একটি স্থায়ী শান্তি চুক্তিতে পৌঁছতে হলে রাশিয়ার কিছু দাবি ইউক্রেনকে মানতে হবে। সম্ভাব্য সেই শান্তি চুক্তির একটি খসড়া প্রকাশ করেছে রাশিয়া। সেখানে ইউক্রেনকে একটি ‘নিরপেক্ষ রাষ্ট্র’ হিসেবে দেখতে চেয়েছে ভ্লাদিমির পুতিনের প্রশাসন, যারা কখনোই ন্যাটোতে যোগ দিতে পারবে না।
বুধবার রুশ সংবাদমাধ্যম আরটি এ খবর জানিয়েছে।
এ নিয়ে কিছু অগ্রগতি হয়েছে জানিয়ে ইউক্রেনের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় অংশ নেয়া রাশিয়ার শীর্ষ আলোচক ভ্লাদিমির মেদিনস্কি বলেন, কিয়েভ একটি নিরাপেক্ষ রাষ্ট্র হওয়ার ধারণা নিয়ে দোলাচলের মধ্যে রয়েছে।
বুধবার তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘অস্ট্রিয়া ও সুইডেনের মতো নিরপেক্ষ আদলের একটি দেশ হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে ইউক্রেন। তবে (তারা বলছে) তাদের নিজস্ব সেনা ও নৌ বাহিনী থাকবে।’
এ প্রেক্ষপটে ইউক্রেনের ওই সামরিক বাহিনীর আকৃতির বিষয়টিও আলোচনার ভিত্তিতে নির্ধারিত হবে।
কার্যত মস্কো চায় ইউক্রেন যেনো আনুষ্ঠানিকভাবে একটি নিরপেক্ষ দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে, যারা কখনোই ন্যাটোতে যোগ দেবে না।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে আক্রমণ করে রাশিয়া। অন্য দাবিগুলোর সঙ্গে ইউক্রেনকে অসামরিকীকরণ করতেই এ আক্রমণ চালানো হয়েছে বলে রাশিয়ার পক্ষ থেকে জানানো হয়।
ভ্লাদিমির মেদিনস্কি বলেন, মস্কো চায় কিয়েভ যেনো ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার একটি অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। সেইসঙ্গে দোনেতস্ক ও লুহানস্ককে গণপ্রজাতন্ত্রী (স্বাধীন) ডিপিআর ও এলপিআর হিসেবে ঘোষণা করে।
২০১৪ সালে রাশিয়া ক্রিমিয়া দখলের কিছুদিন পরই ওই অঞ্চলদুটির নিয়ন্ত্রণ রুশপন্থী বিদ্রোহীদের হাতে চলে যায়। আরও যে বিষয়গুলো নিয়ে রাশিয়া উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- ইউক্রেনকে নাৎসী মতাদর্শ মুক্ত করা এবং দেশটিতে থাকা রুশ ভাষাভাষীদের অধিকার নিশ্চিত করা।
দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা কতোদূর এগোলো, সে প্রসঙ্গে মেদিনস্কি বলেন, ‘বেশ কয়েকটি ইস্যুতে কিছুটা অগ্রগতি দেখা গেছে। তবে সব ইস্যুতে নয়।’
ইউক্রেনের নিরপেক্ষতা নিয়ে বলতে গিয়ে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, এটাকে একটি ‘আপোষ’ হিসেবে দেখা যেতে পারে।
১৯৫৫ সালে অস্ট্রিয়া নিজেদের ‘নিরপেক্ষ’ দেশ হিসেবে ঘোষণা করে। এর মানে হলো- দেশটি কোনো সামরিক জোটে যোগ দিতে পারবে না এবং দেশটির মাটিতে কোনো সেনা ঘাঁটিও স্থাপন করা যাবে না।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসন শুরু করে রাশিয়া। একইসঙ্গে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভসহ বিভিন্ন শহরে গোলা ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু করে রুশ বাহিনী।
যুদ্ধে দুই পক্ষেরই ব্যাপক প্রাণহানীর খবর পাওয়া যাচ্ছে। ইতোমধ্যে যুদ্ধের কারণে ইউক্রেন ছেড়েছেন ৩০ লাখের বেশি মানুষ। তারা প্রতিবেশি দেশগুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন।
সূত্র জানায়, রাশিয়ার সীমান্তবর্তী ইউক্রেনের শহরগুলো ঘিরে রেখেছে রুশ সামরিক বাহিনী; হামলা চলছে ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভেও।
ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের পাশে অবস্থান করছে রুশ বাহিনীর ৪০ মাইল দীর্ঘ একটি বহর। তারা যে কোনো সময় শহরটিতে হামলা চালাতে পারে।
রাশিয়ার গোলা ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় খারকিভ, মারিওপল শহরে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানীর খবর পাওয়া যাচ্ছে।