করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে উত্তর কোরিয়ায় প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। করোনার উপসর্গ নিয়ে দেশটিতে ছয়জনের মৃত্যুর তথ্য জানা গেলেও কোভিডে আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত একজনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছে দেশটির প্রশাসন।
এছাড়া দেশটিতে লাখ লাখ মানুষ করোনার অন্যতম উপসর্গ জ্বরে ভুগছেন। উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম শুক্রবার (১৩ মে) এই তথ্য জানিয়েছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
উত্তর কোরিয়ার সরকারি সংবাদমাধ্যম দ্য কোরিয়ান সেন্ট্রাল নিউজ এজেন্সি (কেসিএনএ) জানিয়েছে, এপ্রিলের শেষের দিক থেকে অজ্ঞাত উৎস থেকে জ্বর ‘বিস্ফোরকভাবে দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে’। এরপর থেকে প্রায় ১ লাখ ৮৭ হাজার ৮০০ জনকে আইসোলেশনে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
সংবাদমাধ্যমটি আরও জানিয়েছে, বর্তমানে উত্তর কোরিয়ার প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ জ্বরে ভুগছেন। এর মধ্যে বৃহস্পতিবারই দেশটিতে নতুন করে জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন ১৮ হাজার মানুষ। এছাড়া প্রায় ১ লাখ ৬২ হাজার ২০০ মানুষের চিকিৎসা করা হয়েছে। অবশ্য দেশটির ঠিক কতজন মানুষ এখন পর্যন্ত করোনা পজিটিভ হয়েছেন সেটি প্রকাশ করা হয়নি।
কেসিএনএ বলছে, জ্বরের উপসর্গ নিয়ে উত্তর কোরিয়ায় অন্তত ছয়জন মারা গেছেন। যাদের মধ্যে একজনের ভাইরাসের অতিসংক্রামক ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনে সংক্রামিত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন বৃহস্পতিবার দেশটির একটি অ্যান্টি-ভাইরাস কমান্ড সেন্টার পরিদর্শন করেন। এর আগে করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় তিনি ‘গুরুতর জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা করেন এবং একইসঙ্গে দেশজুড়ে লকডাউন জারি করেন।
উত্তর কোরিয়া বলছে, গত এপ্রিল মাসে রাজধানী পিয়ংইয়ং থেকে করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হয়। তবে দেশটির রাষ্ট্রীয় মিডিয়া ভাইরাসের এই প্রাদুর্ভাবের কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানায়নি।
এটি বলা হয়েছে যে, পিয়ংইয়ংয়ে গত ১৫ ও ২৫ এপ্রিল সামরিক কুচকাওয়াজ এবং বৃহৎ সমাবেশ-সহ বেশ কয়েকটি বড় গণজমায়েতের আয়োজন করা হয়েছিল যেখানে অংশ নেওয়া অধিকাংশ মানুষ মাস্ক পরেননি।
উত্তর কোরিয়া অবশ্য আগে কখনো দেশে একটিও করোনাভাইরাস সংক্রমণের বিষয়টি নিশ্চিত না করলেও দক্ষিণ কোরিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা তা নিয়ে বরাবরই সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। বিশেষত প্রতিবেশী দক্ষিণ কোরিয়া ও চীনে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার পর পিয়ংইয়ংয়ের দাবি নিয়ে সন্দেহ আরও প্রকট হয়।
অবশ্য ২০২০ সালের শুরুতে মহামারি শুরু হওয়ার পর কঠোর লকডাউন, সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়াসহ বেশ কিছু কড়া পদক্ষেপ নিয়েছিল কিম জং উনের প্রশাসন। সেই বছরের জুলাই মাসে জরুরি অবস্থা জারির পর আন্ত-কোরিয়ান সীমান্তের কাছে কায়েসোং-এ তিন সপ্তাহের জন্য লকডাউন আরোপ করেছিলেন কিম।
মূলত ২০১৭ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় চলে যাওয়া এক ব্যক্তি করোনার উপসর্গ নিয়ে ফের উত্তরে ফিরে আসার পর ওই পদক্ষেপ নিয়েছিলেন উত্তর কোরীয় নেতা।