মোহাম্মদ ইরফানুল ইসলাম
সংযুক্ত আরব আমিরাত
প্রিয় রাসূলুল্লাহ (দ.) এর মুহাব্বত একজন মুমিনের ঈমানী মূলধন। রাসূলে পাক (দ.) কে আপন প্রাণের চেয়েও অধিক মুহাব্বত করতে না পারলে কেউ পূর্ণ ঈমানদার হতে পারে না। একবিংশ শতাব্দীতে এসে প্রিয় নবীজিকে নিজের প্রাণের চেয়েও অধিক ভালবাসার বেনজির দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন কাগতিয়া আলীয়া গাউছুল আজম দরবার শরীফের প্রতিষ্ঠাতা খলিলুল্লাহ, আওলাদে মোস্তফা, খলিফায়ে রাসূল (দ.) হযরত শায়খ ছৈয়্যদ গাউছুল আজম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু। চৌদ্দশত বছর পরে এসেও যিনি সরাসরি বাইয়াতে রাসূলের মাধ্যমে পেলেন ‘খলিফায়ে রাসূল’ এর অমূল্য মর্তবা। তাঁর প্রতিষ্ঠিত কুরআন-সুন্নাহ ভিত্তিক ও আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আক্বায়েদ সম্বলিত সিনা-ব-সিনা তাওয়াজ্জুহ বিশিষ্ট তরিক্বতে রয়েছে প্রিয় রাসূল (দ.)-কে প্রাণাধিক ভালবাসার বাস্তবিক শিক্ষা। হুব্বে মোস্তফা (দ.) হৃদয়ে ধারণ করে নিয়্যত সহকারে অত্যন্ত আদবের সাথে প্রিয় নবীজিকে হাজের-নাজের জেনে প্রতিদিন ১১১১ বার দরূদে মোস্তফা আদায় করার এই আধ্যাত্মিক শিক্ষা দিয়েছেন খলিফায়ে রাসূল (দ.) হযরত গাউছুল আজম (রা.)। সুন্নতের বাস্তব অনুশীলন রয়েছে যুগান্তকারী এই তরিক্বতে। যে তরিক্বতে এসে হুজুর পাক (দ.) এর বাতেনী নূর মোবারকের তাওয়াজ্জুহ নিলে মানুষের অন্ধকার কলব আলোকিত হয়ে যায়, উদাসীনতায় নিমজ্জিত কলবে আল্লাহর স্থায়ী জিকির সৃষ্টি হয়। ফলে কোন অবস্থাতেই বান্দা আল্লাহর স্মরণ থেকে আর গাফেল থাকে না।
সালানা ওরছে হযরত গাউছুল আজম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ও জামানার রাবেয়া বসরী, ফাতেমায়ে ছানী রুহানী আম্মাজান (রাহ.) এর সালানা ওফাত শরীফ স্মরণে আয়োজিত বিশাল ঈছালে ছাওয়াব মাহফিলে কাগতিয়া আলীয়া গাউছুল আজম দরবার শরীফের মাননীয় মোর্শেদ, আওলাদে রাসূল (দ.) হযরতুলহাজ্ব, আল্লামা, অধ্যক্ষ শায়খ ছৈয়্যদ মাননীয় মোর্শেদে আজম মাদ্দাজিল্লুহুল আলী প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, তাওয়াজ্জুহ এর মধ্যে রয়েছে এমন এক আধ্যাত্মিক শক্তি যার মাধ্যমে কলবে এখলাস সৃষ্টি হয়। যদ্দরুন ইবাদাত-বন্দেগীতে আসে বিনয়-একাগ্রতা-নম্রতা এবং অন্তরে সৃষ্টি হয় আল্লাহ তা’আলার ভয় ও নবীজির অকৃত্রিম মুহাব্বত। শুধু তাই নয়,‘তাওয়াজ্জুহ বিল গায়েব’ এর মতো বিশেষ ব্যবস্থার মাধ্যমে দূরবর্তী স্থানে অবস্থিত মহিলা তরিক্বতপন্থিদেরও তাওয়াজ্জুহ প্রদানের ব্যবস্থা রয়েছে এই তরিক্বতে। যদ্দরুন শরীয়তের বিধান পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে