লালমনিরহাট: লালমনিরহাট সদর থানায় দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোস্তাফিজার রহমান। তিনি আবার কুড়িগ্রাম জেলার বাসিন্দা।
সম্প্রতি তিনি আদিতমারী উপজেলার পলাশী ইউনিয়ন যুবলীগের সম্পাদক নুরবক্ত মিয়াকে হুমকি দিয়েছেন। বলেছেন, তারাই নাকি (পুলিশ) এমপি-মন্ত্রী বানিয়েছেন।দলের কথা বললে পিটুনিও দিতে চেয়েছেন।
শুধু তাই নয়, এসআই মোস্তাফিজার রহমানের দায়িত্বে থাকা একটি মামলার ভুক্তভোগী যৌনাঙ্গে মরিচ গুড়া ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকির অভিযোগ রয়েছে।
ঘুষ চেয়েছেন বলেও অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী। কিন্তু এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন মোস্তাফিজার। লালমনিরহাট সদর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অবশ্য জানিয়েছেন, এসআই’র বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ এলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঘটনার আদ্যোপান্ত
গত জুনে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার পলাশী ইউনিয়ন যুবলীগের সম্পাদক নুরবক্ত মিয়ার এক আত্মীয়ে মেয়ে (কিশোরী) অপহৃত হয়। এ ঘটনায় লালমনিরহাট সদর থানায় গত ২৬ জুন একটি মামলা দায়ের করে কিশোরীর পরিবার। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পান থানার এসআই মোস্তাফিজার।
তদন্ত চলাকালীন অপহৃত কিশোরী ও অপহরণকারী যুবকের সন্ধান মেলে রাজধানীর খিলগাঁও থানা এলাকায়। সংশ্লিষ্ট থানায় জানিয়ে ওই এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেন মোস্তাফিজার। উদ্ধার করেন কিশোরীকে, গ্রেফতার হন অপহরণকারী।পরে কোনো নারী পুলিশ সদস্য বা পরিবারের কাউকে না নিয়েই কিশোরী ও অপহরণকারীকে নিয়ে লালমনিরহাট রওনা দেন এসআই মোস্তাফিজার। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন সঙ্গীয় এক পুরুষ কনস্টবল। পথিমধ্যে বাসটি রংপুরে যাত্রা বিরতি দেয়। এ সময় এসআই মোস্তাফিজার তাকে বাস থেকে নামিয়ে নির্জনে নিয়ে যান। সেখানে কিশোরীকে কু-প্রস্তাব দেন। রাজি না হওয়ায় কিশোরীর যৌনাঙ্গে মরিচের গুড়া ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকিও দেন তিনি। ওই কিশোরী এ ব্যাপারে নিজেই পরিবারের কাছে অভিযোগ করে।
ঘটনাটি এখানেই শেষ হয়নি। ঢাকা আসা-যাওয়ার জন্য কিশোরীর পরিবারের কাছে ২০ হাজার টাকা দাবি করেন
লালমনিরহাট সদর থানার এসআই। টাকা না দিলে তাকে যশোর সংশোধনাগারে পাঠানোর হুমকিও দেন তিনি। উপায় না পেয়ে ভুক্তভোগীর বাবা-মা তাকে ১০ হাজার টাকা দেন। এরপর কিশোরীকে আদালতে তোলেন মোস্তাফিজার রহমান। তার আগে, টাকা পেতে দেরি হওয়ায় কিশোরীকে থানার একটি কক্ষে গোপন করেন তিনি। কিশোরীর পরিবারকেও সেখান থেকে সরিয়ে দেন।
জানা গেছে, এসআই মোস্তাফিজারের দাবীকৃত টাকা তাকে পাঠান পলাশী ইউনিয়ন যুবলীগের সম্পাদক নুরবক্ত মিয়া। তিনি কিশোরীর সম্পর্কে মামা। পরে নুরবক্ত এসআই মোস্তাফিজারকে বিষয়টি নিয়ে ফোন দেন। দুজনের কথোপকথনের একপর্যায়ে দলীয় পরিচয় দেন নুরবক্ত। এ সময় এসআই তাকে বলেন, যে দল করেন তার এমপি-মন্ত্রী আমরা বানাইসি। এবার হইয়েন, কত বড় নেতা হইছেন এবার হইয়েন। দলের কথা বললে পিটুনি খাবেন।
কিশোরীর অভিযোগ, তাকে নিশ্চিত করতে গেলে তার মাকে পরনের বোরকা খুলে ফেলতে বলেন এসআই মোস্তাফিজার। তার মুখের ভাষাও জঘন্য। কিশোরী বলেছে, এসআই তাকে অপ্রকাশযোগ্য গালাগাল দিয়েছেন। তার কথার বাইরে কোনো কথা বললে এ মামলায় তাকেই ফাঁসিয়ে দেবেন বলে জানিয়েছেন। অপহরণ মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন করার দাবিও করেছে কিশোরী ও তার পরিবার।যুবলীগ নেতা নুরবক্ত বলেন, টাকার জন্য আমার ভাগ্নিকে আমার সঙ্গে দেখা করতে দেননি এসআই মোস্তাফিজার। বরং তাকে যশোর পাঠিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন তিনি। নিজের দলীয় পরিচয় দিলে তিনি আমাকে পিটুনির ভয় দেখান। আওয়ামী লীগ নিয়েও তিনি বাজে মন্তব্য করেছেন। এসব ঘটনায় এসআই মোস্তাফিজারের শাস্তি দাবি করেন তিনি।
সব অভিযোগ অস্বীকার করে লালমনিরহাট সদর থানার এসআই মোস্তাফিজার রহমান বলেন, আমার মেয়ের জামাই একজন এমবিবিএস ডাক্তার। আমার কি কু-প্রস্তাব দেয়া সাজে? ঢাকা যাওয়া আসা খরচ হয়, তাই তাদেরকে বলেছি। তারা ১০হাজার টাকা দিয়েছে। বিএনপি’র সময় কনস্টবল পদে ছিলাম, পদন্নোতি পেয়েছি। আওয়ামী লীগ বড় দল তাদের নিয়ে বাজে মন্তব্যও আমার সাজে না।
লালমনিরহাট সদর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাম্মেল হক এসব ব্যাপারে বলেন, মামলা সংক্রান্ত কাজে কর্মস্থলের বাইরে গেলে তার খরচ সরকারিভাবে খরচ করা হয়। বাদি পক্ষ থেকে কোনো কিছু নেওয়ার সুযোগ নেই। কারও কাছ থেকে জোর করে টাকা নেওয়ার অভিযোগ পেলে এসআই’র বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।