১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাঙালি জাতি পরাধীনতার শিকল ভেঙে প্রথম স্বাধীনতার স্বাদ গ্রহণ করে। এই দিনে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) নতমস্তকে আত্মসমর্পণ করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। সেই থেকে ১৬ ডিসেম্বর বাঙালির বিজয়ের দিন, বাঙালি জাতির গৌরবের দিন। বিশ্ব মানচিত্রে লাল–সবুজের পতাকার স্থান পাওয়ার দিন, গৌরবোজ্জ্বল মহাঅর্জন এবং পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে প্রাণভরে নিঃশ্বাস নেওয়ার দিন।
এই দিনেই বাঙালি জাতির ভাগ্যাকাশে দেখা দেয় এক নতুন সূর্যোদয়। প্রভাত সূর্যের রক্তাভা ছড়িয়ে পড়ে বাংলাদেশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে। সমস্বরে একটি ধ্বনি যেন নতুন বার্তা ছড়িয়ে দেয় ‘জয় বাংলা’ বাংলার জয়, পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে, রক্ত লাল, রক্ত লাল, রক্ত লাল। বীরের জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ হওয়ার পাশাপাশি পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন ভূখণ্ডের নাম জানান দেওয়ার দিন আজ।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৪৮ সাল থেকে ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৬৬’র ছয় দফা, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭১ এর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ, ২৫ মার্চে গণহত্যা শুরু হলে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা, ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার গঠন এবং রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে ৩০ লাখ শহীদ ও দুই লাখ মা-বোনের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয় স্বাধীনতা। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাক সেনাদের আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়। সেই হিসাবে বিজয়ের ৫১ বছর পূর্তির দিন আজ।
জাতীয় পর্যায়ে ঢাকায় আজ প্রত্যুষে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির সূচনা হবে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এরপর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর নেতৃত্বে উপস্থিতিতে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি কূটনীতিকরা, মুক্তিযুদ্ধে মিত্রবাহিনীর সদস্য হিসেবে অংশগ্রহণকারী আমন্ত্রিত ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদস্যরা এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন।
এছাড়া সকাল সাড়ে ১০টায় তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরে জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে সম্মিলিত বাহিনীর বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হবে। রাষ্ট্রপতি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করবেন। প্রধানমন্ত্রীও এ কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বাণী দিয়েছেন। দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে এ দিন সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করছে।
৯ মাসের দুঃস্বপ্নের অবসান ঘটিয়ে বাঙালি জাতির জীবনে এ দিন এসেছে নতুন প্রভাত। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সূচিত হয় মুক্তিযুদ্ধের অনিবার্য বিজয়। এর মধ্য দিয়ে আসে হাজার বছরের কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা। বাঙালি জাতি এ দিন অর্জন করে তার ভাগ্য নিয়ন্ত্রণের অধিকার। ৩০ লাখ শহীদের রক্ত আর ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে স্বাধীনতা ধরা দেয় বাঙালির জীবনে। যে কারণে আজ ১৬ ডিসেম্বর বাঙালির বিজয়ের দিন, বাঙালি জাতির গৌরবের দিন। বিশ্ব মানচিত্রে লাল–সবুজের পতাকার স্থান পাওয়ার দিন, গৌরবোজ্জ্বল মহাঅর্জন এবং পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে প্রাণভরে নিঃশ্বাস নেওয়ার দিন। জাতির প্রতিটি সন্তান ১৬ ডিসেম্বর বিশেষ গুরুত্ব সহকারে বাঙালির বিজয়ের দিনটি পালন করে আসছে।