২০১১ থেকে ১৩ করবর্ষের আয়কর আপিল দায়ের করার জন্য ব্যাংকে ৫৪ কোটি টাকা জমা দিয়েছেন নোবেলবিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। রোববার (১০ মার্চ) রুপালী ব্যাংক পল্লবী শাখায় হাইকোর্টের নির্দেশে এই অর্থ জমা দেয়া হয়।
একই সাথে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি চেয়ে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। রোববার তার পক্ষে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে এ আবেদন করা হয়।
এর আগে গত ১২ ফেব্রুয়ারি ড. মুহাম্মদ ইউনূসের গ্রামীণ টেলিকম ট্রাস্টকে ৫৪ কোটি টাকা জমা দিয়ে ২০১১ থেকে ১৩ করবর্ষের আয়কর আপিল দায়ের করার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। পরে এর লিখিত রায় প্রকাশ করা হয়। এ নিয়ে আপিল বিভাগে না গিয়ে ব্যাংকে অর্থ জমা দিয়ে দিলেন তিনি।
গত ২৮ জানুয়ারি আদালতে উপস্থিত হয়ে শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় শ্রম আপিল আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আবেদন করেন ড. ইউনূস ও গ্রামীণ টেলিকমের অপর তিন কর্মকর্তা। সেই আবেদন খারিজ করে এ রায় দেন হাইকোর্ট। রায়ে আদালত বলেন, আইন অনুযায়ী যেটা দেওয়ার সেটাই ড. ইউনূসকে দিতে হবে। এখানে অনুকম্পা দেখানোর কোনো সুযোগ নেই।
সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার তাহমিনা পলি জানান, ২০২০ সালের নভেম্বরে ২০১১ থেকে ২০১৩ দুই বছরের প্রায় ২৫০ কোটি টাকা আয়কর দাবি করে গ্রামীণ কল্যাণ ট্রাস্টকে নোটিশ পাঠায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। এর পর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এর কাছে গ্রামীণ কল্যাণ ট্রাস্ট অর্থ নেই বলে মওকুফ চান। ওই আবেদন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) রিজেক্ট করার পরে তারা আয় করের টাকা মওকুফ চেয়েছিলেন। কিন্তু তখন তাদের একটি অ্যাকাউন্টে-ই প্রায় সাড়ে তিনশ কোটি থেকে প্রায় চারশ কোটি টাকার মতো ছিল। কিন্তু অ্যাকাউন্টে অর্থ রয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এই অর্থ চেয়ে নোটিশ করার পরে কিন্তু গ্রামীণ টেলিকম এই নোটিশকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন। রিটের শুনানি নিয়ে নোটিশ কেন বেআইনি বলা হবে না এনিয়ে রুলও জারি করেন আদালত।
এরপর গত তিন বছরে বিভিন্ন আদালত ঘুরে মামলাটি হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে আসে। আজ সেটির শুনানি শেষে গ্রামীণ টেলিকমের রিট আবেদন খারিজ করেন আদালত। সেই সঙ্গে গ্রামীণ টেলিকমকে আদেশ দেন নিয়ম অনুযায়ী দাবি করা আয়করের ২৫ শতাংশ টাকা আগে জমা দিয়ে এর পর এনবিআরেরব বিরুদ্ধে আপিল দায়ের করতে।
এদিকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি চেয়ে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। রোববার (১০ মার্চ) তার পক্ষে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে এ আবেদন করা হয়। এতে বলা হয়েছে, ড. মুহাম্মদ ইউনূস বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যেতে চান। কিন্তু আদালত যেহেতু দেশের বাইরে যাওয়ার ক্ষেত্রে অবহিত করতে বলেছেন, তাই এই আবেদন করা হলো।
সোমবার এ আবেদনের ওপর শুনানি হতে পারে বলে জানিয়েছেন ইউনূসের আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন।
শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের করা মামলায় চলতি বছরের ১ জানুয়ারি ঢাকার শ্রম আদালত-৩ এর বিচারক বেগম শেখ মেরিনা সুলতানার আদালত ইউনূসকে ৬ মাস কারাদণ্ড ও ৩০ হাজার টাকা জরিমানার রায় দেন। ওইদিনই তিনি এক মাসের মধ্যে আপিলের শর্তে জামিন পান।
গত ২৮ জানুয়ারি সকালে সাজা বাতিল চেয়ে আপিল আবেদন করে আপিল ট্রাইব্যুনাল থেকেও জামিন পান তিনি। সবশেষ গত ১০ মার্চ সেই জামিনের মেয়াদ বর্ধিত করা হয়েছে। তবে আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ইউনূসকে বিদেশে যেতে হলে আদালতের অনুমতি লাগবে বলে আদেশ দেন হাইকোর্ট। গত ৫ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদারের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন।