বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক-রুমি নোমান
বঙ্গবন্ধু আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় স্পোর্টস চ্যাম্পস ২০২২ সকল ইভেন্টে অংশগ্রহণের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে আন্দোলন করেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলোয়াড়রা। মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) দুপুর দুই টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এতে নির্ধারিত সময়ে বাস না চলায় প্রায় আড়াই হাজার সাধারণ শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ভোগান্তিতে পড়েন। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন তারা।
জানা যায়, এ টুর্ণামেন্টে ক্রিকেট, ফুটবল, ভলিবল, বাস্কেট বল, সাঁতার সহ ১১ ধরণের খেলার সক্ষমতা থাকলেও কতৃপক্ষ বাজেটের স্বল্পতা ও আবাসন সংকট দেখিয়ে মাত্র ৪ টি খেলায় অংশগ্রহণের জন্য দল পাঠাবে বলে সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলোয়াড়রা প্রত্যেকটি খেলায় অংশগ্রহন করার দাবি জানান। এতে বাজেট, আবাসনসহ সকল সু্যোগ সুবিধার ব্যবস্থা করার আহবান জানান তারা।
এই দাবিতে গতকাল (মঙ্গলবার) ক্রীড়া বিভাগে তালা দিয়ে শারিরীক শিক্ষা বিভাগের পরিচালক ড. সোহেল রানাকে অবরুদ্ধ করেন। পরে তাকে অবরুদ্ধ রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালামের বাসভবনের সামনে গিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন আন্দোলনকারীরা।
পরে উপাচার্য আলোচনার আশ্বাস দিলে তারা আন্দোলন স্থগিত করেন এবং দাবি আদায় না হলে আবারো এ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার হুশিয়ারি দেন।
এ বিষয়ে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। আইন বিভাগের অধ্যাপক ড জহুরুল হক বলেন, এটা ক্রীড়া বিভাগের সিদ্ধান্ত, তারা কত খেলোয়াড় পাঠাবে। কত টাকা প্রশাসন বাজেট দিবে। এটার জন্য সকল সাধারণ শিক্ষার্থী, শিক্ষকদের দীর্ঘসময় বাস বন্ধ করে ভোগান্তিতে রাখা সম্পূর্ণ অনুচিত। আমাদের মধ্যে অনেক অসুস্থ শিক্ষকও রয়েছে, তারা অনেকটা ক্ষুব্ধ হয়ে লাইন বাসে চলে গেছে। এই বিষয়টি প্রশাসনের উচিত ছিলো দ্রুত সমোঝোতা করা না হয় আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দেওয়া। এভাবে দীর্ঘসময় প্রায় তিন হাজার শিক্ষক শিক্ষার্থীকে ভোগান্তিতে রাখা অযৌক্তিক। এছাড়া শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়, এভাবে চলতে থাকলে আমরা ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবো
প্রক্টরিয়াল বডি সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার তাদের দাবি অনুযায়ী ১১ টি ইভেন্টে খেলার অনুমোদন দেয় উপাচার্য। তবে সেই সিদ্ধান্ত জানতে পারেনি খেলোয়াড়েরা। এতে তারা ক্ষুব্ধ হয়ে দুপুর দুইটায় প্রধান ফটকে তালা দিয়ে আন্দোলন করেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস অবরুদ্ধ করেন।
এসময় আন্দোলনকারীরা বলেন, বঙ্গবন্ধুর নামে টুর্ণামেন্ট হবে আর আমরা অংশগ্রহন করবো না এটা হতে পারে না। আমরা সব সময় বিভিন্ন টুর্ণামেন্টে কৃতিত্ব দেখিয়েছি। তারপরও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের অংশগ্রহণের সু্যোগ দিতে চায় না। এ টর্ণামেন্টে যদি আমাদের অংশগ্রহণ করতে না দেওয়া হয় তাহলে আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাবো।
তারা আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবছর কোটায় খেলোয়াড়দের ভর্তি করানো হয়। তাদের যদি খেলার সুযোগ না দেওয়া হয় তাহলে কোটা দিয়ে আমাদের লাভ কি। এসময় নারী খেলোয়াড়দের অনুমতি না দেওয়া প্রসঙ্গে তারা বলেন, আমরা টুর্ণামেন্টে অংশগ্রহণের জন্য প্রায় ২০ দিন ধরে প্রাকটিস করছি। তাহলে আমাদের প্রাকটিস করানোর দরকার ছিল কি? খেলার সুযোগ না পেলে আন্দোলন চালিয়ে যাবো।
এর আগে, তারা বঙ্গবন্ধু স্পোর্টস চ্যাম্পসে অংশগ্রহণের দাবি সহ ৯ দফা দাবিতে শারিরীক শিক্ষা বিভাগের পরিচালক ড. সোহেল রানা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন।
এদিকে ঘটনার পর সাংবাদিকদের সাথে মত বিনিময় করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া প্রমুখ। এসময় তারা জানান, আমরা কোনো ইভেন্ট বাদ দেইনি৷ তাছাড়া, আরো একটি খেলা (ভলিবল) আমরা যুক্ত করেছি। তবে আমরা আবাসন ব্যবস্থা নিয়ে চিন্তিত ছিলাম। সে বিষয়ে আলোচনা করছি। এরই মাঝে কেনো তারা গেটে তালা দিয়ে এ ধরনের আন্দোলন বা ভোগান্তির সৃষ্টি করলো এটা আমাদের বোধগম্য নয়।
প্রসঙ্গত, প্রায় দুই ঘন্টা আন্দোলন চলা অবস্থায় খেলোয়াড়দের সকল দাবি মেনে নেওয়ায় আশ্বাস দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তারপর নির্ধারিত শিডিউলের বাস বিকাল চারটায় ক্যাম্পাস ত্যাগ করে।