Saturday , 20 April 2024
শিরোনাম

আধুনিকতার মাঝে চাঁদপুর বিভিন্ন গ্রামের ঐতিহ্য হাতে ভাজা গিগজের মুড়ি প্রায় বিলুপ্তির পথে

মনির হোসেন (স্টাফ রিপোর্টার-চাঁদপুর):
পবিত্র মাহে রমজান মাসে মুড়ি ছাড়া বাঙালির ইফতার কল্পনাও করা যায় না এখনো। ইফতারে অন্য আইটেমের কমতি থাকলেও মুড়ি চাহিদা এখনো কমেনি। বিশেষ করে হাতে ভাজা মুড়ির চাহিদা এখনো আকাশ চুম্বি। কিন্তু আধুনিক যান্ত্রিক ব্যবস্থার যাঁতাকলে পড়ে ঐতিহ্যের ধারক হাতে ভাজা গিগজ ধানের দেশি মুড়ি বিলুপ্ত হওয়ার পথে।
গত কয়েক বছর পূর্বেও চাঁদপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলায় রমজান উপলক্ষে বিভিন্ন গ্রামে হাতে ভাজা মুড়ি ব্যপকতা দেখা গেলে ও আধুনিকতার বিবর্তনে সেই ভাবে দেখা যাচ্ছে হাতে ভাজা সেই গিগজের মুড়ি।
সরজমিনে গিয়ে চাঁদপুর ফরিদগঞ্জ উপজেলার চরদু:খিয়া পূর্ব ইউনিয়নের পশ্চিম আলোনিয়া, পূর্ব আলোনিয়া গ্রামে, রূপসা উত্তর ইউনিয়নের রূপসা, সুবিদপুর পুর্ব ইউনিয়ন ও গুপ্টি পূর্ব ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম মুড়ির গ্রাম হিসেবে খ্যাত ছিলো। রমজান মাস আসলেই ওই গ্রামের প্রায় সব বাড়িতেই মুড়ি ভাজার ধুম লেগে থাকতো। গিগজ ধানের মুড়ি, যার খ্যাতি ছিল সর্বত্র। কিন্তু কালক্রমে যান্ত্রিকতার ছোয়ায় হাতে ভাজা মুড়ির বাজার দখল হয়ে গেছে।
উপজেলার চরদুঃখিয়া পূর্ব ইউনিয়নের পশ্চিম আলোনিয়া গ্রামের ছৈয়াল বাড়ির পলাশ দাস অভাব-অনটনের কথা বলে তিনি জনপ্রতিনিধিদের ওপর বিভিন্ন রকম ক্ষোভ প্রকাশ করেন। কারণ হিসেবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মুড়ি ভাজা বর্তমানে বিলুপ্তির পথে। এ এলাকায় শত শত মুড়ি ভাজার লোক ছিলো। কিন্তু জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে কোনোরকম সহযোগিতা এবং সরকারের পক্ষ থেকে কোনরকম দান অনুদান না পাওয়ার কারণে ঐতিহ্যবাহী এই গিগজ ধানের মুড়ি হারিয়ে যাওয়ার পথে।
খোকন নামের একজন বলেন, এক সময় আলোনিয়া গ্রামের প্রতিটি বাড়িতেই মুড়ি ভাজা হতো এবং এই গ্রামের মুড়ি দিয়ে আশপাশের উপজেলা গুলোতে মুড়ির চাহিদা পূরণ করা হতো। তিনি আরো বলেন, এখানে কয়েকটি পরিবার গিগজ ধানের হাতে ভাজা মুড়ি এখনও ভাজে। আর তা ধরে রাখার কারণ হলো, বাপ-দাদাদের ঐতিহ্যকে ধরে রাখা এবং অন্য কোনো কাজ পারে না বিধায় সংসার চালানোর প্রয়োজনে।
বিনয় কৃষ্ণ দাস নামের একজন বলেন, এই গিগজ ধানের মুড়ি অত্যন্ত সুস্বাদু। বর্তমান বাজারে সচরাচর যে মুড়িগুলো পাওয়া যায়, সেগুলো কেমিক্যালযুক্ত এবং যান্ত্রিকভাবে তৈরি।
শীতল নামের একজন জানান, চাঁদপুর জেলায় বেশির ভাগ মুড়ির চাহিদা ফরিদগঞ্জের আলোনিয়া থেকে মেটানো হতো। অনেক কষ্টে মুড়ি ভেজে হাটে নিয়ে মুড়ি বিক্রি করতাম। তখন প্রচুর চাহিদাও ছিল। কিন্তু এখন ধানের দাম, চালের দাম, লাকড়ির দাম দুই-তিন গুণ বেড়ে যাওয়ায় এই মুড়ি ভাজা থেকে অনেকে সরে গেছে।
মুড়ি ভাজা ছেড়ে দেওয়া মদন চন্দ্র দাস বলেন, ‘এক মণ চালের মুড়ি তৈরি করতে ২-৩ দিন সময় ব্যয় হয়। বর্তমানে ধানের দাম বৃদ্ধি, পোড়ানোর কাজে ব্যবহৃত খড়ি ছাড়াও আনুষঙ্গিক খরচ মিলিয়ে প্রতি কেজি মুড়ি উৎপাদনে গড়ে খরচ হয় প্রায় ১০০ টাকা। হাতে তৈরি মুড়ি কেমিক্যাল মুক্ত, খেতে সুস্বাদু হয়। এছাড়া ৩০/৪০ দিন ঘরে রাখলেও এর স্বাদের কোনো পরিবর্তন হয় না। এ শিল্পের কারিগরদের কথা, সরকারের একটু সহায়তা পেলে এই শিল্প বাচানো সম্ভব’।

Check Also

বাসের ধাক্কায় নারী পোশাক শ্রমিকের মৃত্যু

গাজীপুরের কালীগঞ্জ মধ্য চুঘারি খোলা এলাকায় বাসের ধাক্কায় মোছা. জুলেখা বেগম (৩৫) নামে এক পোশাক …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

x