আব্দুর রশিদ, খুলনা থেকে:- খুলনার চুকনগর গণহত্যা বিশ্বের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে সব চেয়ে বড় গণহত্যা। এই গণহত্যা বাংলা তথা বিশ্বের ইতিহাসে স্বর্ণ অক্ষরে লেখা থাকবে অনন্তকাল । খুলনা শহর থেকে ৩২ কি: মি: পশ্চিমে চুকনগর পাতোখোলা বিলে শহীদের স্বরণে স্মৃতি সৌধটি অবস্হিত । চুকনগর গণহত্যা একটি সামরিক গণহত্যা যা পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ১৯৭১ সালের (২০শে মে) মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এই হত্যাযঙ্গ সংঘটিত হয় । গণহত্যায় নিহত অধিকাংশই বটিয়াঘাটা, বাগেরহাট রামপাল,চিতলমারী,স্বরণখোলা, ও পাশ্ববর্তী কয়েকটি জেলার কিছু অধিবাসীও এখানে গণহত্যার শিকার হন। এই গণহত্যাটি অন্তত ১বর্গ কিলোমিটার এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নির্মমভাবে নির্বিচারে অসহায় মানুষদের উপরে গুলি করে হত্যা করা হয়। পুটিমারি বিল, ভদ্রা নদী, গ্রামের কিছু পুকুর, চুকনগর বাজার, বাজারের কালী মন্দির প্রভৃতি স্থানে পাকিস্তানি সেনা গুলি চালায়। নিরিহ মানুষদের উপর ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা ধরে পাকিস্তানি সেনারা গুলি চালায়।
গণহত্যায় নিহতের আনুমানিক সংখ্যা ১০ বা ১২ হাজার হবে। সে সময় নিহতদের লাশ অপসারণে চুকনগরের বেহারা পাড়ার ওয়াজেদ আলীর নেতৃত্বে ৪ বা ৫ হাজার লাশ চুকনগর ভদ্রা নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। তাদের কিছু অধিবাসী প্রত্যক্ষ ভাবে কাজ করেছিল এবং তাদের বর্ণনা মতে এ তথ্য পাওয়া যায় । তারা জানান ৪ বা ৫ হাজারেরও বেশি লাশ গর্ণনা করে ছিলেন বলে দাবি করেন। এই গণহত্যায় নিহত দুই শতাধিক ব্যক্তির নাম-পরিচয় উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। এই গণহত্যটি ইতিহাসে বিরল। চুকনগর শহরটি ভারতের নিকটবর্তী হওয়াই এখানে দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে মুসলিমের চেয়েও হিন্দু সম্প্রদায়ের বেশী লোক নদী পথে আসেন যেমন কাজিপাশা, খরিয়া, ঘ্যাংরাইল প্রভৃতি নদী ও শাখা নদী পথে এবং কাঁচা রাস্তা দাকোপ, বটিয়াঘাটা,রামপাল, তেরখোদা ফকিরহাট হয়ে লোকজন খুলনা হয়ে চুকনগরে এসে লোকজন জড়ো হয়। সে সময় ভারতে যাওয়ার জন্য চুকনগর ছিল ট্রানজিট পয়েন্ট। ভারতের পথে রওনা হওয়া লোকজন বিশ্রাম, সিমান্ত পর্যন্ত পরবর্তী পথের অবস্থা সম্পর্কে খোজ খবর নেওয়া জন্য যানবাহন করে এখানে আসত। এখান থেকে ভারতে যাওয়ার শট-কাট মুল রাস্তা ছিল মঙ্গলকোট হয়ে সরসকাটি বাজার থেকে কলারোয়া হয়ে ভারতে পৌছানো ।
