প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরকালে সেখানের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
রবিবার (৬ মার্চ) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর নিয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে বক্তব্য রাখেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব) মাশফি বিনতে শামস।
ড. মোমেন বলেন, আগামী ৭-১২ মার্চ শেখ হাসিনা সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর করবেন। সংযুক্ত আরব আমিরাতের উপ-রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী ও দুবাইয়ের শাসক মুহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুম প্রধানমন্ত্রীকে গত বছরের ৩ আগস্ট সে দেশে দ্বিপাক্ষিক সফরসহ দুবাই এক্সপো ২০২০ উপলক্ষে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালনের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন।
বিশেষ করে ১৬ ডিসেম্বর, ২০২১ ‘বাংলাদেশ ডে’ হিসেবে পালন করার একটি প্রস্তাবনা তাদের ছিল। কিন্তু রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যস্ত থাকায় সেই সফরটি সম্ভব হয়নি। তারপরও আগামী ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন উপলক্ষে এক্সপোতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণসহ দ্বিপাক্ষিক সফরের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে তিনি পুনরায় আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, আমাদের দেশের একটি বড় শ্রমবাজার হলো মধ্যপ্রাচ্যের সংযুক্ত আরব আমিরাত। ২০০৯ সাল থেকে শুরু করে এ একটি দেশ থেকেই বাংলাদেশে যে পরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছে তা বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের জন্য দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। সম্প্রতি সংযুক্ত আরব আমিরাতের উন্নয়ন পরিকল্পনা ও সে মোতাবেক কর্মযজ্ঞে আমাদের দেশের শ্রমবাজারের জন্য অনন্য সুযোগ তৈরি হয়েছে।
ড. মোমেন বলেন, আমরা আরেকটি সাফল্যের কথা উল্লেখ করতে চাই। সংযুক্ত আরব আমিরাত এ করোনাকালীন দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পরেও আমাদের জন্য তাদের শ্রমবাজার আংশিক খুলে দিয়েছে, যা আমাদের একটি কূটনৈতিক সাফল্য। আমি এর জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকারকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।
গত অর্থবছরে এ করোনার সময়েই বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৩০ হাজার শ্রমিক সংযুক্ত আরব আমিরাতে গিয়েছে। আমরা আশা করছি, ভবিষ্যতে এ সংখ্যা আরও বাড়বে।
তিনি বলেন, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে আমাদের মোট আমদানি-রপ্তানির পরিমাণ প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার। তবে বাণিজ্য ঘাটতি এখনও দেড় বিলিয়ন ডলারের মতো। এর মূল কারণ আমরা তাদের থেকে জ্বালানি তেল আমদানি করে থাকি। আমাদের রপ্তানির পরিমাণ সে দেশে আরও বাড়ানোর জন্য এ সফরে গুরুত্বারোপ করা হবে।
সেজন্য বাংলাদেশের সঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যে সরাসরি নৌ যোগাযোগ নিয়ে আলোচনা করা হবে। আমি যখন ফেব্রুয়ারি মাসে সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরে গিয়েছিলাম সে সময় এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। এবার প্রধানমন্ত্রীর সফরে তা আরও জোরদারভাবে উপস্থাপন করা হবে।
এর পাশাপাশি বাংলাদেশের সঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সম্পর্ক আরও জোরালো করতে দুদেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের মধ্যে জয়েন্ট বিজনেস ফোরামের আয়োজন করা হবে, যা আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য খুবই লাভজনক হবে বলে আমি মনে করি। সৃষ্টি হতে পারে বিনিয়োগের নতুন ক্ষেত্র।
ড. মোমেন বলেন, আমরা নবায়নযোগ্য জ্বালানি, জলবায়ু পরিবর্তনসহ টেকসই উন্নয়নের জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে সহযোগিতার ক্ষেত্র বাড়ানোর জন্য আলোচনা বসবো। এছাড়া আইসিটি, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের ক্ষেত্রে সহযোগিতার মাধ্যমে আমরা দুদেশের মধ্যে এক্সপেরিয়েন্স ও নলেজ শেয়ারিংয়ের নতুন নতুন অধ্যায় সূচনা করতে ইচ্ছুক, যা চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে আমাদের সক্ষমতা বাড়াবে।
তিনি বলেন, সংযুক্ত আরব আমিরাতের জাতির মাতা শেখ ফাতিমার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী সাক্ষাৎ করবেন, যা একটি দুর্লভ সুযোগ। এছাড়া তিনি দুবাই এক্সপোতে বাংলাদেশ পেভিলিয়ন ঘুরে দেখবেন যেখানে গত বছর থেকে বাংলাদেশের গল্প, বাংলাদেশের সাফল্য গাঁথা সমগ্র বিশ্বের সামনে নিষ্ঠার সঙ্গে তুলে ধরা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী এ সফরকালে রাস আল খাইমাতে বাংলাদেশি কমিউনিটি স্কুল ‘বাংলাদেশ ইংলিশ প্রাইভেট স্কুল’ এর নতুন ক্যাম্পাসে নির্মিতব্য ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন।