‘বিচার বিভাগে অধিকাংশ কর্মকর্তাই সৎ। মাত্র হাতে গোনা কয়েকজন অসৎ কর্মকর্তার জন্য যদি জুডিসিয়ারি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে তাদের শনাক্ত করবো।
আর তাদের ক্ষেত্রে আমাদের কোনো আপস থাকবে না। ’
শনিবার (২ এপ্রিল) বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে এক সংধবর্ধনা অনুষ্ঠানে এ মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
এ অনুষ্ঠান আয়োজন করে বাংলাদেশ মহিলা জজ অ্যাসোসিয়েশন। বাংলাদেশের ২৩তম প্রধান বিচারপতির এ সংবর্ধানা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
বক্তব্যে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, ‘আমি প্রধান বিচারপতি হয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে জেনেছি, আমাদের দেশে অধিকাংশ জুডিসিয়াল কর্মকর্তাই সৎ, মাত্র হাতে গোনা কয়েকজন অসৎ কর্মকর্তার জন্য জুডিসিয়ারি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে তাদের শনাক্ত করবো। আর তাদের ক্ষেত্রে আমাদের কোনো আপস থাকবে না। ’
প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, ‘এরই মধ্যে আমি একটি কমিটি করে দিয়েছি। যারা ভালো করবেন তাদেরকে প্রত্যেক বছর ‘প্রধান বিচারপতি’ পদক দেওয়া হবে। এজন্য একটা নীতিমালা করা হয়েছে। ’
তিনি আরও বলেন, ‘জনগণের ট্যাক্সের টাকায় আমাদের (বিচারকদের) বেতন হয়। জজদের লক্ষ্য হবে জনগণের আস্থা অর্জন করা। বিচারপ্রার্থী মানুষকে যাতে দিনের পর দিন আদালতের বারান্দায় ঘুরতে না হয়। ’
বিচারপ্রার্থীদের কষ্টের কথা তুলে ধরে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘অধিকাংশ বিচারপ্রার্থী হয় জমি বন্দক রেখে, না হয় হালের গরু বিক্রি করে অথবা গোলার ধান বিক্রি করে আইনজীবীকে টাকা দেন। এখন এসব বিচারপ্রার্থী জনগণ যদি দিনে পর দিন আদালতে ঘুরতে থাকেন, তাহলে তারা নিঃস্ব হয়ে যাবেন। এদেরকে যত দ্রুত মুক্তি দেওয়া যায় ততই ভালো, তাদের জন্য এবং জাতির জন্য। ’
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি আইনমন্ত্রী নারী বিচারকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘একজন জজ (বিচারক) যখন মামলা পরিচালনা করেন, ‘তখন তিনি নারী বা পুরুষ থাকেন না, তখন তিনি জজ-ই থাকেন। তাই শান্তিপূর্ণ সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় নারী-পুরুষের কথা চিন্তা না করে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। ’
আইনমন্ত্রী বলেন,‘নব্য স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর দেওয়া সংবিধানে নারীর অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অনুচ্ছেদ ১৯, ২০, ২৮- এসব ধরনের কর্মে ও পেশায় সমতার বিধান যুক্ত করা হয়। সংবিধানে প্রদত্ত এ বিধান বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ সালে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপের মাধ্যমে নারীদের বিচার বিভাগে অংশগ্রহণের সব বাধা দূর করে বিচারকাজে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেন। এরপর ১৯৭৫ সালে এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে প্রথমবারের মতো দুইজন নারী বিচারক বাংলাদেশের বিচার বিভাগে যোগদান করেন। ’
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর সেদিনের নারী মুক্তির অভিনব পদক্ষেপে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতার কারণে এখন বিচার বিভাগের প্রতিটি স্তরে নারী বিচারকের পদচারণা ঘটেছে। যার অগ্রপথিক ও জীবন্ত সাক্ষী বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা। ’
আনিসুল হক বলেন, ‘বর্তমানে জুডিসিয়াল সার্ভিসে নারী বিচারকের সংখ্যা ৫৪৪ জন, যা মোট বিচারকের শতকরা ২৮ শতাংশ। এ সংখ্যা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক ও উৎসাহমূলক। ’
বিচারক নিয়োগ পরীক্ষায় নারীদের অবস্থান সম্পর্কে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘বিচার বিভাগে নারীদের সংখ্যাই শুধু বাড়েনি তারা সেখানে মেধা ও যোগ্যতারও স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। তার প্রমাণ, ত্রয়োদশ বিজেএস পরীক্ষার মাধ্যমে ২০২১ সালে নিয়োগ পাওয়া বিচারকদের মেধা তালিকার প্রথম ও দ্বিতীয় শীর্ষ অবস্থান দখল করেছেন দুইজন নারী বিচারক। ’
বাংলাদেশ মহিলা জজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হোসনে আরা বেগমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম, আইন সচিব মো. গোলাম সাওয়ার, সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. বজলুর রহমান, আইন ও বিচার বিভাগের যুগ্ম সচিব উম্মে কুলসুম, অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব জিনাত সুলতানা বক্তব্য রাখেন।