গেল এপ্রিল মাসে ৫২৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৫৫২ জন নিহত এবং ৮৫২ জন আহত হয়েছে। একই সময় রেলপথে ৪২টি দুর্ঘটনায় ৩৪ জন নিহত ও ৬৭ জন আহত এবং নৌ-পথে ১০টি দুর্ঘটনায় ১১ জন নিহত ও ১৬ জন নিখোঁজ হয়েছে।
সড়ক, রেল ও নৌ-পথে সর্বমোট ৫৭৮টি দুর্ঘটনায় ৫৯৭ জন নিহত এবং ৯১৯ জন আহত হয়েছে। এ সময়ে ২১৫টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ২৩১ জন নিহত ও ১৭১ জন আহত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী স্বাক্ষরিত এই প্রতিবেদন দেশের জাতীয়, আঞ্চলিক ও অনলাইন সংবাদপত্রে প্রকাশিত সড়ক, রেল ও নৌ-পথের দুর্ঘটনার সংবাদ মনিটরিং করে তৈরি করা হয়েছে। সড়কে দুর্ঘটনায় আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে ১৬৩ জন চালক, ৯০ জন পথচারী, ৩৭ জন পরিবহন শ্রমিক, ৩২ জন শিক্ষার্থী, চারজন শিক্ষক, ২৫ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ৭৩ জন নারী, ৬৩ জন শিশু, একজন সাংবাদিক, ৯ জন চিকিৎসক, একজন মুক্তিযোদ্ধা, তিনজন আইনজীবী, একজন প্রকৌশলী এবং আটজন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীর পরিচয় মিলেছে। সড়ক দুর্ঘটনায় সংগঠিত ৭৪০টি যানবাহনের পরিচয় মিলেছে। এতে দেখা যায়, ৩০ দশমিক ৫৪ শতাংশ মোটরসাইকেল, ২৩ দশমিক ২৪ শতাংশ ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান ও লরি, ১৫ দশমিক ১৩ শতাংশ বাস, ১৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক, ৫ দশমিক ৮১ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ নছিমন-করিমন-মাহিন্দ্রা-ট্রাক্টর ও লেগুনা, ৪ দশমিক ৮৬ শতাংশ কার-জিপ-মাইক্রোবাস সড়কে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে।
সংগঠিত মোট দুর্ঘটনার ৪৮ দশমিক ৬৬ শতাংশ গাড়িচাপা দেওয়ার ঘটনা, ২২ দশমিক ৬২ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৬ দশমিক ৩৪ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে, ১১ দশমিক ৭৮ শতাংশ বিবিধ কারণে, শূন্য দশমিক ১৯ শতাংশ গাড়ির চাকায় ওড়না পেঁচিয়ে এবং শূন্য দশমিক ৩৮ শতাংশ ট্রেন-যানবাহন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা যায়, সংগঠিত মোট দুর্ঘটনার ২৮ দশমিক ৫১ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ৩৪ দশমিক ২২ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ৩০ দশমিক ৯৮ শতাংশ ফিডার রোডে সংঘটিত হয়েছে। এ ছাড়াও সারা দেশে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৫ দশমিক ৭০ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে, শূন্য দশমিক ১৯ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে ও শূন্য দশমিক ৩৮ শতাংশ রেলক্রসিংয়ে সংঘটিত হয়েছে।
দুর্ঘটনার আট কারণের মধ্যে রয়েছে—দেশের সড়ক মহাসড়কে মোটরসাইকেলের অবাধ চলাচল, ব্যাটারিচালিত ও ইঞ্জিনচালিত তিন চাকার যানের ব্যাপক বৃদ্ধি, জাতীয় মহাসড়কে রোড সাইন বা রোড মার্কিং, সড়কে বাতি না থাকা, বিভিন্ন উৎসব মুহূর্তে চালকদের রাতে ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চালানো, জাতীয়, আঞ্চলিক ও ফিডার রোডে টার্নিং চিহ্ন না থাকায় নতুন চালকরা দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছেন।
এ ছাড়া মহাসড়কের নির্মাণ ত্রুটি, যানবাহনের ত্রুটি, ট্রাফিক আইন অমান্য করার প্রবণতা, উল্টোপথে যানবাহন চালানো, সড়কে চাঁদাবাজি, পণ্যবাহী যানে যাত্রী পরিবহন ও অদক্ষ চালক, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, অতিরিক্ত যাত্রী বহন, বেপরোয়া যানবাহন চালানো দুর্ঘটনার কারণের মধ্যে রয়েছে।