জুলাইয়ের পর আগস্টেও ২ বিলিয়ন (২০০ কোটি) ডলারের বেশি রেমিট্যান্স পাচ্ছে বাংলাদেশ। মাসের ২৯ দিনে ১ দশমিক ৯০ বিলিয়ন (১৯০ কোটি) ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।
বাকি দুই দিনে ১০ কোটি ডলারের বেশি আসবে বলে নিশ্চিত করে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ের মতো মাস শেষে আগস্টেও ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স আসবে।
জুলাইয়ে ২০৯ কোটি ৬৯ লাখ ১০ হাজার (প্রায় ২.১ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা, যা ছিল গত ১৪ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। আর গত বছরের জুলাই মাসের চেয়ে বেশি ছিল ১২ শতাংশ।
গত বছরের আগস্টে ১৮১ কোটি (১.৮১ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে।
দুই বছরের করোনা মহামারি ধকল কাটতে না কাটতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় অর্থনীতি নিয়ে নানা উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় দেশের অর্থনীতিতে স্বস্তির বার্তা দিচ্ছে বলে মনে করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘অতীতের মতো আবারও দেশের সংকটের সময় বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়ে অর্থনীতির চাকা সচল রাখছেন প্রবাসীরা।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেক্স রিজার্ভ অ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্ট সূত্রে জানা গেছে, আগস্ট মাসের ২৯ দিনে ( ১ থেকে ২৯ আগস্ট) ১৯০ কোটি ডলার দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেঁধে দেয়া বর্তমান বিনিময় হার হিসাবে (প্রতি ডলার ৯৫ টাকা) টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ ১৮ হাজার ৫০ কোটি টাকা।
বাজারে ডলারের ব্যাপক চাহিদা থাকায় ব্যাংকগুলো ১০৫/১০৬ টাকা দরেও রেমিট্যান্স সংগ্রহ করছে। সে হিসাব বিবেচনায় নিলে টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ আরও বেশি।
মাসের বাকি ২দিনে (৩০ ও ৩১ আগস্ট) অঅরও ১৫ কোটি ডলার আসবে বলে আশা করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই রেমিট্যান্সের ইতিবাচক ধারা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আশা করছি বছরের বাকি ১০ মাসেও এই ধারা অব্যাহত থাকবে।’
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতিকে ওলটপালট করে দিয়েছে। তার প্রভাব বাংলাদেশে পড়েছে। এরই মধ্যে গত ৫ আগস্ট জ্বালানি তেলের রেকর্ড মূল্যবৃদ্ধিতে চালসহ সব ধরনের পণ্যের দাম আরেক দফা বেড়েছে। বেড়েছে পরিবহন ভাড়া। দেশজুড়ে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ-হতাশা বিরাজ করছে। সোমবার জ্বালানি তেলের দাম লিটারে মাত্র ৫ টাকা কমিয়েছে সরকার। এতে বাজারের আগুন নেভাতে কোনো ভূমিকা রাখবে না।
আগামী দিনগুলোতে কী হবে? এই প্রশ্ন যখন সবার মধ্যে, তখন স্বস্তির ইঙ্গিত দিচ্ছে প্রবাসীদের পাঠানো এই অর্থের প্রবাহ। মনে করিয়ে দিচ্ছে ২০২০-২১ অর্থবছরের কথা। ভরা করোনা মহামারির মধ্যেও ওই অর্থবছরে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে প্রায় ২৫ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা, যা ছিল আগের অর্থবছরের (২০১৯-২০) চেয়ে ৩৬ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি।
‘মহামারির মধ্যে ওই সময় অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সবচেয়ে বড় অবদান রেখেছিলেন প্রবাসীরা’-এই মন্তব্য করে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় অর্থনীতিতে যে নতুন সংকট দেখা দিয়েছে, সেই সংকট কাটাতেও সবার আগে এগিয়ে এসেছেন প্রবাসীরা। আবার বেশি বেশি রেমিট্যান্স দেশে পাঠাচ্ছেন।’
‘এই সময় এটারই খুব দরকার ছিল।’
চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই রেমিট্যান্সের বিস্ময়কর উল্লম্ফন দেখা যাচ্ছে। এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে ২০২২-২৩ অর্থবছরে তৈরি হবে নতুন রেকর্ড। এতে অনেকটাই চাপমুক্ত হবে দেশ। ইতোমধ্যে সে লক্ষণও দেখা যাচ্ছে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলও (আইএমএফ) তেমনটি বলেছে। বাংলাদেশ সংকটে নেই; চলমান বৈশ্বিক সংকটে সৃষ্ট অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে ওঠার শক্তি বাংলাদেশের আছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
সম্প্রতি এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে আইএমএফের এশিয়া–প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিভাগের প্রধান রাহুল আনন্দ বাংলাদেশ নিয়ে এ কথা বলেছেন।
২০২১-২২ অর্থবছরে প্রবাসী আয়ে মন্দা দেখা দেয়। পুরো অর্থবছরে ২ হাজার ১০৩ কোটি (২১.০৩ বিলিয়ন) ডলার এসেছিল।