মারিওপোলের আজভস্তাল কারখানা কমপ্লেক্সে আটকে থাকা অবশিষ্ট ইউক্রেনীয় সেনাদের আর প্রতিরোধ ধরে না রেখে আত্মসমর্পণ করার নির্দেশ দিয়েছে হাইকমান্ড। আজভস্তালে আটকে থাকা সেনাদের নেতৃত্বে থাকা কমান্ডার শুক্রবার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে মারিওপোল পরিস্থিতি অনেকটা শান্ত হয়ে এলেও পূর্বে দনবাসে পুরোদমে চলছে রুশ হামলা।
আজভস্তাল ব্যাটালিয়ন কমান্ডার দেনিস প্রোকেপেঙ্কো শুক্রবার টেলিগ্রাম অ্যাপে প্রকাশিত এক ভিডিওবার্তায় বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্তৃপক্ষ মারিওপোল নগর প্রতিরোধের অবস্থান ছেড়ে আমাদের গ্যারিসনের সেনাদের জীবন রক্ষার নির্দেশ দিয়েছে।
’ নিহত সেনাদের আজভস্তাল থেকে সরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়াও চলছে বলে তিনি জানান।
আজভস্তালে ইউক্রেনীয় সেনারা প্রায় ৮২ দিন প্রতিরোধ ধরে রাখলেও রুশ অবরোধ ও নিরন্তর হামলার ফলে গত সপ্তাহের শুরুর দিকে তা ভেঙে পড়ে। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দেওয়া হিসাবে গত সোমবার থেকে এক হাজার ৯০৮ ইউক্রেনীয় সেনা তাদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে।
এদিকে পূর্ব ইউক্রেনের দনবাস অঞ্চলের লুহানস্কের সেভেরোদোনেত্স্ক এলাকার এক স্কুলে রুশ সেনারা হামলা চালিয়েছে। ওই স্কুলে প্রায় ২০০ বেসামরিক মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল বলে জানিয়েছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম। ওই অঞ্চলের গভর্নর জানিয়েছেন, হামলায় ১২ জন নিহত এবং ৩০ জন আহত হয়েছে।
গভর্নর আরো জানান, রুশ হামলায় সেখানকার তিন হাজার বহুতল ভবনসহ প্রায় ১১ হাজার ঘরবাড়ি আংশিক অথবা পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে।
সেভেরোদোনেস্কের স্কুলে রুশ হামলাকে ‘নৃশংস ও একদম অযৌক্তিক’ আখ্যা দিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি। তাঁর অভিযোগ, ‘দখলদাররা দনবাসে চাপ বাড়ানোর চেষ্টা করছে। ’ হামলার পর গত বৃহস্পতিবার রাতে দেওয়া এক ভিডিওবার্তায় জেলেনস্কি আরো বলেন, ‘একটুও বাড়িয়ে বলছি না, দনবাস একেবারে নরক হয়ে গেছে। ’
লুহানস্কের যে কয়েকটি অংশে ইউক্রেন এখনো প্রতিরোধ ধরে রেখেছে, সেভেরোদোনেত্স্ক সেগুলোর একটি। ওই অঞ্চলে রুশ বাহিনীর অবস্থান প্রসঙ্গে রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সেরগেই শোগুই বলেন, লুহানস্কে তাঁর বাহিনীর অভিযান ‘সম্পন্ন হওয়ার পথে’।
দনবাসে রাশিয়ার বিশেষ সদর দপ্তর : এদিকে ক্রেমলিন দনবাস অঞ্চলের পুনর্নির্মাণে উদ্যোহ নেওয়ার কথা জানিয়েছে। রাশিয়া বলছে, দনবাস অঞ্চলকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়ার কার্যক্রম তত্ত্বাবধানে সেখানে ‘বিশেষ সদর দপ্তর’ খোলা হয়েছে। ওই অঞ্চলে নতুন নির্মাণ ও পুনর্নির্মাণ কার্যক্রম কোথায় কতটা প্রয়োজন সেসব খতিয়ে দেখছে বিশেষজ্ঞ দল। রাশিয়ার ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী মারাত খুসনুলিন বলেন, ‘পুরোদমে কাজ চলছে। আমরা সব রাস্তা ও বিধ্বস্ত বাড়িঘর নির্মাণ ও পুনঃস্থাপন করব। দ্বিতীয় ধাপের পদক্ষেপ হবে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার। ’ উল্লেখ্য, রাশিয়া এর আগে ওই অঞ্চলের রুশভাষীদের ইউক্রেনের বাহিনীর কথিত নির্যাতন থেকে রক্ষা করা এমনকী পুরো ভূখণ্ড নিজেদের দখলে নিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনার কথাও বলেছে।
ইউক্রেনের জন্য বিশাল সহায়তা অনুমোদন : ইউক্রেনকে সহায়তার জন্য চার হাজার কোটি ডলারের এক প্যাকেজ অনুমোদন দিয়েছে মার্কিন কংগ্রেস। ইউক্রেনের নৌবহর ও আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা আরো শক্তিশালী করার প্যাকেজও এর অন্তর্ভুক্ত।
ন্যাটোর সদস্য বৃদ্ধি নিয়ে পশ্চিম-এরদোয়ান আলাপ : সুইডেন ও ফিনল্যান্ডের ন্যাটোতে যোগদানের তীব্র বিরোধীতাকারী তুরস্ক বিভিন্ন পশ্চিমা নেতার সঙ্গে কথা বলতে শুরু করেছে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোয়ান শুক্রবার জানান, ডাচ্ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এদিনই ফোনে তাঁর কথা হয়েছে। শনিবার যুক্তরাজ্য ও ফিনল্যান্ডের নেতৃত্বের সঙ্গে কথা হবে। এ ছাড়া ন্যাটো মহাসচিব জেনস স্টোলটেনবার্গের সঙ্গেও তিনি কথা বলবেন। নিজস্ব রাজনৈতিক ও কৌশলগত কারণে সুইডেন ও ফিনল্যান্ডের ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার বিরোধিতা করছে তুরস্ক। সূত্র: এএফপি, বিবিসি