ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের তিন বারের সংসদ সদস্য তিনি। পাশাপশি খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা। নাম তার ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল, বীর প্রতীক। তাকেই অপহরণ করা হয়েছিল। এই মর্মে সংসদ সদস্যের এপিএস দেলোয়ার হোসেনের প্ররোচনায় প্রভাব খাটিয়ে ২৩ আগস্ট নেত্রকোণার পূর্বধলা থানায় মামলাও করেছেন এমপি স্ত্রী রওশন হোসেন।
মামলার বিররণীতে দেখা গেছে, চলতি বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৭ মার্চ পর্যন্ত অপহরণ হয়েছিলেন নেত্রকোণা ৫ আসনের সংসদ সদস্য ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল, বীর প্রতীক। কিন্তু এই সময়ের মধ্যেই তিনি ময়মনসিংহে অনুষ্ঠিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভায় নেতাকর্মীদের নিয়ে যোগ দিয়েছিলেন গত ১১ মার্চ। এছাড়া উল্লেখিত অপরহনের সময়ে তিনি নিজ নির্বাচনী এলাকাতেই বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার কর্মকাণ্ডের বিবরণ থেকেই এসব তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। এমনকি গত ১১ মার্চ ময়মনসিংহে আওয়ামী লীগের জনসভায় কয়েক হাজার নেতাকর্মী নিয়ে মিছিল সহকারে সেখানে যোগ দিয়েছিলেন সংসদ সদস্য ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল, বীর প্রতীক।
এদিকে, ওয়ারেসাত হোসেন বেলালের স্ত্রী রওশন হোসেন মামলায় উল্লেখ করেছেন এজাহারে উল্লেখিত ৯ জন আসামি তার স্বামীকে ৭ ফেব্রুয়ারি অপহরণ করে এবং ২৭ মার্চ বিকালে তিনি এবং তার ছেলে তাকে উদ্ধার করেন। এ সময়ের মধ্যে তিনি কোনো মামলাও করেননি, পাশাপাশি পুলিশকেও জানাননি।
মামলায় ১ নম্বর আসামি করা হয়েছে নাদিয়া আক্তারকে। তিনি বলেন, আমি এসবের কিছুই জানি না। কিভাবে আমাকে এই মামলার আসামি করা হয়। আমি একজন শিক্ষার্থী। একজন রানিং এমপিকে অপহরণ করার অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট। দেশে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রয়েছে, এমনকি এমপির নিজেরই তো বডিগার্ড আছেন। পুলিশ ঘটনার তদন্ত করলে সব সত্যি বেরিয়ে আসবে। মামলার অন্যান্য আসামিরা হলেন, তাইফ, সোলেমান হোসেন, ফেরদৌস আলম, কামরুজ্জামান উজ্জল, নাদেরুজ্জামান স্বপন, রতন পাল, শাহ আলীম এবং এমপির গাড়িচালক শফিকুল ইসলাম।
এ বিষয়ে পূর্বধলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘যে সময়টাতে এমপি স্যারকে অপহরণের কথা বলা হচ্ছে সে সময়টা তিনি নিজ নির্বাচনী এলাকাতেই বেশি ছিলেন এবং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে শুরু করে সরকারি কাজেও ব্যস্ত ছিলেন। ঊর্ধ্বতন মহলের নির্দেশেই মামলা নেয়া হয়েছে। তবে যতটুকু জানতে পেরেছি, বিষয়টা পারিবারিক সমস্যার কারণে হয়েছে।’
এ বিষয়ে নেত্রকোণা জেলার পুলিশ সুপার মো. ফয়েজ আহমেদকে ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এমনকি তার ব্যবহৃত সরকারি নাম্বারে মুঠোফোনে এবং হোয়াটসআপ ইনবক্সে ক্ষুুদেবার্তা পাঠালেও তিনি সেটির প্রতিউত্তর করেননি।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নেত্রকোণা ৫ আসনের সংসদ সদস্য ওয়ারেসাত হোসেন বেলালকে অসুস্থ বানিয়ে তার ব্যক্তিগত সহকারী দেলোয়ার হোসেন এবং তার স্ত্রী রওশন হোসেন তার সব সম্পদ লুটেপুটে খাওয়ার পায়তারা করছেন। এমনকি এপিএস বেলাল নিজেই এমপির হয়ে স্বাক্ষর করে ডিও লেটার পর্যন্ত দিচ্ছেন টাকার বিনিময়ে।
এছাড়া, মালয়েশিয়াতে চিকিৎসা করানোর নাম করে নিয়ে গিয়ে এমপি ওয়ারেসাত হোসেন বেলালকে আটকে রেখেছিল দেলোয়ার ও তার স্ত্রী। তবে মামলার ৪ নং আসামি ফেরদৌস আলমের বিরুদ্ধে এমপির নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে টাকা আত্নসাতের অভিযোগ রয়েছে। দেলোয়ার এবং ফেরদৌস মিলেই নানা অপকর্ম করতেন বলেও অভিযোগ করেছেন অনেকে।