ইউক্রেন যুদ্ধে যোগ দিতে বলা হলো রুশ এমপিদেরও। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের পক্ষ থেকে ইউক্রেনে রিজার্ভ সেনা মোতায়েনের ঘোষণার এক দিন পর বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) সহকর্মীদের প্রতি যুদ্ধে যোগ দেয়ার আহ্বান জানান রাশিয়ার পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ডুমার স্পিকার ভ্যাচেস্লাভ ভলোদিন।
পার্লামেন্ট সদস্যদের প্রতি এক টেলিগ্রাম বার্তায় তিনি বলেন, যাদের রিজার্ভ সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়ার যোগ্যতা রয়েছে, তাদের উচিত এখনই ইউক্রেনে সামরিক অভিযানে অংশ নেয়া। এ ব্যাপারে সংসদ সদস্যদেরও কোনো ছাড় নেই।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে ‘বিশেষ’ সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া। এরপর প্রায় সাত মাস ধরে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এ অভিযানে ইউক্রেনের এক-পঞ্চমাংশ অঞ্চল দখল করে নিয়েছে রুশ বাহিনী।
তবে রুশ অধিকৃত ওইসব এলাকা পুনরুদ্ধার করার লক্ষ্যে সম্প্রতি পাল্টা হামলা শুরু করে ইউক্রেনীয় বাহিনী। গত কয়েক সপ্তাহে কিছু সফলতাও পেয়েছে তারা।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় খাকিভ প্রদেশের ইজিয়াম শহর দখলমুক্ত করতে সক্ষম হয়েছে কিয়েভ। রুশ বাহিনী পিছু হটায় গত কয়েক দিন কার্যত চুপই ছিলেন দেশটির প্রেসিডেন্ট পুতিন। তবে বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) সেই নীরবতা ভেঙে তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়েন তিনি।
সেদিন জাতির উদ্দেশে দেয়া টেলিভিশন ভাষণে রাশিয়ার রিজার্ভ সেনার একাংশকে ইউক্রেন অভিযানে মোতায়েনের ঘোষণা দেন পুতিন। এ জন্য প্রায় ৩ লাখ সেনাকে লড়াইয়ের জন্য ডেকে পাঠানোর নির্দেশ দেন তিনি। পুতিন এমন সময়ে এ ঘোষণা দিলেন, যখন ইউক্রেনে রুশ অধিকৃত চারটি অঞ্চল রাশিয়ার সঙ্গে যোগ দিতে গণভোট আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছে।
‘ইউরোপ রাশিয়াকে পরমাণু অস্ত্রের হুমকি দিয়ে আসছে’ বলে অভিযোগ করে ভাষণে পুতিন বলেন, ‘পশ্চিমারা আমাদের দেশকে ধ্বংস করতে চায়। রাশিয়ার সঙ্গে ছায়াযুদ্ধ শুরু করেছে পশ্চিমা দেশগুলো। এটি অব্যাহত থাকলে মস্কো তার বিশাল অস্ত্রাগারের সব শক্তি দিয়ে জবাব দেবে। আর জবাব দেয়ার জন্য রাশিয়ার কাছে পর্যাপ্ত অস্ত্র রয়েছে’।
ইউক্রেন যুদ্ধে আরও সেনা পাঠানোর ঘোষণা ও পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার নিয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কড়া হুঁশিয়ারির পর তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে পশ্চিমা বিভিন্ন দেশ।
রিজার্ভ সেনা মোতায়েন পরিকল্পনার কঠোর সমালোচনা করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তিনি বলেন, রিজার্ভ সেনা পাঠিয়ে ইউক্রেনকে রক্তের বন্যায় ডুবাতে চান পুতিন।
পুতিনের ভাষণের কারণে ইউক্রেন যুদ্ধে সহিংসতা উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছে যুক্তরাজ্য। এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরও জানায়, পুতিনের এ হুমকি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা উচিত।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেছেন, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করার ঘোষণা চরম ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’। একই সঙ্গে মস্কোর কৌশলগত হুমকির বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জন কিরবি। রাশিয়া থেকে নতুন করে আরও তিন লাখ রিজার্ভ সেনা সমাবেশের ঘোষণাকে পুতিনের ‘দুর্বলতা’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন তিনি।
পুতিনের সেনা সমাবেশের ঘোষণা ও পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুমকিকে ‘বিপজ্জনক ও বেপরোয়া’ পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন ন্যাটো মহাসচিব জেন্স স্টলটেনবার্গ। পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের গুরুতর পরিণতি নিয়ে মস্কোর সঙ্গে যেন কোনো ভুল বোঝাবুঝি না হয়, সেই বিষয়টি ন্যাটো নিশ্চিত করবে বলেও রয়টার্সকে দেয়া সাক্ষাৎকারে জানান তিনি।
এদিকে পুতিনের ঘোষণার পর উদ্বেগ প্রকাশ করলেও ইউক্রেন ইস্যুতে আগের অবস্থানে আছে বলে জানিয়েছে চীন। সেই সঙ্গে বাড়তে থাকা উত্তেজনা কমাতে সব পক্ষকে আলোচনার টেবিলে বসার পরামর্শ দিয়েছে তারা।