Saturday , 20 April 2024
শিরোনাম

অশ্রুভরা চোখে আখড়াবাড়ি ছাড়ছেন বাউলরা

বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহ্ এর তিরোধান স্মরনোৎসবের শেষ দিনে সাধুর সঙ্গ সাঙ্গ করে আপন ঠিকানায় ফিরেছেন দুর দুরান্ত থেকে ছেউড়িয়ার তীর্থধামে আসা বাউল, সাধু-ভক্ত, অনুসারীরা।

বুধবার দুপুর থেকেই ৩ দিনের সাধুসঙ্গের ইতি টানতে শেষ বারের মতো ভক্তদের সাথে ভক্তি-কুশল বিনিময় করতে থাকে। অশ্রুভরা চোখে বিদায় নিয়ে বাউলরা আখড়াবাড়ি ছেড়ে নিজ নিজ আশ্রমের উদ্দেশ্যে হয়েছেন। তারা বলছেন এই মহামিলনের শিক্ষা মানবপ্রেম ছড়িয়ে দেবেন দেশ থেকে দেশান্তরে।

আখড়া বাড়িতে অনুষ্ঠিত তিরোধান দিবসের ৩ দিনের আনুষ্ঠানিকতা শেষে উৎসবকে কেন্দ্র করে জমজমাট আখড়াবাড়ি আবার বছর জুড়ে রয়ে যাবে আপন রূপে। তাদের গুরু বানী ও সবকিছুর কিছুর মুলে পরম মমতায় শ্রদ্ধাভরে গুরুকে বারবার প্রনাম ও নানা রকম ভক্তি জানিয়ে বিদায় নেন শিষ্যরা। তাদের আবার দেখা হবে লালনের দোল অনুষ্ঠানে। বাউল ফকির আর সাধুদের ছাড়াই নাম মাত্র অনুষ্ঠানিতায় বুধবারও সন্ধ্যায় লালন মঞ্চে আলোচনা সভা ও রাতভর লালন সংগীত পরিবেশিত হবে।

বিদায় বেলায় রাজশাহী থেকে আসা ফকির আমিরুল শাহ অশ্রুসিক্ত নয়নে বলেন, সাধুদের সব কিছুর মুলে গুরু ভক্তি। গুরুকে ভজেই সর্বদা তারা পরমত্মার সন্ধান করে ফেরে। সেই গুরুকে বারবার প্রণাম ও ভক্তি জানিয়ে শিষ্যরা বিদায় নিলেও আবারও তারা ঘুরে ঘুরে আসেন গুরুর এই তীর্থধামে। তাদের যে গুরুর চরনস্পর্শ করা বড়ই দরকার। নইলে সে তো পাবে না আর দ্বিন-দরিয়ার পাড়।

ঢাকা সাভার থেকে আসা এনাম শাহ বলেন, সমাজের অসঙ্গতি, সাম্প্রদায়িকতা, মানুষে মানুষে অযথা হানাহানি দুর করে চিরন্তন মানবধর্ম প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন লালন। সাঁইজি তার পদাবলী ও বাণীতে মানুষকে প্রকৃত শুদ্ধ মানুষ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তাই এই উৎসব কেবল উৎসব নয় এখান থেকে লালনের এমন শিক্ষা ও মানবপ্রেম ছড়িয়ে দেবেন দেশব্যাপী।

লালন অনুসারী হৃদয় শাহ জানালেন, সারা বছরের বহুল প্রতিক্ষা এই মহামিলনে ঘটে যাওয়া সাধু সঙ্গ প্রতিটা ভক্ত অনুসারীদের মধ্যে উৎসারিত। তারা এই সঙ্গকে আত্মধারণ করে ফিরে যাবেন আপন আলোয়। বাউল শিরোমনি লালন শাহর ওফাত দিবসে অনুসারীদের মাঝে এক নিবির আবেগঘন পরিবেশ সৃষ্টি হয়। সাঁইজির যে দর্শন আজ দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিশ্বের অনেক দেশের মানুষকে আকৃষ্ট করেছে সেটা নিছক উৎসব পালনের কারণে নয়। এটা আত্মস্বপ্ন থেকে আত্মশুদ্ধির পথে নিয়ে যায়। যখন জ্ঞান সাধনার আত্মতৃষ্ণা ক্রমে বৃদ্ধি পায়। সেকারণে সাইজির ভাবাভার্শে একে অন্যের সান্নিধ্যে এসে গানে গানে প্রবেশ করেন মায়ার জগতে।

 

সরেজমিনে বুধবার সকালে অখড়াবাড়ী ঘুরে দেখা যায়, ১৭ অক্টোবর থেকে ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত ৩ দিনের এই আয়োজনে এবার উৎসুক দর্শনাথীদের ভীড়ে তিল ধারনের ঠাঁয় ছিলোনা। তবে এ সময় খেলাফতধারী সাধুদের চোখে পড়েনি খুব একটা। ঘুরে ফিরে স্থানীয় বাউলদেরই চোখে পড়ে। খেলাফতধারী সাধু না থাকলেও থেমে নেই অনুষ্ঠান। দর্শনার্থীদের সমাগম থাকায় মেলার স্টলগুলোতে সারাক্ষনই ভীড় ছিলো। নাগর দোলা ঘুরেছে তার আপন গতিতে।

সংস্কৃতি মন্ত্রনালয় ও কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় লালন একাডেমীর সভাপতি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলামের সভাপতিত্বে বুধবার সন্ধ্যা ৭টায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি বিভাগীয় কমিশনার মো: জিল্লুর রহমান চৌধুরী এবং প্রধান আলোচক হিসেবে ছিলেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড: সরোয়ার মুর্শেদ। আলোচনা সভা শেষে রাতভর চলবে লালন একাডেমীর শিল্পীবৃন্দ ও দেশের খ্যাতনামা শিল্পীদের পরিবেশনায় লালন সংগীতানুষ্ঠান।

Check Also

ওমরাহ থেকে ফেরার সময় নির্ধারণ করে দিল সৌদি আরব

হজ শুরুর আগে যারা ওমরাহ পালন করতে গিয়েছেন তাদের ফিরে যাওয়ার জন্য সময়সীমা নির্ধারণ করে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

x