২০১৯ বিশ্বকাপে ইংলিশদের ঘরের মাঠে প্রথম শিরোপার স্বপ্ন দেখছিল নিউজিল্যান্ডও। শিরোপা নির্ধারণী ফাইনাল ম্যাচ ড্র হওয়ার পর সুপার ওভারেও হয়নি রেজাল্ট। পরবর্তীতে বাউন্ডারির হিসাবে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হয় ইংল্যান্ডকে। সমান লড়াইয়ের পরও এমন সমীকরণে পিছিয়ে পড়ার হতাশা হয়তো কিউইদের চেপে বসেছিল। এবার ২০২৩ বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচেই ইংলিশদের ৯ উইকেটে হারিয়ে তারই প্রতিশোধ নিয়েছে নিউজিল্যান্ড।
বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) হায়দরাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে ওয়ানডে বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের রীতিমত গুঁড়িয়ে দিয়েছে কিউইরা।
বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে প্রস্তুতি ম্যাচগুলোর চেয়ে কম সংগ্রহ-ই পেয়েছিল ইংল্যান্ড। তাদের দেওয়া ২৮২ রানের জবাবে কোনো পাত্তাই দেয়নি নিউজিল্যান্ড ব্যাটাররা। এক ম্যাচে কয়েকটি নজির গড়ে ডেভন কনওয়ে ও রাচিন রবীন্দ্র দুজনেই সেঞ্চুরি করেছেন। ফলে ৮২ বল এবং ৯ উইকেট হাতে রেখেই বিশাল জয় পেয়েছে কিউইরা। ২৮৩ রানের লক্ষ্য তাড়া পাড়ি দিয়েছে ৩৬.২ ওভারেই।
রান তাড়ায় শুরুতেই স্যাম কারানের লেগ সাইডে বেরিয়ে যাওয়া বলে ব্যাট ছুঁইয়ে উইকেটরক্ষকের ক্যাচ হয়ে গোল্ডেন ডাকে উইল ইয়ং ধাক্কা খেয়েছিল নিউজিল্যান্ড। দ্বিতীয় ওভারে দলীয় ১০ রানের মাথায় প্রথম উইকেট হারায় কিউইরা। এরপর ডেভন কনওয়ে আর প্রমোশন পেয়ে ওপরে আসা রাচিন রাবিন্দ্র রীতিমত রুদ্রমূর্তিতে আবির্ভূত হন। দুর্দান্ত সব শট খেলে ইংলিশ বোলারদের দিশেহারা করে ফেলেন তারা।
৮৩ বলে সেঞ্চুরি করেন কনওয়ে। তিন অংক ছুঁতে এক বল কম লাগে রাচিন রাবিন্দ্রর, যা কিনা আবার বিশ্বকাপে কিউই কোনো ব্যাটারের দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড। দ্বিতীয় উইকেটে কনওয়ে আর রাবিন্দ্র ২১১ বলে ২৭৪ রানের বিধ্বংসী জুটিতে ম্যাচ জিতিয়েই মাঠ ছাড়েন।
৯৬ বলে ১১ চার আর ৫ ছক্কায় ১২৩ রানে অপরাজিত থাকেন রাবিন্দ্র। ১২১ বলে ১৫২ রানের চোখ ধাঁধানো ইনিংসে ১৯টি চার আর ৩টি ছক্কা হাঁকান কনওয়ে।
এর আগে টস হেরে কিউইদের কাছ থেকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ পায় ইংল্যান্ড। ইংলিশদের হয়ে ইনিংস উদ্বোধনে নামেন জনি বেয়ারস্টো ও ডেভিড মালান। ম্যাচের শুরুতে দেখে খেলতে থাকেন দুই ওপেনার। প্রথম পাঁচ ওভার নির্বিঘ্নেই কাটিয়ে দিয়েছেন দুজন।
ম্যাচের অষ্টম ওভারের চতুর্থ বলে ম্যাট হেনরির বলে সাজঘরে ফেরেন ডেভিড মালান। আউট হওয়ার আগে ১৪ রান করেন তিনি। পরে ক্রিজে আসেন জো রুট। তাকে সঙ্গে নিয়ে দলীয় ইনিংস এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন বেয়ারস্টো। কিন্তু উইকেটে থিতু হওয়ার পর স্যান্টনারের বলে ড্যারিল মিচেলের তালুবন্দী হন জনি।
তার বিদায়ে উইকেটে এসেই মাঠের চারপাশ থেকে রান তুলতে থাকেন হ্যারি ব্রুক। কিন্তু রাবিন রবীন্দ্রর ঘূর্ণিতে পুল করতে গিয়ে ডেভন কনওয়ের তালুবন্দী হন। এর পরপরই গ্লেন ফিলিপসের বলে বোল্ড হন মঈন আলী।
চার উইকেট হারিয়ে খানিকটা চাপে পড়ে ইংলিশরা। তবে দলের হাল ধরতে উইকেটে আসেন ইংলিশ অধিনায়ক জস বাটলার। পরে দলীয় ইনিংসে এগিয়ে নেয়ার পাশাপাশি আসরের প্রথম ফিফটি তুলে নিয়েছে ডানহাতি জো রুট। ম্যাচের ৩০তম ওভারের চতুর্থ বলে এক রান নিয়ে নিজের অর্ধ শতক পূর্ণ করেন তিনি।
এরপরই উইকেটে থিতু হওয়া বাটলার ফিফটির আক্ষেপ নিয়ে সাজঘরে ফিরে যান। ম্যাট হেনরির বলে লাথামের তালুবন্দী হওয়ার আগে ৪৩ রান করেন ইংলিশ দলপতি।
পরে উইকেটে আসেন লিয়াম লিভিংস্টোন। কিন্তু ২০ রানে তিনিও সাজঘরে ফিরে যান। তার বিদায়ে উইকেটে আসেন স্যাম কুরান। ম্যাচের ৪২তম ওভারের প্রথম বলেই রুটকে বোল্ড করেন ফিলিপস। আউট হওয়ার আগে ৭৭ রান করেন এ ডানহাতি ব্যাটার।
নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে ইংলিশ বাহিনী। দলের হাল ধরতে উইকেটে এলেও দ্রুতই সাজঘরে ফেরেন ক্রিস ওকস (১১)। এর পরপরই লাথামের তালুবন্দী হয়ে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন স্যাম কুরানও (১৪)। তার বিদায়ে ম্যাচের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় কিউইরা।
শেষ মুহূর্তে মার্ক উড এবং আদিল রশিদ জুটিতে ২৮২ রানে থামে ইংলিশদের ইনিংস। এতে কিউইদের সামনে লক্ষ্য দাঁড়িয়েছে ২৮৩ রান।
এদিন নিউজিল্যান্ডের হয়ে সর্বোচ্চ তিন উইকেট শিকার করেন ম্যাট হেনরি। এছাড়াও দুটি করে উইকেট নিজেদের ঝুলিতে ভরেছেন মিচেল স্যান্টনার ও গ্লেন ফিলিপস।