বিশ্ববিখ্যাত গবেষণা প্রকাশনা সংস্থা এলসেভিয়ের ও যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি কর্তৃক যৌথভাবে প্রণীত ২০২১-২২ সালের বিশ্বসেরা ২ শতাংশ গবেষকের তালিকায় চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট)-এর চারজন শিক্ষক ও গবেষক স্থান পেয়েছেন। তাঁরা হলেন- কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. ইকবাল হাসান সরকার, যন্ত্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল ভূঞা, গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. গোলাম হাফেজ এবং পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. আশরাফ আলী। গত ১০ই অক্টোবর ২০২২ খ্রি. বৈশি^কভাবে এই তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। যেখানে ১৯৬০ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত গবেষকদের বিভিন্ন গবেষণা প্রকাশনা, কান্ট্রিবিউশন, ইনডেক্স, সাইটেশন ও অন্যান্য সূচকগুলো বিশ্লেষণ করে তালিকাটি প্রস্তুত করা হয় এবং ২০২২ সালের অগাস্ট মাসে হালনাগাদ করে তা প্রকাশিত হয়। [বিস্তারিত তথ্যসূত্র: https://bit.ly/3ESJvkw]
ড. মো. ইকবাল হাসান সরকার বর্তমানে চুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি চুয়েট থেকে বিএসসি এবং এমএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি অর্জন করেছেন। এছাড়াও ২০১৮ সালে অস্ট্রেলিয়ার সুইনবার্ন ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি, মেলবোর্ন থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। ড. সরকারের গবেষণার বিষয়বস্তু মূলত ডেটা সায়েন্স, মেশিন লার্নিং, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এবং সাইবার সিকিউরিটি অ্যানালিটিক্স। ড. সরকারের গবেষণা কর্মগুলো এলসেভিয়ার, স্প্রিঞ্জার, নেচার, এসিএম, আই.ই.ই.ই, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস-এর বিভিন্ন স্বনামধন্য জার্নাল এবং কনফারেন্সে প্রকাশিত হয়েছে। উল্লেখ্য, সম্প্রতি তাঁর লেখা একটি বই “কনটেক্সট-আওয়ার মেশিন লার্নিং অ্যান্ড মোবাইল ডেটা অ্যানালিটিক্স”, স্প্রিঞ্জার, নেচার সুইজারল্যান্ড কর্তৃক প্রকাশিত হয়েছে, যেটি বর্তমান চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের যুগে ইন্ডাস্ট্রি এবং অ্যাক্যাডেমিয়া উভয়ক্ষেত্রেই গবেষণা এবং স্মার্ট অ্যাপ্লিকেশন তৈরিতে সহায়ক হবে বলে মনে করেন। ড. সরকার পরিচালিত “সরকার ডেটা ল্যাব” ওয়েবসাইট এ তাঁর গবেষণা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে।
অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল ভূঞা বর্তমানে চুয়েটের মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন। অধ্যাপক মোস্তফা কামাল ভূঞা, ২০০৩ সালে চুয়েট থেকে মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে স্নাতক (বিএসসি) এবং তিনি ২০০৮ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে স্নাতকোত্তর (এমএসসি) ডিগ্রি অর্জন করেন। এছাড়া ২০১৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার সেন্ট্রাল কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল ও প্রযুক্তি স্কুল থেকে ডিজেল ইঞ্জিনের বিকল্প জ্বালানি হিসেবে ২য় প্রজন্মের বায়োডিজেল বিশেষত নবায়নযোগ্য জ্বালানি বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তাঁর গবেষণামূলক আগ্রহের মধ্যে তাপ স্থানান্তর বৃদ্ধি, তাপীয়-তরল, নবায়নযোগ্য শক্তি, বিকল্প জ্বালানি এবং শক্তি রূপান্তর অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। বিভিন্ন স্বনামধন্য আন্তর্জাতিক জার্নাল এবং সম্মেলনে যৌথ পর্যালোচক হিসেবে তাঁর উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। গবেষণায় অবদান রাখায় তিনি চুয়েট থেকে ২০১৯ সালের জন্য সেরা গবেষণা প্রকাশনা পুরষ্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন।
অধ্যাপক ড. মো. গোলাম হাফেজ বর্তমানে চুয়েটের গণিত বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন। ড. হাফেজ ম্যাথেমেটিক্যাল ফিজিক্স শাখায় গবেষণা করেন। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ২০১৯ সালের জন্য চুয়েট থেকে “সেরা গবেষণা প্রকাশনা পুরস্কার” পেয়েছেন।
ড. মো. আশরাফ আলী বর্তমানে চুয়েটের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন। ড. আলী পদার্থ বিজ্ঞানের কনডেন্সড ম্যাটার শাখায় তাঁর এমএসসি, এমফিল এবং পিএইচডি ডিগ্রি সম্পন্ন করেছেন। ড. আলী, দ্য ওয়ার্ল্ড একাডেমি অফ সায়েন্সেস-এর অর্থায়নে প্রতিষ্ঠিত অ্যাডভান্সড কম্পিউটেশনাল ম্যাটেরিয়ালস রিসার্চ ল্যাবরেটরি-এর প্রধান গবেষক হিসেবে কাজ করছেন। বিগত কয়েক বছর যাবৎ তিনি প্রধানত কম্পিউটেশনাল ম্যাটেরিয়ালস সায়েন্স (থিওরেটিক্যাল) এবং বিভিন্ন ধরনের ম্যাটেরিয়ালস প্রস্তুতকরণ ও পরীক্ষণ (এক্সপেরিমেন্টাল) গবেষণার সাথে সম্পৃক্ত আছেন। তিনি ২০২০ ও ২০২১ সালের জন্য চুয়েট থেকে “সেরা গবেষণা প্রকাশনা পুরস্কার” পেয়েছেন। এছাড়া তিনি বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, চুয়েটের গবেষণা ও সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এবং খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থায়নে পরিচালিত বিভিন্ন গবেষণা প্রকল্পের সাথে যুক্ত আছেন।
এই অর্জন প্রসঙ্গে তাঁরা মনে করেন, “নিশ্চয়ই বিশ্বের শীর্ষ গবেষকদের তালিকায় স্থান পাওয়া আন্তর্জাতিক অঙ্গনে চুয়েটের জন্য অনেক সম্মানের। সামনের দিনে চুয়েটের ছাত্র-ছাত্রীরা গবেষণায় আরও উৎসাহী হবে বলে আমরা আশাবাদী।”