যখন ক্ষমতা হস্তান্তরে টালবাহানা শুরু করেন তখন বঙ্গবন্ধুসহ সকলে বুঝে যায়।এরপর ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ১৮ মিনিটের একটি ভাষণ দেন জাতির উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধু। এরপরই মূলত বাংলার আপামর জনসাধারণ মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন।
এরপর ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঘুমন্ত নিরস্ত্র বাঙালির ওপর আধুনিক যুদ্ধাস্ত্র নিয়ে ঝাপিয়ে পড়েছিল। বাংলাদেশিদের স্বাধিকার আন্দোলন, এমনকি জাতীয় নির্বাচনের ফলাফলের আইনসম্মত অধিকারকেও রক্তের বন্যায় ডুবিয়ে দিতে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী শুরু করেছিল গণহত্যা। সেই রাতে হানাদাররা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল, ইকবাল হল, রোকেয়া হল, শিক্ষকদের আবাসিক ভবন, পিলখানার ইপিআর সদরদপ্তর, রাজারবাগ পুলিশ লাইনে একযোগে নৃশংস হত্যাযঞ্জ চালিয়ে হত্যা করে অগণিত নিরস্ত্র দেশপ্রেমিক ও দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের। পাক-হানাদার বাহিনী বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় একাধিক গণকবর খুঁড়ে সেখানে শত শত লাশ মাটি চাপা দিয়ে তার ওপর বুলডোজার চালায়। নগরীর বিভিন্ন স্থানে সারারাত ধরে হাজার হাজার লাশ মাটি চাপা দেয়া হয়৷ পুরানো ঢাকার বুড়িগঙ্গায় ও ভাসিয়ে দেয়া হয় আরো অনেক নিহতের লাশ। একদিকে গণহত্যা অন্যদিকে গ্রেপ্তার।
ঠিক ঐ রাতেই ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের নিজ বাসায় হানাদার বাহিনী কতৃক বঙ্গবন্ধু গ্রেপ্তার হন। গ্রেপ্তার হওয়ার আগমুহূর্তে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা করে একটি বার্তা দেন জাতির উদ্দেশ্যে। বার্তায় তিনি বলেছিলেন, “আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন ও সার্বভৌম একটি রাষ্ট্র। একে যে রকম করেই হোক শত্রুর হাত থেকে রক্ষা করতে হবে।” ইপিআরের ওয়্যারলেস থেকে তার এই বার্তা প্রচারিত হয়েছিল। তার এই স্বঘোষিত বার্তাটি বাংলাদেশের স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হ্যান্ডবিল আকারে ইংরেজি ও বাংলায় ছাপিয়ে চট্টগ্রামে বিলি করা হয়। আওয়ামী লীগের শ্রম সম্পাদক জহুর আহমেদ চৌধুরী চট্টগ্রামের ইপিআর সদরদপ্তর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ওয়্যারলেসের মাধ্যমে পাঠানোর ব্যাবস্থা করেন। চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ হান্নান দ্বিতীয়বার চট্টগ্রাম কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন ২৬শে মার্চ। পরের দিন অর্থাৎ ২৭শে মার্চ চট্টগ্রামে অবস্থানরত বাঙালি সেনা কর্মকর্তা মেজর জিয়াউর রহমান একই কেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধুর দেয়া স্বাধীনতার ঘোষণা পত্র পাঠ করেন। তারপরেই দেশবাসী স্বাধীনতাযুদ্ধ শুরু হওয়ার বিষয়টি বুঝতে পারেন। যদিও ২৫শে মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যে হামলা শুরু করে এবং বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণা দেয়ার পরপরই দেশের বীর সন্তানেরা বিভিন্ন স্থানে প্রতিরোধ সংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়েন। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ মতো যার যা আছে তাই নিয়ে মুক্তি সংগ্রামে অংশ নেয় বাঙালি।
নয়মাস মরণপণ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে নানা বাধা বিপত্তি পেরিয়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয় চিরকাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা। এর মাধ্যেমেই বাংলাদেশ নামের একটি নতুন রাষ্ট্রের জন্ম হয়। জাতি আজ স্মরণ করবে দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করা বীর সন্তানদের।
সর্বশেষ ২৬ শে মার্চ সম্পর্কে যুবলীগ এ নেতা বলেন, স্বাধীনতা দিবসে আমাদের করণীয় একটি প্রবাদ আছে যে, ‘স্বাধীনতা অর্জন করা যত কঠিন, তা রক্ষা করা তার থেকেও বেশি কঠিন’।তাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ ও দূর্নীতিমুক্ত দেশ গড়তে আজ এই মহান স্বাধীনতা দিবসে আমাদের শপথ করা উচিত, আমরা আমাদের জীবনের বিনিময়ে হলেও দেশের স্বাধীনতা রক্ষা করবো ইনশাআল্লাহ্।