ফলে নৌকা এবং বিভিন্ন জিনিস পত্র পানির দামে বেচে দিয়ে তাদের হালকা হতে হত। কিন্তু মে’ মাসের তৃতীয় সপ্তাহে দাকোপ, বটিয়াঘাটা, ডুমুরিয়া, রামপাল শরণখোলা, বাগেরহাট, গোপালগঞ্জ,মাদারিপুর, চালনা, বাজুয়া প্রভৃতি এলাকার লোক একযোগে দল সংঘবদ্ধ ভাবে গ্রাম কে গ্রাম উজাড় করে লোকজন চলে আসে চুকনগর। সে দিন ছিল ১৯৭১ সালের ২০শে মে বৃহস্পতিবার। আটলিয়া ইউনিয়নের চুকনগর বাজার চাঁদনী, ফুটবল মাঠ, রায়পাড়া, পুঠিমারি, মালতিয়া, তাতিপাড়া, দাসপাড়া, প্রভৃতি গ্রাম পাতখোলার বিল, এবং ভদ্রা ও ঘ্যাংরাইল নদীর পাড়ে হাজার হাজার মানুষ ভারতের উদ্দ্যেশে পাড়ি দেবার জন্য গাইড ও যানবাহনের অপেক্ষারত ছিল। পুরো এলাকাটা ছিল প্রায় এক কিলমিটার ব্যাসার্ধের এরিয়া। ২০শে মে বেলা ১১টা সময় মিলেটারির দুটি দল একটি ট্রাক ও একটি জিপ গাড়িতে এসে চুকনগর বাজার উত্তর প্রান্তে এসে তারা থামে। প্রথমে তারা পাতখোলার বিলে এসে গুলি চালানো শুরু করে পরে চুকনগর বাজারের দিকে অগ্রসর হন।বিকাল ৩টা পর্যন্ত তারা গুলি চালাতে থাকে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী। পাক হানাদারের গুলিতল কয়েক ঘণ্টার মুহুর্তে লাশ আর লাশ চারিদিকে শুধগ লাশ। তিন চার ঘন্টার মধ্যে প্রায় ১০ থেকপ ১২ হাজার লোকে গুলি করে মেরে ফেলে। চুকনগর ভৌগলিক এলাকাটি মৃত্যু পুরিতে পরিণত হয়। চুকনগরে মৃত ব্যাক্তিদের সঠিক সংখ্যা গুনে নির্নয় করা না গেলেই প্রতাক্ষ্যদরশীদের মতে আনুমানীক দশ হাজারের বেশি হবে বলে জানা যায়। মৃত দেহ গুলি পাকবাহিনীরা ভদ্রা নদীতে নিক্ষেপ করে। এবং অবশিষ্ট দেহ গুলি স্থানীয় লোকজন পরে নদীতে ফেলে দেয়। বর্তমানে এই গণহত্যার স্মৃতি চারণে এখানে সরকারী ভাবে ১৯৯৫ সালে একটি স্মৃতি স্তম্ভ স্হাপন করা হয়েছে। বর্তমানে এটিকে সার্বিক দেখবাল করে আসছে। প্রতি বছর ১৯৭১ গণহত্যা স্মৃতি রক্ষা কমিটি
সভাপতি এবিএম শফিকুল ইসলাম সর্বদা কাজ করে চলেছন।
শহীদের স্বরণে গত ১২ মে এক প্রস্হতিমূলক সভা আয়োজন করেন। সেখানে আজ ২০ মে ১০ হাজার মোমবাতি প্রজ্জলন করা হবে। আজ ২০ মে দিন ব্যাপি নানা আয়োজন করেছেন। এটিকে জাতীয় ভাবে স্বীকৃতি আদায়ের জন্য গণহত্যা স্মৃতি রক্ষা কমিটি বিভিন্ন দপ্তরের মাধ্যমে কাজ করে চলেছেন। হত্যকান্ডে নিহতের স্মতির উদ্দ্যেশে চুকনগরে একটি স্থাপনা করা হয়েছে। এলাকা বাসি ও বিভিন্ন পর্যটকদের সরকারের কাছে দাবি এখানে শহীদদের স্বরণে একটি রেষ্ট হাউজ, যাদুঘর, খাবার পানির ব্যাবস্হা, নিহতদের নাম ফলক করার ব্যাবস্হা। চুকনগর থেকে স্মৃতিস্তম্ভে যাওয়ার জন্য একটি রাস্তার ব্যাবস্হা করার জোর দাবি করেছেন।