মধ্যপ্রাচ্যের নির্যাতিত রাষ্ট্র ফিলিস্তিনের অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমে অবস্থিত ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র আল-আকসা মসজিদ কম্পাউন্ডের ভেতরে ইহুদিদের প্রার্থনা বন্ধের জন্য ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে আরব লীগ। একই সঙ্গে আরব রাষ্ট্রগুলোর এই জোটটি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছে, এ ধরনের কর্মকাণ্ড মুসলিম অনুভূতির জন্য স্পষ্ট অপমান। এর ফলে ভবিষ্যতে ব্যাপক সংঘর্ষের সূত্রপাত হতে পারে।
বৃহস্পতিবার (২১ এপ্রিল) প্রতিবেদন প্রকাশের মাধ্যমে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা জানিয়েছে, পবিত্র আল-আকসা মসজিদকে ঘিরে সম্প্রতি ফিলিস্তিন এবং ইসরায়েলের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। এছাড়া ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনী পবিত্রতম মসজিদটির ভেতরে অভিযানের নামে কয়েক দফায় আগ্রাসন চালানোয় সহিংসতার ঘটনাও ঘটেছে।
গত রবিবার অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমে আল-আকসা মসজিদ চত্বরে ইসরায়েলি পুলিশের প্রবেশের পর ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে আবারও সংঘর্ষ ঘটে। সে সময় ২০ জন আহত হয়েছিলেন। ঘটনার দিন স্থানীয় সময় ভোরে ফজরের নামাজের পর ইসরায়েলি পুলিশ সেখানে অভিযানের নামে আগ্রাসন শুরু করে। আর তখনই নিরীহ ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
এর আগে গেল শুক্রবার পবিত্র আল-আকসা মসজিদ চত্বরে ইসরায়েলি পুলিশের অভিযানে দেড় শতাধিক ফিলিস্তিনি আহত হন। এছাড়া প্রায় ৩০০ ফিলিস্তিনিকে আটক করে দখলদার বাহিনী। শুক্রবার থেকে প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক ফিলিস্তিনি মসজিদে জড়ো হচ্ছেন এবং ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডে সেখানে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
প্রায় এক সপ্তাহ যাবত পবিত্র আল-আকসা মসজিদ ঘিরে উত্তেজনা চললেও আরব রাষ্ট্রগুলোর জোট আরব লীগ এতদিন এক রকম নীরবই ছিল। কিন্তু ইসরায়েলের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড এবং সহিংসতার প্রসঙ্গে বৃহস্পতিবার নীরবতা ভাঙে সংগঠনটি।
আরব লীগের দাবি, জেরুজালেমের পুরনো শহরে মুসলমানদের ইবাদতের অধিকার ক্ষুণ্ণ করছে ইসরায়েলের সৈন্যরা। এর পাশাপাশি পুলিশি নিরাপত্তার মাধ্যমে উগ্র জাতীয়তাবাদী ইহুদিদের পবিত্র এই স্থানে প্রবেশের সুযোগও করে দিচ্ছে দেশটি।
বৃহস্পতিবার নির্যাতিত রাষ্ট্র ফিলিস্তিন এবং আল-আকসার পরিস্থিতি নিয়ে জর্ডানের রাজধানী আম্মানে জরুরি বৈঠকে বসেছিল আরব লীগ। গুরুত্বপূর্ণ সেই বৈঠকে জেরুজালেমে ইসরায়েলের অবৈধ নীতি ও পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করা হয়।
বৈঠকের পর জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আইমান সাফাদি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তার দাবি, আমাদের দাবি স্পষ্ট যে, আল-আকসা এবং হারাম আল-শরীফের পুরো এলাকাটি একমাত্র মুসলিমদের ইবাদত করার স্থান।
এ দিকে আরব লীগের প্রধান আহমেদ আবুল ঘেইত মনে করেন, ইসরায়েল মুসলমানদের বহু শতাব্দীর পুরনো একটি নীতি লঙ্ঘন করছে। পুরনো এই নীতি অনুসারে- অমুসলিমরা আল-আকসা প্রাঙ্গণে যেতে পারে, কিন্তু তারা (অমুসলিমরা) কখনো সেখানে প্রার্থনা করতে পারবে না।
চলতি সপ্তাহে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনের সঙ্গে এসব বিষয়ে কথা বলেছিলেন জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আইমান সাফাদি। এছাড়া পবিত্র স্থানটিতে উত্তেজনা হ্রাসের প্রসঙ্গে আলোচনার জন্য গত বুধবার এই অঞ্চলে সফররত মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের সিনিয়র কর্মকর্তাদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছেন তিনি।
আইমান সাফাদি মনে করেন, ইহুদি উপাসকদের আল-আকসায় প্রবেশ বন্ধ করা হবে বলে তাকে আশ্বস্ত করেছে ইসরায়েল।
বিশ্লেষকদের মতে, মুসলমান এবং ইহুদি, দুই ধর্মাবলম্বীদের কাছেই ঐতিহাসিকভাবে আল-আকসা মসজিদ গুরুত্বপূর্ণ পবিত্র স্থান। মুসলিমদের জন্য পবিত্র আল-আকসা মসজিদটি তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় স্থান। আর মসজিদ চত্বর মুসলিমদের কাছে হারাম-আল-শরীফ হিসেবে পরিচিত।উল্লেখ্য, অবশ্য ইহুদি ধর্মাবলম্বীরাও এটিকে নিজেদের বলে দাবি করে থাকে। আর সেটি নিয়েই বহু যুগ যাবত ফিলিস্তিন, ইসরায়েল এবং মুসলিম বিশ্বের দ্বন্দ্ব। ইহুদি ধর্মাবলম্বীরা পবিত্র আল-আকসা মসজিদ ও এর আশপাশের অংশকে ‘টেম্পল মাউন্ট’ হিসেবে অভিহিত করে থাকে এবং তাদের জন্য এটি বিশ্বের সবচাইতে পবিত্র স্থান।