যে নজিরবিহীন আর্থিক সংকটে পড়েছে শ্রীলঙ্কা তা কাটিয়ে উঠতে আগামী ৬ মাসে দেশটির ৩০০ কোটি ডলার সহায়তা লাগবে বলে শনিবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন দেশটির অর্থমন্ত্রী। এই অর্থ দিয়ে জ্বালানি ও ওষুধসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরবরাহের গতি স্বাভাবিক করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
১৯৪৮ সালে স্বাধীনতার পর এই প্রথম এমন নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে শ্রীলঙ্কা। ঋণে জর্জরিত দেশটিতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ একেবারে তলানিতে নেমে এসেছে। এ জন্য জ্বালানিসহ অন্য পণ্য আমদানির মূল্য পরিশোধ করতে পারছে না দেশটি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা মানুষ বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকছে। মূল্যস্ফীতি মাত্রা ছাড়িয়েছে। বাজারে পণ্য নেই। খাদ্য, জ্বালানি ও অন্যান্য নিত্যপণ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে দেশটির প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের পদত্যাগের দাবি আরও জোরালো হয়ে উঠছে। বিভিন্ন স্থানে সরকার বিরোধী বিক্ষোভ চলছে।
এমন পরিস্থিতিতে সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের পুরো মন্ত্রিসভা পদত্যাগ করেছে। নতুন অর্থমন্ত্রী হিসেবে আলি সাবরি যোগ দিলেও তিনিও এক দিন পরই পদত্যাগ করেন। তবে গতকাল শুক্রবার আবারও অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন তিনি।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া তার প্রথম সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, এটি একটি কঠিন কাজ। চলতি মাসেই আন্তর্জাতিক আর্থিক তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে আলোচনা করা হবে বলে জানান তিনি।
তিনি আরও জানান, আন্তর্জাতিক বন্ড পুনর্গঠন করার চেষ্টা করছে শ্রীলঙ্কা। এছাড়া অর্থপ্রদানের উপর একটি স্থগিতাদেশ চাইবে দেশটি এবং জুলাই মাসে আসন্ন ১০০ কোটি ডলার অর্থপ্রদানের জন্য বন্ডহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনার বিষয়েও আত্মবিশ্বাসী তারা।
সাবরি বলেন, ‘বড় ধরনের ঋণখেলাপ ঠেকাতে এ প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। এ ধরনের ঋণখেলাপের পরিণতি কী তা আমরা বুঝি’।
দেশটির সরকার এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, বিশ্ব ব্যাংক এবং চীন, যুক্তরাষ্ট্র, বিট্রেন ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন অংশীদার দেশগুলোর কাছেও সহায়তা চাইবে বলে জানানো হয়েছে।
আলি সাবরি বলেন, আমরা জানি যে, আমরা কিসের মধ্যে আছি। এই পরিস্থিতিতে একমাত্র উপায় লড়াই করে যাওয়া। আমাদের আর কোনো বিকল্প নেই।
সাবরি বলেন, শ্রীলঙ্কা ভারতের কাছ থেকেও জ্বালানির জন্য ঋণের আওতায় অতিরিক্ত ৫০ কোটি ডলার চাইবে। এর মাধ্যমে পাঁচ সপ্তাহের জ্বালানির চাহিদা মেটানো যাবে।
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), বিশ্বব্যাংক থেকেও সাহায্য চাইবে শ্রীলঙ্কা। চীন, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোসহ দ্বিপক্ষীয় সহযোগীদের কাছ থেকে সহযোগিতা চাইবে দেশটি।
সাবরির মতে, আগামী ছয় মাসে সরকারকে কর হার ও জ্বালানির মূল্য আরও বাড়াতে হবে। তিনি মনে করেন, দেশকে সংকট থেকে বের করে আনতে এর বিকল্প নেই।
জে পি মরগ্যানের বিশ্লেষকেরা চলতি সপ্তাহে আভাস দিয়েছেন, চলতি বছর শ্রীলঙ্কার মোট ঋণের পরিমাণ ৭০০ কোটি ডলারে পৌঁছাতে পারে। এতে চলতি হিসাবে ঘাটতির পরিমাণ হবে ৩০০ কোটি ডলার।