প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচন বন্ধ করা কোনো হঠকারী সিদ্ধান্ত ছিল না। কমিশন চিন্তা-ভাবনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পরিস্থিতি নিবিড় পর্যবেক্ষণ করেই নির্বাচন বন্ধ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৩ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
সিইসি জানান, ইতোমধ্যে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অনিয়মগুলো তদন্ত করে আগামী ৭ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে কমিটিকে। প্রতিবেদন পাওয়ার পরে গাইবান্ধা-৫ আসনের পরবর্তী নির্বাচন বিষয়ে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, দায়িত্ব গ্রহণের পর যতগুলো নির্বাচন করেছি সবগুলো নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করে অত্যন্ত সফলভাবে সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছি। আমরা কুমিল্লা সিটি করপোরেশন, ঝিনাইদহ পৌরসভা, মেহেরপুর পৌরসভা নির্বাচনে প্রত্যেক ভোট কেন্দ্রের প্রতিটি ভোট কক্ষে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করেছিলাম যাতে ইভিএমের বিষয়ে যে গোপন ভোটকক্ষে অবৈধ লোক প্রবেশ করে বা অবস্থান করে ভোটারকে ব্যালট ইউনিটে ভোট প্রদানের সুযোগ না দিয়ে অবৈধ প্রবেশকারী তার আঙ্গুল দিয়ে ভোট দিয়ে দেন সে সংক্রান্ত যে অভিযোগ আমরা পেয়েছি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সুধীজনের সঙ্গে সংলাপ চলাকালে তা বন্ধ করার জন্য।
সব নির্বাচনের ক্ষেত্রে সিসিটিভি স্থাপনের ফলে এই অপরাধ একেবারেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছিল। তারই আলোকে এবং গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনের গুরুত্বের কারণে এখানেও ইভিএমে ভোট গ্রহণ ও প্রতিটি ভোট কেন্দ্রের প্রতিটি ভোটকক্ষে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়।
বুধবার (১২ অক্টোবর) সকাল ৮টায় যথারীতি ভোট শুরু হয়। আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনে স্থাপিত কন্ট্রোল রুমে তিনিসহ অন্যান্য কমিশনার, দায়িত্ব পালনকারী সচিবালয়ের কর্মকর্তা ও কারিগরি সহায়তাকারী ব্যক্তিরা, পরবর্তীতে মিডিয়ার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। ভোট শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যে আমারা ৩টি কেন্দ্রে দেখতে পাই ভোট কক্ষে প্রার্থীর পুরুষ এজেন্টরা একই রকম গেঞ্জি বুকে ও পিঠে প্রাথীর মার্কা প্রিন্ট করা পরে আছেন এবং মহিলা এজেন্টরা একই রকম শাড়ি পরে আছেন, যা আচরণ বিধিমালার ১০(ঙ) ভঙ্গের মধ্যে পড়ে। এসব এজেন্ট ছাড়াও আরও অনেক অবৈধ লোকজন ভোটকক্ষে অবস্থান করে ভোটারদের ভোট দিতে প্রভাবিত করছেন। ভোটারদের কন্ট্রোল ইউনিটে আঙ্গুলের ছাপ দেওয়ার পরপরই এজেন্টরা গোপন ভোটকক্ষে প্রবেশ করে ভোটারকে ভোট দানের সুযোগ না দিয়ে নিজেই ভোট দিয়ে দিচ্ছেন, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের মধ্যে কেউ কেউ একই কাজ করছেন। তখন কমিশন থেকে ফোন দিয়ে প্রিজাইডিং অফিসারদেরকে ভোট কক্ষের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে নির্দেশ দেওয়া হয়। ভোট কক্ষের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার কোনো কার্যকরি উদ্যোগ তাদের নিতে দেখা যায়নি। তখন ওই ৩টি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করার নির্দেশনা কমিশন থেকে দেওয়া হয়। অতঃপর একে একে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত ৫০টি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে দেখা হয়। প্রতিটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণের অবস্থা একই রকম দেখা যায়, বলেন তিনি।
সিইসি আরও বলেন, ইতোমধ্যে রিটার্নিং অফিসার একটি কেন্দ্রের ভোগ্রহণ বন্ধ করে দেন। তিনি এবং বেগম রাশেদা সুলতানা রিটার্নিং অফিসার, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলি কিন্তু পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। অন্যান্য কেন্দ্রগুলোতেও সিসিটিভি দেখার সময় পেলে দেখা যেত, যে ওই কেন্দ্রগুলোতেও একই অবস্থা। তাই কমিশন মনে করে যে, এ ধরনের একটি আইন বহির্ভূত ভোট প্রদান/গ্রহণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। তাই কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আড়াইটায় গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচন সম্পূর্ণ বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
গাইবান্ধা-৫ আসনে ৫০টি কেন্দ্রের ফুটেজ দেখার সময় পেয়েছে নির্বাচন কমিশন, বাকিগুলো দেখার সময় পায়নি। যখন আরও বড় আকারে নির্বাচন হবে তখন কীভাবে দেখার সময় হবে গণমাধ্যমকর্মীদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ওটা সময় বলে দেবে। কোনো কিছু নিয়ে আমরা হতাশ হবো না। আমাদের সদিচ্ছা, প্রয়াস থাকবে। একটা দিয়ে সবগুলো মূল্যায়ন করা ঠিক হবে না।
যারা দায়িত্বে অবহেলা করেছে তাদের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। কেন হয়েছে, কী কারণে হয়েছে কিছুই আমরা বলতে পারবো না।
হাবিবুল আউয়াল বলেন, গতকাল গাইবান্ধা-৫ আসনের একাদশ জাতীয় সংসদের উপনির্বাচন ছিল। এ নির্বাচনটি যাতে অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয় সে জন্য নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে করণীয় সব আয়োজন সম্পন্ন করা হয়েছিল। নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানা গত ২৮ সেপ্টেম্বর গাইবান্ধা সার্কিট হাউজে উপস্থিত থেকে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষে আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ক সভায় বক্তব্য রাখেন। সভায় জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর স্থানীয় প্রধান, সব প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীসহ সংশ্লিষ্ট অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি নিজে ও কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানা জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, রিটার্নিং অফিসারের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন যাতে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন করা সম্ভব হয়।