Imam Hossain
রাস্তায় ব্যানার হাতে একদল ছেলেমেয়েকে সাথে নিয়ে নারী নির্যাতন বিরোধী মানববন্ধন পালন করছে কলেজ পড়ুয়া এক তরুণ। চারিদিকে যখন নগরায়ন সেই সাথে গণহারে গাছপালা কাটার উৎসব চলছে তখন একজন সচেতন তরুণ নিজের এলাকার শিক্ষার্থীদের নিয়ে হাত খরচের টাকায় পালন করছে ‘সবুজ বাঁচাই,সবুজে বাঁচি” শিরোনামে বৃক্ষরোপণ অভিযান। করোনার ভয়াল থাবা এবং মানুষের অসচেতনতায় যখন পৃথিবী লন্ডভন্ড তখন কলেজ খরচের টাকায় বিক্সাচালকদের মধ্যে মাস্ক বিতরণ করে নিম্ন শ্রেণীর মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করছে এক কলেজ শিক্ষার্থী। ডেঙ্গু ভয়াবহতা থেকে শিশুদের সচেতন রাখতে বিভিন্ন স্কুলে ডেঙ্গু সচেতনতা সেমিনারে সভাপতিত্ব করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া এক তরুণ কিংবা কখনো রেলস্টেশন, রাস্তাঘাটসহ জনবহুল স্থান গুলো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করার উদ্যোগ গ্রহনেও তিনি সম্মুখ সারির একজন।ঈদ কিংবা উৎসবে দরিদ্র পরিবারে খাদ্য সামগ্রী এবং উপহার বিতরণে স্বচ্ছলদের আগ্রহী করতেও দেখা যায় তার চেষ্টা।তিনি বিশ্বাস করেন সুশীল সমাজ ও বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ বিনির্মানে তরুণ বিপ্লবের বিকল্প নেই এবং তিনি সেই বিপ্লবের একজন সম্মুখ যোদ্ধা হতে চান৷ উপরের এই প্রতিটি ঘটনা বাংলাদেশের সনামধন্য বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক থেকে সংগৃহীত। যার কথা বলছিলাম তিনি রানা সরকার। পড়াশোনা করছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। গাজীপুরে জন্ম নেয়া রানা নিজেকে একজন ক্ষুদে লেখক,বক্তা এবং ইয়ুথ অ্যাকটিভিস্ট হিসেবে পরিচয় দিতেই বেশী স্বাচ্ছন্দ্যেবোধ করেন।রানার শৈশব কেটেছে গাজীপুরের কালীগঞ্জে।ছোটকাল থেকে পড়াশোনায় দারুণ মেধাবী ছিলেন তিনি৷ প্রথম শ্রেনী থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত ক্লাসের ফার্স্টবয় ছিলেন।জেএসসি পরীক্ষায় ট্যালেন্টপুল স্কলারশিপের সাথে পুরো উপজেলা ৪র্থ স্থান অর্জন করেন তিনি৷ শুধু একাডেমিক নয় কো-কারিকুলার অ্যাকটিভিটিসেও রানা ছিলেন সেরাদের সেরা। লেখালেখি,বিতর্ক, বক্তৃতা, আবৃত্তি, কুইজ,চিত্রাঙ্কন,ম্যাথ কম্পিটিশনসহ নানান ক্যাটাগোরিতে তিনি উপজেলা, জেলা কিংবা জাতীয় পর্যায়ে ধারাবাহিক ভাবে সেরা হয়েছেন।কিন্তু দশম শ্রেণীতে পা দেয়ার শুরুতেই একটি বিতর্ক কেন্দ্রীক ফেসবুক স্ট্যাটাসের কারনে স্কুল থেকে বহিস্কৃত হয় রানা। এই ঘটনার পর অনেকটাই থেমে যান তিনি৷ বেশ কয়েকবার করেছেন আত্মহত্যা চেষ্টা। তবে আত্নহত্যা করেন নি, বেঁচে ছিলেন৷ কিন্তু এসএসসি পরীক্ষায় ফলাফল ভরাডুবি।