সনাতন ধর্মালম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব সরস্বতী পূজা আজ বৃহস্পতিবার (২৬ জানুয়ারি)। ধর্মীয় বিধান অনুসারে, শ্বেত হংসের পিঠে চড়ে পৃথিবীতে নেমে আসবেন বিদ্যা ও ললিতকলার দেবী। কৃপা লাভের আশায় দেবীকে আহ্বান করবেন ভক্তরা। রাজধানী ঢাকাসহ দেশজুড়ে আয়োজন করা হয়েছে পূজার, ঢাকা-ঢোল-কাঁসর, শঙ্খ ও উলুধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠবে দেশের বিভিন্ন পূজামণ্ডপ।
শাস্ত্র অনুসারে, মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের পঞ্চমী তিথিতে সরস্বতী পূজা হয়। এ তিথি বসন্ত পঞ্চমী নামেও পরিচিত। শ্বেত-শুভ্র বসনা স্বরসতী দেবীর এক হাতে বেদ, অন্য হাতে বীণা। এজন্য তাকে বীণাপানিও বলা হয়। সনাতন ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, জ্ঞান ও বিদ্যার অধিষ্ঠাত্রী দেবী তার আশীর্বাদের মাধ্যমে মানুষের চেতনাকে উদ্দীপ্ত করতে প্রতি বছর আবির্ভূত হন ভক্তদের মাঝে। সরস্বতী খুশি হলে বিদ্যা ও বুদ্ধি অর্জিত হবে। ঐশ্বর্যদায়িনী, বুদ্ধিদায়িনী, জ্ঞানদায়িনী, সিদ্ধিদায়িনী, মোক্ষদায়িনী এবং শক্তির আঁধার হিসেবে সরস্বতী দেবীর আরাধনা করা হয়। তিনি বাগদেবী, বাগদেবী অর্থে তিনি নব হৃদ পবিত্র করেন। তিনি সুন্দর ও মর্ত্যবাক্যের প্রেরণকাত্রী। তিনি মহাসমুদ্রের মতো পরমাত্মার প্রকাশ করেন। তিনি সমুদয় মানব-মানবীর হৃদয়ে জ্যোতি সঞ্চারিত করেন। পরমাত্মার মুখ থেকে তার আবির্ভাব।
মধ্যরাতে প্রতিমা প্রতিষ্ঠার পর ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী সকালে দেবীকে দুধ, মধু, দই, ঘি, কর্পূর, চন্দন দিয়ে স্নান করানো হয়। এর পর চরণামৃত নেবেন ভক্তরা। এসবের পরে হবে বাণী অর্চনা। পুরোহিতরা ‘সরস্বতী মহাভাগে বিদ্যে কমললোচনে/বিশ্বরূপে বিশালাক্ষী বিদ্যাংদেহী নমোহস্তুতে’ এ মন্ত্রে বিদ্যার দেবী সরস্বতীর আরাধনা করবেন, পূজার আচার পালন করবেন। এর পর ভক্তরা দেবেন পুষ্পাঞ্জলি। সকাল হতে উপবাস থেকে মন্ত্র উচ্চারণের মাধ্যমে ভক্তরা প্রার্থনা জানাবেন বিদ্যাধিষ্ঠাত্রীর।
পূজা উপলক্ষে সারা দেশের বিভিন্ন পূজা মণ্ডপ ছাড়াও স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঘরে ঘরে সরস্বতী পূজার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। পূজা ছাড়াও পূজা ছাড়াও অন্য অনুষ্ঠানমালায় আছে পুষ্পাঞ্জলি প্রদান, প্রসাদ বিতরণ, ধর্মীয় আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সন্ধ্যা আরতি, আলোকসজ্জা প্রভৃতি। দেবীর সামনে ‘হাতেখড়ি’ দিয়ে শিশুদের বিদ্যা চর্চার সূচনা হবে অনেক স্থানে।
রাজধানীর স্বরসতী পূজার অন্যতম কেন্দ্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে এবার ৭৩টি মণ্ডপে পূজার আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়াও দ্বিতীয় বৃহত্তম আয়োজন করা হয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে, সেখানে ৩৬টি মণ্ডপ সাজানো হয়েছে। এছাড়াও রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও পূজার আয়োজন করা হয়েছে।