অনুসৃত হয়। ফয়েজে কুরআন তথা পবিত্র কুরআনের নূর বিতরণের মাধ্যমে মানুষের আভ্যন্তরীণ পরিশুদ্ধি করা হয়। তাইতো মুমিনে কামেল হওয়ার পূর্ণাঙ্গ পথপরিক্রমা রয়েছে হযরত গাউছুল আজম (রা.) এর এই তরিক্বতে। তাঁর এই রূহানী পথ অনুসরণে বান্দা আল্লাহ ও রাসূল (দ.) এর সন্তুষ্টি ও দয়া লাভ করে। বর্তমান বিশ্বে উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য হযরত গাউছুল আজম (রা.) এর এই তরিক্বত এক খোদায়ী নেয়ামত স্বরূপ ।
গত শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) দিনরাত ব্যাপি আমিরাতের ইন্টারন্যাশনাল উইনার্স ক্লাবে মুনিরীয়া যুব তবলীগ কমিটি বাংলাদেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত শাখাসমূহের উদ্যোগে আয়োজিত মাহফিলে সভাপতিত্ব করেন দুবাই কমিউনিটির জনপ্রিয় প্রবীণ ব্যক্তিত্ব ও সাংগঠনিক তদারক পরিষদের আহ্বায়ক আলহাজ্ব মুহাম্মদ হারুন এম.আজাদ। বক্তব্য রাখেন, মাওলানা মুহাম্মদ জাফর, মাওলানা মুহাম্মদ সেকান্দর বারী ও মাওলানা মুহাম্মদ মুজিবুল করিম সায়মন সহ আরও অনেকে।
এর আগে হুজুর কেবলার নুরানী তকরির মোবারক শ্রবণ করতে আমিরাতের রাজধানী আবুধাবি, বাণিজ্যিক রাজধানী দুবাই সহ সাতটি প্রদেশ থেকে আগত হাজার হাজার প্রবাসী বাংলাদেশি ছাড়াও ভারত, পাকিস্তান, স্থানীয় আরবী এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের উপস্থিতিতে ইন্টারন্যাশনাল উইনার্স ক্লাব রূপ নেয় জনসমুদ্রে। ক্লাবের বিশাল এরিয়াজুড়ে মাহফিলস্থলে কোথাও ছিল না তিল ধারণের ঠাঁই।
প্রধান মেহমান সংযুক্ত আরব আমিরাতের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় এই মাহফিল করার সুযোগ করে দেওয়ায় আবুধাবি দুবাইসহ আমিরাতের সাতটি প্রদেশের শাসক ও প্রশাসনকে ধন্যবাদ প্রদান এবং তাদের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এসময় আগত প্রবাসীরাও মাননীয় প্রধান অতিথির প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন ধর্মীয় এই বৃহৎ জমায়েত আমিরাতে বাংলাদেশের ইমেজ বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
উল্লেখ্য মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতার ও সালতানাত অব ওমানের শাখা সমূহের তরিক্বতপন্থিরাও আমিরাতে অনুষ্ঠিত এ মাহফিলে ভার্চুয়ালী যুক্ত ছিলেন।
মিলাদ ও কিয়াম শেষে মাননীয় প্রধান মেহমান দেশ, জাতি ও বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর সুখ, শান্তি-সমৃদ্ধি এবং কাগতিয়া আলীয়া গাউছুল আজম দরবার শরীফের প্রতিষ্ঠাতা হযরত গাউছুল আজম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর ফুয়ুজাত কামনা করে বিশেষ মুনাজাতের মাধ্যমে মাহফিলের সমাপ্তি করেন।