আশেপাশের মানুষের সমালোচনা এবং বন্ধুহীন হয়ে পড়ায় তীব্র হতাশায় ভোগেন তিনি৷ তবে হাল ছাড়েন নি, এরপর ২০২১ সাথে ঢাকার আমিরজান কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে অর্জন করেছিলেন জিপিএ-৫, সুযোগ পেয়েছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির৷ রানার জীবনের এই গল্পগুলো প্রকাশিত হয়েছে ‘আমার বিজয়ের গল্প ‘নামের একটি মোটিভেশনাল বইয়ে।আর তাই নানান হতাশা, দুর্দশা পেড়িয়ে রানা এখন স্কুল,কলেজ পড়ুয়া তরুণদের অনুপ্রেরণা৷হতাশা থেকে বেঁচে থাকার উপায় জানতে চাইলে তিনি বলেন,সকল ধর্ম মতেই পৃথিবী ক্ষনস্থায়ী, সুতরাং যেখানে এই বিশাল পৃথিবীই ক্ষনস্থায়ী সেখানে আপনার একটা ছোট্ট হতাশ কিংবা দুঃখ কোন ভাবেই চিরস্থায়ী নয়, স্বপ্ন দেখুন এবং ধৈর্য নিয়ে কাজ করুন হতাশা পেড়িয়ে ভালো দিন আসবেই। দেশের নানান স্কুল কলেজের আমন্ত্রণে তরুণদের নিয়ে কাজ করছেন তিনি৷ শিশু শিক্ষা, বাল্যবিবাহ,মাদক,ইভটিজিং, নারী নির্যাতন,পরিবেশ সুরক্ষাসহ নানান সেক্টরে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি৷ তিনি মূলত তরুণদের অনুপ্রেরণা এবং ভালো কাজে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতেই এইসব উদ্যোগ গ্রহন করেন৷বিভিন্ন পত্রিকা,রেডিও,টেলিভিশনের সাক্ষাৎকারে তরুণদের নানান সমস্যা এবং সমাধান নিয়ে কথা বলেন তিনি, চান সরকারের সহযোগিতা।এখানেই শেষ নয় অবসরে তিনি চলে যান গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোতে, শিশুদের সাথে পড়াশোনার নানান শিশু বান্ধব পদ্ধতি শেয়ার করেন।ন্যাশনাল এবং ইন্টারন্যাশনাল সেমিনার গুলোতে শেখা বিষয়গুলো তিনি ছড়িয়ে দিতে চান তরুণ সমাজে৷ প্রতিষ্ঠা করতে চান মাদকমুক্ত, আদর্শ ও যুক্তিনির্ভর তরুণ সমাজ। রানা একজন জাতীয় বিতার্কিক এবং বিতর্ক সংগঠক, বর্তমানে ন্যাশনাল ডিবেট ফেডারেশন বাংলাদেশ এর একজন উপ-পরিচালক হিসেবে সারা দেশে যুক্তিচর্চা ছড়িয়ে দিতে কাজ করছেন। পাশাপাশি তিনি বসুন্ধরা শুভসংঘের কালীগঞ্জ(গাজীপুর) শাখার সভাপতি হিসেবে তরুণদের নিয়ে নানান উন্নয়নমূলক কাজ করছেন৷ দায়িত্ব পালন করছেন ইন্টারন্যাশনাল ইয়ুথ কাউন্সিল এর কান্ট্রি ডিরেক্টর হিসেবে।ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানতে চাইলে রানা বলেন,আজীবন তরুণদের জন্য কাজ করতে চাই, আমি বিশ্বাস করি পৃথিবীর আসন্ন বিপ্লব তরুণ বিপ্লব। আমি সেই বিপ্লবের একজন যোদ্ধা হতে চাই, চাই পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ বিনির্মানের একজন স্বপ্ন সারথি হতে৷