ঐতিহ্যবাহী সাকরাইন উৎসবকে কেন্দ্র করে রাজধানীবাসী যেন ফানুস ওড়াতে না পারে এবং দোকানিরা ফানুস বিক্রি করতে না পারেন এই বিষয়ে পুলিশ তৎপর রয়েছে। চলতি বছর সাকরাইন উৎসবকে সামনে রেখে কঠোর হচ্ছে পুলিশ। ইতোমধ্যে দেয়া হয়েছে থানায় থানায় নির্দেশনা।
জানা গেছে, ঐতিহ্যবাহী সাকরাইন উৎসবের আয়োজন করে পুরান ঢাকাবাসী। দিনভর ঘুড়ি উড়িয়ে সন্ধ্যায় বর্ণিল আতশবাজি আর রঙ-বেরঙের ফানুস উড়িয়ে সাকরাইন উৎসবকে উদযাপন করার রীতি অনেকদিনের। তবে আতশবাজি এবং ফানুস ওড়ানোর কারণে প্রতিবছরই এদিন ছোট-বড় অনেক দুর্ঘটনা ঘটে।
২০২৩ সালের ইংরেজি নববর্ষকে স্বাগত জানাতে থার্টি ফাস্ট নাইট উদযাপনেও রাজধানীতে ছিল আতশবাজি আর ফানুসের আলোক ঝলকা। ওই রাতে ওড়ানো ফানুস গিয়ে পড়ে মেট্রোলের বৈদ্যুতিক তার এবং রেললাইনে। ফলে ১ জানুয়ারি দুই ঘণ্টা বন্ধ ছিল মেট্রোরেল চলাচল।
পুলিশ বলছে, এবার এমন দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি চায় না ডিএমপি। সাকরাইন উৎসব উদযাপনের কয়েক দিন আগে থেকেই কাজ শুরু করে দিয়েছে সংস্থাটি। বিশেষ এই রাতে সব ধরনের বিস্ফোরক দ্রব্য, আতশবাজি, পটকা ফোটানো বা ফানুস ওড়ানো বন্ধ করতে এরই মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
ডিএমপি সূত্রে জানা যায়, রাজধানীর যেসব এলাকায় ফানুস বিক্রি হয় গত কয়েক দিন ধরে সেসব জায়গায় অভিযান পরিচালনা করেছে ডিএমপির বিভিন্ন থানা পুলিশ। বিক্রেতাদের গত বছরের অগ্নিদুর্ঘটনার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে ফানুস বিক্রি না করতে অনুরোধ করা হয়েছে। এছাড়া ডিএমপির সব থানাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, ওই থানার আওতাধীন এলাকায় যেন ফানুস বিক্রি ও ওড়ানো না হয়। যদি কেউ ফানুস ওড়ায় বা আতশবাজি ফোটায় তাহলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার কথাও জানিয়েছে ডিএমপি।
ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা যায়, গত বছর বর্ষবরণ রাতের প্রথম ২০ মিনিটের মধ্যে সারাদেশ থেকে বেশ কয়েকটি অগ্নিকাণ্ডের খবর আসে। পরে প্রাথমিক তদন্তে ফায়ার সার্ভিস জানতে পারে, এসব অগ্নিকাণ্ডের বেশিরভাগ ঘটে ফানুসের কারণে। কয়েকটির জন্য দায়ী ছিল আতশবাজি।
ফায়ার সার্ভিস বলছে, ঢাকা শহরের মতো একটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ফানুস ওড়ালে অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি বেশি থাকে। জ্বলন্ত ফানুসগুলো উড়ে কোথাও না কোথাও পড়ে। বাসাবাড়ির ছাদে নয়তো বস্তি এলাকার ঘরবাড়ির ওপর এগুলো পড়ে। ফলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের মিডিয়া সেলের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শাহজাহান শিকদার বলেন, ফানুস ওড়ানো যাবে কি না, এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নির্দেশনা আছে। আমাদের লোকবলও সতর্ক থাকবে, যাতে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া যায়।
ডিএমপি’র লালবাগ বিভাগের ডিসি জাফর হোসেন বলেন, রাজধানীতে ফানুস ওড়ানোর কারণে মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ ছিল। সাকরাইন উৎসবকে কেন্দ্র করে থানায় থানায় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কোনো দোকানে ফানুস বিক্রি করা যাবে না এবং ফানুস কেউ কিনতেও পারবে না। চকবাজারসহ পুরান ঢাকার দোকানগুলোতে এ বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।