ভারত মহাসাগর থেকে ছিনতাই হওয়া বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ উদ্ধারে জলদস্যুদের ওপর যৌথভাবে চাপ বাড়িয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ভারতীয় নৌবাহিনী। এতে আগের অবস্থান বদলে উপকূলের দেড় নটিক্যাল মাইলের মধ্যে জাহাজ নিয়ে গেছে জলদস্যুরা। একই সঙ্গে দুই নৌ-বাহিনীকে অভিযান পরিচালনা থেকে বিরত রাখতে জিম্মি নাবিকদের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে তারা।
বিষয়টি নিশ্চিত করে মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) সন্ধ্যায় দেশের সিনিয়র নাবিক ক্যাপ্টেন আতিক ইউএ খান জানান, গত দুদিন আন্তর্জাতিক নৌবাহিনী জিম্মি হওয়া জাহাজটিকে চাপের মুখে রেখেছে। অন্যদিকে দস্যুরাও অভিযান বন্ধ করতে নাবিকদের ওপর চাপ দিচ্ছে। দস্যুরা নৌবাহিনীর উদ্দেশে বলেছে, বাড়াবাড়ি করলে জাহাজ তীরে তুলে দেবে।
জিম্মি হওয়া জাহাজের মালিকপক্ষ ও সরকার নাবিকদের নিরাপত্তাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। তারা শান্তিপূর্ণ উপায়ে কোনো ক্ষতি ছাড়াই নাবিক ও জাহাজটি উদ্ধারের চেষ্টা করছে।
জাহাজের মালিকপক্ষ কেএসআরএম’র মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বলেন, আমরা কোনো ধরনের সামরিক অভিযানকে সমর্থন করছি না। তাছাড়া রাষ্ট্রের পক্ষ থেকেও সুস্পষ্ট বার্তা হচ্ছে সহিংস অভিযান পরিচালনা করা যাবে না।
তিনি বলেন, নাবিকদের সুস্থভাবে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি। ইতোমধ্যে মধ্যস্থতার জন্য বিভিন্ন মাধ্যমের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তবে এখন পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত সাড়া পাওয়া যায়নি।
এদিকে ১২ মার্চ জাহাজ জিম্মির পর বেশ কয়েকবার অবস্থান পরিবর্তন করা হয়েছে বলে জানা গেছে। ১৪ মার্চ রাতে সোমালিয়ার গারাকাদ উপকূল থেকে সাত নটিক্যাল মাইল দূরে দস্যুরা প্রথমে জাহাজটি নোঙর করে। এরপর গারাকাদ উপকূল থেকে সরিয়ে ১৫ মার্চ ৫০ নটিক্যাল মাইল উত্তরে জাহাজটিকে নিয়ে যায়। এরপর গদবজিরান উপকূল থেকে মাত্র চার নটিক্যাল মাইল দূরে জাহাজটির সর্বশেষ অবস্থান শনাক্ত করা হয়।
অন্যদিকে সময়ের সাথে সাথে বাড়ছে জাহাজ বিস্ফোরণের শঙ্কা। আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিক থেকে ৫৫ হাজার মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে যাওয়ার কথা দুবাইতে। আর কয়লা বোঝাই করার পর থেকে প্রতি ২৪ ঘণ্টায় এ কয়লা পরিমাপ করার প্রয়োজন পড়ে। দাহ্য পদার্থ হওয়ায় এ কয়লা থেকে প্রচুর পরিমাণ মিথেন গ্যাস উৎপাদন হয় এবং কমে যায় অক্সিজেনের পরিমাণ। তাই সামান্য আগুন বা একটু ফুলকির ছোঁয়ায় বিস্ফোরণে উড়ে যেতে পারে এ জাহাজ।
এর আগে, সোমবার (১৮ মার্চ) এক প্রতিবেদনে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, সোমালিয়ার পুন্টল্যান্ড এলাকাটি অসংখ্য জলদস্যু চক্রের ঘাঁটি। আধাস্বায়ত্তশাসিত এই অঞ্চলটির পুলিশ বাহিনী জানিয়েছে, তারা উচ্চ সতর্কতায় রয়েছে এবং এমভি আবদুল্লাহকে জব্দ করা জলদস্যুদের বিরুদ্ধে অভিযানে অংশ নিতে প্রস্তুতি নিয়েছে।
এক বিবৃতিতে পুন্টল্যান্ড পুলিশ বলেছে, আন্তর্জাতিক নৌবাহিনী অভিযানের পরিকল্পনা করছে — এমন রিপোর্ট পাওয়ার পর পুন্টল্যান্ড পুলিশ বাহিনীও প্রস্তুত রয়েছে।