Saturday , 20 April 2024
শিরোনাম

আর কত বছর গৃৃহহীন থাকতে হবে মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা হরিরঞ্জন পরিবারের?

মিরদাদ হোসেন, লোহাগাড়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধিঃ
স্বাধীনতার অর্ধশত বছর পার হলেও মৃত বীর মুক্তিযুদ্ধা হরিরঞ্জনের স্ত্রী ও তার ছেলে মেয়ে নিয়ে গৃহহীনভাবে কষ্টের মধ্যে দিয়ে জীবন যাপন করছে। নিজস্ব কোন জায়গা না থাকায় পাচ্ছে না সরকারের দেওয়া ঘর।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, উপজেলার আমিরাবাদ ইউনিয়নের হাজারবিঘা ৬ নং ওয়ার্ড় হিন্দু পাড়ার গৃৃহহীন মৃত মুক্তিযুদ্ধা হরিরঞ্জনের স্ত্রী তার ৩মেয়ে ১ছেলে নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। নিজের কোন বাড়ী না থাকায় অন্যজনের পরিত্যাক্ত মাটির বাড়িতে বসবাস করে আসছিল তারা কিন্তু
এতোদিন থাকতে দিলেও এখন ঐ বাড়িতে আর থাকতে দিচ্ছে না বাড়ির মালিক। অন্যের থাকা বাড়ি থেকে তাদের বের করে দেওয়ায় গৃহহীনভাবে ৫ জন সদস্য নিয়ে অসহায়হীনভাবে দিন কাটাচ্ছে পরিবারটি।
উল্লেখ্য মুক্তিযুদ্ধা হরিরঞ্জনের নিজস্ব কোন জায়গা ও বাড়ি নেই। কারণ তার নিজ বাড়ি ছিলো কক্সবাজার জেলার কুতুবদিয়া দ্বীপে। যুদ্ধের আগে দ্বীপের ভাঙ্গনে বাড়িঘর বিলীন হয়ে যাওয়ার পর চট্টগ্রাম জেলাধীন লোহাগাড়া উপজেলার আমিরাবাদ ইউনিয়নের হাজারবিঘা ৬ নং ওয়ার্ডের হিন্দু পাড়ায় ২ ভাই এসে সামান্য জায়গা তার ভাই কৃষ্ণপদের নামে ক্রয় করে বাড়ি করে বসতি স্থাপন করে। কিন্তুু দুই ভাই একসাথে থাকলেও পরবর্তীতে বিয়ে করার পর সংসার প্রসারিত হওয়ার কারণে হরিরঞ্জনকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল।

মুক্তিযুদ্ধা কমান্ডার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মৃত হরিরঞ্জন একজন সাহসী যুদ্ধা ছিলেন। ভারি অস্ত্রগুলো ওনি চালাতেন। সরকার অসহায় মুক্তিযুদ্ধাদের জন্য বরাদ্দকৃত যে ঘর দিচ্ছে তার জন্য অনেক চেষ্টা করেছি, কিন্তুু নিজ খতিয়ানভুক্ত কোন জায়গা জমিন না থাকায় তা সম্ভব হচ্ছে না। এর জন্য আমি দুঃখ প্রকাশ করছি। তাই আমি লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি। মুক্তিযুদ্ধা হিসাবে চাই অসহায় মৃত হরিরঞ্জনের পরিবার একটু মাথা গুজার ঠায় হউক।
হরিরঞ্জন ২০০২ সালে মৃত্যু বরণ করার পর তার এক স্ত্রী, তিন কন্যা, এক ছেলে রেখে যান। ছেলেটিও হাবাগোবা শারিরীকভাবে অসুস্থ। দৈনিক কাজ কর্ম তেমন করতে পারে না।
মৃত মুক্তিযুদ্ধা হরিরঞ্জনের স্ত্রী বাসনা জানান, আমার স্বামী যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছেন। কিন্তুু আমাদের থাকার স্থায়ী কোন জায়গা ও ঘর নাই। যাযাবরের মতো দিন যাপন করছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার মুক্তিযুদ্ধাদের জন্য মাসিক ভাতা দিয়েছেন, তা না হলে হয়তো আমাদেরকে অনাহারে থাকতে হতো। আমার তিন মেয়ে এক ছেলের মধ্যে ছেলেটিকে বিয়ে করিয়েছি। তিন মেয়ের মধ্যে দুইটি মেয়েকে লোন নিয়ে বিয়ে দিলেও একটি এখনো অবিবাহিত। তিন লক্ষ টাকা ব্যাংক লোন, মাসিক ভাতা বিশ হাজার টাকার মধ্যে ৬৩০০/- টাকা কিস্তির টাকা পরিশোধ করে ১৩৭০০/- টাকা পাই। তা দিয়ে কোন রকম সংসার চালাই। আমাদেরকে একটি জায়গা সহ বাড়ি দিতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুতি জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে আমিরাবাদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইউনুছকে জানালে তিনি বলেন, মৃত মুক্তিযুদ্ধা
হরিরঞ্জনের স্ত্রী বাসনা ঘরের বিষয়ে আমাকে জানালে তাদের আশ্রয় প্রকল্প থেকে ঘরের ব্যবস্থা করে দিব জানালে তিনি আশ্রয় প্রকল্পে ঘর নিতে অনিচ্ছা পোষণ করে। অনিচ্ছা পোষণ সর্ম্পকে তিনি বলেন প্রায় ৪ যুগের ও বেশি সময় পর্যন্ত আমরা হিন্দু পাড়ায় আছি, সবার সাথে একটা আত্মার সম্পর্ক বন্ধন হয়ে গেছে। অতদূরে আমার যাওয়ার ইচ্ছে করে না। আমাকে পারলে আমার হিন্দু পাড়ার আশেপাশে একটা ঘরের ব্যবস্থা করে দেওয়া হউক। কিন্তুু পরিতাপের বিষয় এখনো অনেক প্রকৃত বীর সেনারা অবহেলিত অবস্থায় আছে। অনেকে আছে সম্মুখ রনাঙ্গনে যুদ্ধ করেছে, কিন্তুু সার্টিফিকেট না থাকায় সরকারের যে কোন সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত।

লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার আহসান হাবিব জিতু বলেন, তাদের বিষয়ে অবগত ছিলাম না। আপনার মাধ্যমে জেনেছি। যদি তাদের নিজস্ব কোন জায়গা না থাকে সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রালয়ে লিখিত আকারে জানাব। মন্ত্রালয় যদি খাস জায়গা বন্দোবস্ত করে বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়ার নির্দেশ দেয় তাদের বাড়ি নির্মাণ করে দিব

Check Also

ওমরাহ থেকে ফেরার সময় নির্ধারণ করে দিল সৌদি আরব

হজ শুরুর আগে যারা ওমরাহ পালন করতে গিয়েছেন তাদের ফিরে যাওয়ার জন্য সময়সীমা নির্ধারণ করে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

x