Imam Hossain
বর্তমানে আমাদের চারপাশে একাকিত্ব বা মানসিক সমস্যায় ভুগে থাকেন অসংখ্য মানুষ। তবে এসকল মানুষ নিজের ব্যাক্তিগত সমস্যা অন্যের কাছে শেয়ার করতে ভয় পান তাই পাননা তাদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ। আবার অনেক ক্ষেত্রে পরামর্শের জন্য সঠিক লোক খুঁজে পাওয়াও কঠিন হয়ে উঠে।
আবার হুট করেই কারো সঙ্গে মন খারাপের কথা গুলো শেয়ার করতে ইচ্ছে করছে কিন্তু কার সঙ্গে শেয়ার করবেন ঠিক বুঝে উঠতে পারছেন না। তখনই হয়তো একটা প্লাটফর্ম খুঁজে পেলেন আর সেখানে গিয়ে নিজের নাম পরিচয় গোপন রেখে কোন একজন বন্ধুর সঙ্গে নিজের মন খারাপের কথা গুলো শেয়ার করলেন। তবে এবার এই ব্যাপারটিই সত্য হয়েছে বাংলাদেশে। এমন দারুণ সব আইডিয়ার পিছনে যে মানুষটা আছে তার নাম রেহানুজ জামান। তিনি তৈরি করেছেন মাইন্ডি (www.mindybd.com) – প্লাটফর্ম। যেখানে আপনি আপনার পরিচয় গোপন রেখেই মন খারাপের বিষয়গুলো শেয়ার করতে পারবেন। এখনো পর্যন্ত প্রায় দুই হাজার এরও বেশি মানুষকে সেবা দিয়ে এসেছে।
বর্তমানে রেহানুজ ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে দ্বিতীয় বর্ষের একজন শিক্ষার্থী । একদম কোভিড ১৯ মহামারির প্রায় শুরু থেকে। চারদিকে মানুষ যখন মহামারি নিয়ে শঙ্কিত, ঘরে বন্দি, ঠিক সেই সময়টাকেই কাজে লাগিয়েছেন নিজের স্কিল ডেভেলপমেন্টে। সবসময়-ই ইচ্ছে ছিল নতুন কিছু করার। হঠাৎ একদিন পেয়েও গেলেন সে সুযোগ। ইউনিসেফ বাংলাদেশ এবং জেনারেশন আনলিমিটেড এর যৌথ উদ্যোগে সে বছর শুরু হয় জেনারেশন আনলিমিটেড ২.০। যেখানে চ্যালেঞ্জ ছিল এই মহামারিতে কিভাবে ঘরে বসে প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা চলমান রাখা যায়। যেই ভাবা সেই কাজ। একটা টিম বানিয়ে নেমে পড়েন মাঠে। এরপরের গল্পটা হয়তো অনেকেই আঁচ করতে পারছেন। সেবার মাত্র ১৭ বছর বয়সেই বংলাদেশ পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন এবং পরবর্তিতে গ্লোবাল রাউন্ডে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে সম্মানসূচক অনারেবল মেনশন হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয় তার সেই কুয়ালিফাই রানার প্রজেক্ট-টি। এরপর কাজ করেছেন ইউনিসেফ, জেনারেশন আনলিমিটেড, এ টু আই (a2i) , আই ল্যাব (iLab) এর মত বিভিন্ন অর্গানাইজেশন এর সাথে।
এর আগে কাজ করেছেন, ইউনিসেফ বাংলাদেশ -পরিচালিত যুব সংসদে যেখানে প্রতিনিধিত্ব করেছেন বাংলাশের সংসদীয় আসন ঢাকা – ১৮ এর হয়ে। এছাড়াও কাজ করেছেন ইউনিসেফ বাংলাদেশের আরেকটি প্রকল্প শিশু সাংবাদিকতায় বিশ্বের প্রথম বাংলা সাইট হ্যালোতে এবং বলেছেন শিশুদের অধিকার এর কথা। সেখান থেকে তার ক্যামেরার সামনে কথা বলা শুরু।
এখানেই কি থেমে যায় যাত্রা? একদমই না। তবে তার মতে আমাদের চারপাশের সমস্যা গুলোর সমাধান নিয়ে কাজ করার প্রেরণাটা সেখান থেকে শুরু। এরপর একে একে কাজ করেছেন কখনো মেন্টাল হেলথ নিয়ে। কখনো বা কিভাবে প্লাস্টিক রিসাইকেল চেইন মেইনটেইন করা যায় তা নিয়ে। আবার দৃষ্টি প্রতিবন্ধিদের জন্যও ডিজাইন করেছেন ন্যাভিগেশন সিস্টেম।
তার মতে, আমাদের চারপাশের সমস্যা গুলো নিয়ে অভিযোগ কিংবা হা-হুতাশ না করে সেগুলো কিভাবে সমাধান করা যেতে পারে সেদিকেই বরং আমাদের মনোযোগ দেয়া উচিত।
তিনি শুধু যে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান নিয়ে কাজ করছেন, তা কিন্তু না। বর্তমানে পড়াশোনার পাশা-পাশি নেদারল্যান্ডস এ্যাম্বাসি এবং আইকেই (IKEA) ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে বাংলাদেশ ইয়ুথ লিডারশীপ সেন্টা (BYLC) -এর একটি প্রজেক্ট -এ লিডারশীপ ডেভলপমেন্ট ফ্যাসিলেটর হিসেবে বাংলাদেশের তরুনদের লিডারশীপ ডেভেলপমেন্ট নিয়েও কাজ করছেন তিনি।
এত সব কিছুর পরও এক্সট্রা কারিকুলার এক্টিভিটি তে কিন্তু কোনভাবে-ই পিছিয়ে নেই। নিয়মিত বিভিন্ন প্লাটফর্ম এবং প্রোগ্রামে উপস্থাপক এর ভূমিকাতেও তাকে দেখা যায়। যেখানে কথা বলার জড়তার কারণে ছোট বেলায় খুব একটা কথা বলতেন না। সেখানে নিজের কথার মূর্ছনায় দর্শকদের মাতানাই যেন এখন তার কাজ।
এর বাইরে বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহণ আর সেখান থেকে প্রাপ্তির ঝুলিটাও নেহাতই কম নয়। নাসা স্পেস এ্যাপস চ্যালেঞ্জ -২০২২ এর জোন লেভেলে চ্যাম্পিয়ন ও গ্লোবাল নমিনি। হাল্ট প্রাইজের ক্যাম্পাস রাউন্ডে ফ্যাশন রিডিজাইনিং নিয়ে কাজ করে চ্যাম্পিয়ন এবং তিউনেশিয়া সামিটে অংশগ্রহণ এর আমন্ত্রন। Start Koro 2.0 -এর বিজয়ী আরো কত কি।
এর বাইরেও, তার পরিকল্পনা রয়েছে তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর স্কিল ভেভলপমেন্ট এবং সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মাঝে লিডারশিপ কোয়ালিটি ডেভেলপমেন্ট নিয়ে কাজ করার।
আগামীতে ক্লাইমেট চেঞ্জ নিয়ে কাজ করার ইচ্ছে বহুদিনের এই বাংলাদেশী তরুনের। এরই অংশ হিসেবে ইতমধ্যেই কয়েকজন বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে গ্রিন স্কিল শেখার একটি প্লাটফর্ম -এরও পরিকল্পনা করে ফেলেছেন। আর এভাবেই রেহানুজ জামান স্বপ্ন দেখেন একটি নিরাপদ পৃথিবীর। যে পৃথিবী আপনার আমার সবার ।